Thursday, May 06, 2021

রাস্তাফারাই, রেগে ও বব মার্লি বুক রিভিউ

 রাস্তাফারাই, রেগে ও বব মার্লি বুক রিভিউ






৯৫ পৃষ্ঠার এই বইটি আমি এক সন্ধ্যায় পড়ে শেষ করেছি। ইংরেজিতে বলতে গেলে এটি একটি “আনপুটডাউনেবল” বই; অর্থাৎ একবার পড়া শুরু করলে বইটি হাত থেকে নামিয়ে রাখা দুষ্কর।

“রাস্তাফারাই, রেগে ও বব মার্লি” বইটি খুবই সহজপাঠ্য, এবং এখানে সেখানে কিছু অশ্লীল শব্দচয়ন বাদ দিলে, সুখপাঠ্যও বটে। বইটি পড়ার সময় যে ভাবটি মনে উদয় হয়েছে, তা হলো, লেখক যেন আমার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে কথাগুলো বলছেন। মনে হচ্ছিল যেন বব মার্লিকে নিয়ে আড্ডা হচ্ছে।

তবে এই বইটিকে বব মার্লির আত্মজীবনী ভাবলে ভুল হবে। লেখক স্বল্প পরিসরে চেষ্টা করেছেন রেগে সংগীত, রাস্তাফারাই ধর্মাবলম্বী ও বব মার্লি—এ তিনটি বিষয়কে পাঠকের কাছে সহজ ভাবে তুলে ধরতে।

বব মার্লি ও রেগে গান হালে অনেক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানে নাচের আসর মাতাতে, আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করতে মার্লির গানের যেন কোন জুড়ি নেই। তাই ইউটিউবে খুঁজলে তার গানের ট্রান্স টেকনো ইলেক্ট্রনিক ডাবস্টেপ সব ধরণের রিমিক্স ও রিমেকই খুঁজে পাওয়া যায়। এ চাকচিক্যের আড়ালে অনেকসময় তার গানের প্রকৃত অর্থ হারিয়ে যায়।

আমার কাছে বব মার্লির গান মানেই হচ্ছে ধ্যান করার মত একটি ব্যাপার। হ্যাঁ, অবশ্যই তার গানের মাঝে কিছু রয়েছে প্রেম ভালবাসার গান, আর কিছু আছে আপবিট, নাচের আসরের উপযোগী গান। কিন্তু মার্লির রেগে বুঝতে হলে গানের লিরিক্স, অর্থাৎ কথাগুলোকে ভাল করে অনুসরণ করতে হবে।

এ বইটিতে লেখক কাজী মুনতাসির বিল্লাহ ঠিক সে কাজটিই করেছেন। পাতায় পাতায় প্রসঙ্গক্রমেই এসেছে মার্লির প্রতিবাদী ও বিদ্রোহ ঝরা লিরিক্স এর বাংলা অনুবাদ, ও সাথে গানগুলোর পেছনের করুণ গল্পগুলো।

মার্লির জীবন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি রেগে গানের উৎপত্তি কিভাবে হলো, কারা এ ধারার মূল এবং পথিকৃৎ শিল্পী, সে ব্যাপারগুলো সুন্দর ভাবে উঠে এসেছে এখানে।

জ্যামাইকান শিল্পীদের উত্থানের পেছনে রয়েছে তাদের আফ্রিকান পূর্বসূরিদের হাজার বছর ধরে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হওয়া—এ ব্যাপারটির সাথেই আমাদের, যারা শুধু শ্রোতা হিসেবেই মার্লিকে চিনি, তেমন কোন পরিচয় নেই।

রেগে সংগীতের ইতিহাসের হাত ধরেই এসেছে রাস্তাফারিয়ানদের কথা। বব মার্লি ও তার সহ সংগীত যোদ্ধারা যে শুধুই এক দল গাঁজাখোর “রুড বয়” (উগ্র বালক) ছিলেন না, তা বইটি পড়লে ভাল করেই বোঝা যায়।

বইটি পড়তে কেমন লেগেছে, তা শুরুতেই উল্লেখ করেছি। তবে যদি বইটি নিয়ে আমার কোন অভিযোগের কথা বলতে বলা হয়, তাহলে আমি দুটি বিষয় উল্লেখ করবো।

প্রথমত, বইটি যেন হঠাত করেই শেষ হয়ে গিয়েছে। বব মার্লির সংগীত ও বর্ণাঢ্য ব্যক্তিগত জীবনের বড় অধ্যায়টি অনেকাংশেই যেন অনুপস্থিত এখানে। লেখক এ বিষয়গুলোকে ছুঁয়ে গিয়েছেন, কিন্তু অনেক গভীর ভাবে অনুসন্ধান করেননি এ লেখায়। হয়তো এটি ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হয়েছে, তবে পাঠক হিসেবে “বব মার্লি” কে নিয়ে লেখা একটি বই এর কাছে এ ব্যাপারে আরও একটু বেশি প্রত্যাশা ছিল আমার।

দ্বিতীয়ত, বইটির প্রায় শেষের দিকে এসে মার্লির মৃত্যু নিয়ে একটি অধ্যায় রাখা হয়েছে। বইটি সেখানেই শেষ করা হলে ভাল হতো। মার্লির মৃত্যুর ঘটনাটি পড়ার পর কোথায় যেন একটি সুর কেটে গিয়েছিল। এরপর আর বাকি ইতিহাস তেমনভাবে আকর্ষণ করেনি আমাকে। সম্প্রতি প্রখ্যাত রক শিল্পী জন লেননের একটি জীবনী পড়েছি, যেটি শুরু হয়েছিল জন এর মৃত্যুর ঘটনাটির বর্ণনা দিয়ে। আবার একেবারে শেষের দিকে এসে সে প্রসঙ্গে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন লেখিকা (জন লেননের প্রথম স্ত্রী, প্রয়াত সিন্থিয়া লেনন), যা বেশ চমৎকার একটি উপসংহার টেনেছে বইটির।

হয়তো “রাস্তাফারাই, রেগে ও বব মার্লি” বইটির লেখকও চাইলে পারতেন বইটিকে মার্লিময় রেখে দিতে। ভিন্ন প্রসঙ্গগুলো আরেকটি কম গুরুত্ব পেলে পাঠকের প্রত্যাশা আরেকটু ভাল ভাবে পূরণ হতো।

তবে সব মিলিয়ে বলবো বাংলা ভাষায় সংগীত সংক্রান্ত ভাল লেখা খুব একটা চোখে পড়ে না, আর সম্ভবত এ ধারার লেখার পাঠকও তেমন নেই। আমি লেখককে শুভ কামনা জানাই। বই এর শেষে “রেফারেন্স” বই ও প্রবন্ধের দীর্ঘ তালিকায় চোখ বুলালেই বোঝা যায় লেখক কতটা শ্রম দিয়েছেন এর পেছনে