Wednesday, December 02, 2020

ইঁদুর দৌড় এবং এক টুকরো পনির



ডঃ হাভিয়ের সানচেজ একজন প্রখ্যাত মনোবিদ। তিনি বেশ কিছু বই লিখেছেন, ইংরেজী এবং স্প্যানিশ ভাষায়। বেশ কয়েকবার নোবেল প্রাইজের জন্যে তিনি মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন--এরকম গুজবও রটেছে। 

দুঃখজনকভাবে, এত কিছুর পরেও তিনি তার সহকর্মীদের কাছে হাসির পাত্র। কারণ তিনি মানুষ নয়, পশু পাখির মন নিয়ে কাজ করেন। 

তার একটি প্রবন্ধে তিনি দাবী করেছেন যে কোন বিড়াল, কখন কিভাবে মিয়াও করে মেয়ে বিড়ালকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে, সে ব্যাপারে তিনি গবেষণা করছেন। তার এই দাবীকে নিয়ে কয়েকদিন একটি ট্রল বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, এবং তিনি "ট্রেন্ডিং" ছিলেন। ট্রলটি শিশুসুলভ, সেখানে দেখা যায় একটি বেড়ালের শরীরে সানচেজের মাথা বসানো, এবং তিনি লোলুপ দৃষ্টিতে একটি সুন্দরী, সাদা বেড়ালের দিকে তাকিয়ে বলছেন "কাম হিয়ার বেইব, আই এম ডঃ হর্নি হাভিয়ের, দ্যা পুসি ম্যাগনেট"। 

সে যাই হোক, বেড়াল নিয়ে ট্রলিং এর শিকার হতে হতে তিনি ত্যক্তবিরক্ত হয়ে ইঁদুর নিয়ে গবেষণা করা শুরু করলেন। ইঁদুরদের তিন বেলা খেতে দেন, আর তাদেরকে দিয়ে মানুষের বিভিন্ন কাজ করানোর চেষ্টা করেন। 

তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ হচ্ছে ছাদে বসানো রেস ট্র্যাকটিতে তার সবচেয়ে বুদ্ধিমান পাঁচটি ইঁদুর কে নিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতা চালানো। এই ট্র্যাকটি তিনি বানিয়েছিলেন তার অন্য একটি পরীক্ষার জন্য। তার দুই ছেলে বেড়াল, ইঁদুর সহ আরো অন্যান্য বিভিন্ন প্রাণীকে রেস করিয়ে বেশ আমোদ পেত। বহুদিন তিনি বাচ্চাদের দেখেন না। 

ভাবতে গিয়ে উদাস হয়ে গেলেন হাভিয়ের। অজান্তে তার প্রাক্তনের নাম্বারে কল দিয়ে ফেললেন। তারপর মনে পড়ে গেল, দুর্বিনিত আচরণের কারণে তিনি তাদের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করার অধিকার হারিয়েছেন। 

মন খারাপ হলেও হাভিয়ের হাল ছাড়লেন না। সুন্দর করে ইদুরগুলোকে রেসের পোষাক পড়ালেন। নিও পলিমারের এই পোষাকগুলো ইদুরের শরীর থেকে নানারকম তথ্য সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ডাটাবাসে পাঠিয়ে দেয় সরাসরি, এবং তা সর্বক্ষণ হালনাগাদ হতে থাকে। গায়ের তাপমাত্রা, হৃদকম্পনের হার, রক্তচাপ সহ আরো বিভিন্ন তথ্য পেয়ে যান তিনি নিমিষেই। এমনকি ইঁদুর আনন্দিত, দুঃখিত, উল্লসিত না উৎকণ্ঠিত, সেটাও জেনে যান নিমিষেই। 

আজকাল তিনি প্রায় প্রতিদিনই এই রেসের আয়োজন করছেন। রেসকোর্সের শেষে পুরষ্কার হিসেবে বড় একটূকরো পনির রেখে দেন তিনি। 

তবে রেস শেষে সবাইকেই তিনি পনির খেতে দেন, এবং যথেষ্ঠ পরিমাণেই। তারপরেও খেয়াল করেছেন যে জর্জ এবং জিম নামের ইঁদুর দু'টি কোন এক বিচিত্র কারনে অতিরিক্ত উৎকণ্ঠায় থাকে রেসে জিতে বড় পনিরটিতে দাঁত বসানোর জন্য। 

আজকে তিনি অন্য একটি পরিকল্পনা আঁটলেন। 

প্রতিদিনের মত, ছোট ছেলের খেলনা পিস্তল দিয়ে গুলি ছুঁড়ে রেসের শুরুর ঘোষণা দিলেন। পাঁচটি ইঁদুর সজোরে ছুটছে বড় পনিরের টুকরোর লোভে। হঠাত, ঠিক রেস শেষ হবার অল্প কিছুক্ষন আগে পনিরটি সরিয়ে রাখলেন তিনি। প্রতিটি ইদুরই সেটা লক্ষ্য করলো, কিন্তু কেউ থেমে গেল না। যথারীতি, জিম ছুটে গিয়ে যেখানে পনির থাকার কথা, সেখানে পৌছে গেল; কিন্তু সে থামলো না। 

না খুঁজে পাওয়া পনিরের আশায় ছুটতে ছুটতে ছাদের ধারে পৌছে গেল সে। ততক্ষণে টনক নড়লো হাভিয়ের এর। পড়িমড়ি করে ছুটলেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে গেছে। লাফিয়ে পড়েছে জিম। 

পকেট থেকে দূরবিক্ষণ যন্ত্র বের করে ২০ তলা ছাদের উপর থেকে নিচে তাকিয়ে দেখলেন তার প্রিয় ইদুরের থেতলে যাওয়া মরদেহ। 

নিজের অজান্তে বলে উঠলেন "ছাগলের বাচ্চা! ইঁদুর দৌড়ে জিতলেও সবাই নির্বোধ ইদুরই থাকে!" 






No comments: