Tuesday, February 06, 2018

জানালার পাশে পর্ব ৩

মিরিন এর মনের মাঝে চলছে ঝড় ঝঞ্ঝা। উত্তাল সাগরের ঢেউ এর মত একেক পর এক চিন্তা আছড়ে পড়ছে মনের মাঝে।বু কে সিরিয়াস বকা দিয়েছে ও। প্রতিদিনের মত কাজ থেকে ফিরে ঘরে ঢোকার সাথে সাথে ওর কোলে ঝাপিয়ে পড়েছিল আদুরে ডাক দিতে দিতে, কিন্তু জীবনেও যা করিনে মিরিন আজ তা করে ফেলেছে নির্দ্বিধায়--ঝটকা দিয়ে বু কে ফেলে দিয়েছে কোল থেকে। আহত ও ব্যাথিত মানব সন্তানের মত মায়াকাড়া দৃষ্টিতে বু তাকিয়ে ছিল মিরিন এর দিকে। দুঃখ ও অভিমানের মিশ্রণে বোবা কান্না কেঁদেছিল বেশ কিছুক্ষণ।

(ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে মৃদু সুরে কান্ট্রি সং)
("Me and you and a dog named boo
Travellin' and livin' off the land")


প্রবাস জীবনের প্রায় শুরু থেকেই বু তার বেস্ট ফ্রেন্ড। ক্লাশ শেষে একদিন হেটে বাসায় ফেরার সময় একটা পেট শপ এর সামনে থমকে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল মিরিন। অতিকায় কৃশকায় ছেলেটাকে সে শুধুই মনে রেখেছে "পেট শপ বয়" হিসেবে। এর আগে কখনোই সে দেখেনি এত লম্বা কোন মানুষ। বেহায়ার মত চেয়ে ছিল ছেলেটির দিকে, কোন রকম ভালবাসা কিংবা ভাল লাগার অনুভব নিয়ে নয়, বড়ং বোবা কৌতুহল থেকে।

"Yo girl, whassup? What'cha lookin at?" শুনে সম্বিত ফিরেছিল ওর।

ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে পেট শপ বয়েজ এর গান

(Every time I see you something happens to me
Like a chain reaction between you and me
My heart starts missing a beat
My heart starts missing a beat
Every time
Oh oh oh, every time)
https://youtu.be/wTkfK2g4pKI

মন্ত্রমুগ্ধের মত এগিয়ে গিয়েছিল সেই পোষা প্রাণীর দোকানে, আর প্রায় এক ঘন্টা লাগিয়ে কিনেছিল জ্যাক টেরিয়ার রাসেল কুকুরটি। জারমেইন ওকে জানিয়েছিল যে এই কুকুরটি আগে আরেক বাসায় ছিল, ওরা ওকে "বু" ডাকতো। ও আর নাম টা বদলায়নি। জারমেইন এর সাথেও আর কখনো দেখা হয় নি ওর।কিভাবে বু আরেক বাসা থেকে ওর দোকানে এল, সেটাও আর জানতে চায়নি মিরিন।

এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হাত থেকে ছুড়ে মারলো সে ব্রাউন খামটি। ভেতরে ভারী কিছু না থাকায় ঘুরতে ঘুরেতে বুমেরাং এর মত সেটি গিয়ে গোত্তা খেল বই এর আলমারীর কাঁচের সাথে। খামের একটি কোনা আটকে গেল কাঠের ফ্রেম এর সাথে। এয়ার কুলার এর বাতাসের ধাক্কায় চিঠিটা কাঁপতে থাকলো ক্রমাগত।

মনের বিষন্নতা কে দূর করার জন্য টিভি ছাড়লো ও। তখনো শোনা যাচ্ছে অবোধ প্রাণীটির ক্ষীন আওয়াজ। টিভি ছাড়ার সাথে সাথেই শুরু হল আবহাওয়ার বার্তা।

"Welcome to tomorrow's weather forecast. Tomorrow will be a sunny day and the sky will be in its bluest form. It will be a perfect day to visit the blue sea and to gaze at the blue sky all day long".

"ধেত্তেরি, সব খানে খালি নীল আর নীল!" বলে টিভি বন্ধ করে রিমোট টা মোটামুটি ছুড়েই ফেল্ল মিরিন।

মিরিন এর প্রায় সব ক্লাশমেট ডর্মে কিংবা রুমমেট নিয়ে থাকে। ছোটবেলা থেকেই ও এক্টূ ইন্ট্রোভার্ট টাইপ; ডর্মে থাকার কথা ও কল্পনাও করতে পারে না! বিশেষ করে এক সিনেমায় ডর্ম এর শেয়ার্ড ওয়াশরুমের ভয়াবহ নমুনা দেখার পর থেকে ওর ডর্ম ভীতি অন্য লেভেলে চলে গিয়েছে।

রুমমেট এর ব্যাপারে ও অনেক ভেবেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও দ্বিধা, দ্বন্দ্ব ও ভয় ওকে বাধা দিয়েছে এতকাল । হঠাত ওর গালে লাল আভা ফুটে উঠলো। ভেবেছিল এবার ফিরলে নীল কে বলবে ওর রুম মেট হতে। ওর ব্যাপারে বিন্ধুমাত্র দ্বিধাও ছিল না ওর মনে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার চোখ টা গেল আধ-ঝুলন্ত খামটির দিকে। খামটির মতই ওর আর নীল এর সম্পর্ক এখন দূর্বল ভিত্তির উপর।

আজকাল আর কেউ পেপারওয়েট কেউ ব্যাবহার করে না, কিন্তু তারপরেও কেন জানি একটা ছিল মিরিন এর বাসায়। প্রবল ক্রোধের সাথে হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল সে পেপার ওয়েট টি। ফুঁসতে লাগলো রাগে...

(চলবে)