Monday, December 14, 2020

দাদার স্মৃতিচারণ (২০২০)


আমার দাদা শহীদ বুদ্ধিজীবী ডঃ সিরাজুল হক খান মারা গিয়েছেন আমার জন্মের ৯ বছর আগে। ছোট বেলা থেকে জেনে এসেছি আমার দাদা অনেক বড় একজন মানুষ ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন, এবং তিনিই ছিলেন আমাদের পরিবারের প্রথম ব্যক্তি, যিনি আমেরিকায় গিয়েছিলেন উচ্চতর ডিগ্রী লাভের উদ্দেশ্যে। উনি পরিবারের সবার জন্য রোল মডেল ছিলেন সব সময়ই। উনার একটি সাদা কালো ছবি আমার দাদুর বাসার বৈঠকখানায় ঝোলানো ছিল। সে ছবিটা দেখতাম আর ভাবতাম যে কোন একদিন হয়তো দাদার মত হতে পারবো। বুক শেলফ ভর্তি বই ছিল সুন্দর করে সাজানো। অনেক মোটা মোটা, অরিজিনাল বই। আইভানহো, ওয়ার এন্ড পিস, ডক্টর জিভাগো, কার্ল মার্ক্স এর ক্যাপিটালিস্ট--এরকম কিছু বই এর নাম মনে পড়ে। আরও ছিল অনেক গবেষণামূলক বই; ভারী ভারী ও দুর্বোধ্য বিষয়ের উপর বই। সেই শিশু বয়সেই মনে হোত, "আহা, আমারো যদি এরকম আলমারী ভর্তি বই থাকতো"। প্রতি বছর এই দিনটি আমার ও আমার পরিবারের জন্য শোকের, দুঃখের, এবং কষ্টের। গত দশকের কোন এক সময়ে আমার বড় চাচা প্রয়াত ডঃ এনামুল হক খানের দেয়া সাক্ষ্যে দাদার হত্যাকারীদের বিচার হয়। তারপর থেকে মানসিক কষ্টটা কিছু কমে এলেও, যতদিন পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পুনাকারী এবং তাদের জল্লাদদের বিচার কার্যকর করা না হয়, ততদিন পর্যন্ত এই দুঃখবোধটা কমবে না। কেউ কেউ বলেন যে এত বছর পর কেনই বা বিচার চাই? আর যাদের বিচার করা হবে বা হচ্ছে, তারা সবাই বুড়ো হয়ে গিয়েছে, কেউ কেউ ধর্মের পথে (!) আছে--তাদের বিচার চাওয়াটা নাকি "blood vendetta"। এ কথাগুলো হাস্যকর। কেন হাস্যকর, সেই ব্যাখায় যেতে চাই না। যারা বোঝার, এম্নিতেই বুঝবেন। যারা বুঝতে পারছেন না, আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত করুক--এই কামনা করি। এ বছরটা বিভিন্ন কারণে অন্যান্য বছরের চেয়ে ভিন্ন। এ বছরেই প্রথমবারের মত আমি ফেসবুক লাইভে এসে দাদাকে নিয়ে কিছু কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। হয়তো অনেকেই অনলাইন গ্রুপ "। সংযোগ। Connecting People" আয়োজিত অনুষ্ঠানটি দেখেছেন। যারা দেখতে পারেননি, তাদের জন্য এখানে লিংকটি দিয়ে দিচ্ছি:
https://www.facebook.com/watch/live/?v=2700817660183473&ref=watch_permalink সেখানে আমি ছাড়াও ছিলেন "ক্র্যাক প্লাটুনের" অন্যতম সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা মশগুল ভাই, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি দিশা এবং আমার বন্ধু ডঃ ফাইয়াজ জামাল। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই আমি প্রথমবারের মত কোন পাব্লিক ফোরামে দাদাকে নিয়ে কথা বললাম। চাকরী জীবনে অনেক প্রেজেন্টেশান দিয়েছি, এবং বেশ কিছু পাব্লিক স্পিচও দিয়েছি দেশে বিদেশে, কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটাই ছিল আমার প্রথম লাইভে আসা।
Faiyaz যখন আমাকে অনুরোধ করেছিল কথা বলতে, আমি বেশ ভয়ই পেয়েছিলাম। কারণ, দাদার স্মৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে ঠিক ভাবে তুলে ধরার একটি বড় দায়িত্ব তৎক্ষণাৎ আমার কাছে চলে এসেছিল। জানি না কতটা সফল হয়েছি, কিন্তু আমার জন্য সেই তিনটি ঘন্টা ছিল খুবই আবেগের। কিছুদিন আগে দাদার পুরনো কিছু ছবি ও আমেরিকায় থাকা অবস্থায় সন্তানদের কাছে লেখা কিছু পোস্টকার্ড হাতে পেয়েছি; চাচা ফুফুদের সংগ্রহ থেকে। এখানে সংযুক্ত ছবিটি দাদার তরুণ বয়সের; তখন তিনি কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গিয়েছেন। আস্তে আস্তে বাকি স্মৃতিগুলোও আমার ওয়ালে এবং দাদাকে নিয়ে বানানো পেজটি (Dr. Sirajul Haque Khan) দেব। আশা রাখি কোন একদিন দাদার একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনি গ্রন্থ প্রণয়নের কাজে হাত দিতে পারবো। সবাই আমার দাদা এবং আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। -মোঃ ইশতিয়াক খান ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২০

No comments: