Monday, November 30, 2020

নস্টালজিয়া ৬ঃ প্রথম স্কুল


এখনের মত আমাদের যুগে এত ক্লাস ছিল না। নার্সারি, কেজি ওয়ান টু, প্লে গ্রুপ, প্রি স্কুল--এসব শব্দ শুনিওনি তেমন একটা। মায়ের কাছে পড়তাম শুরুতে। তিনিই আমাকে বাংলা ও ইংরেজী লেখা ও পড়া শিখিয়েছেন। তিনিই আমার প্রথম বিদ্যালয়।

এরপর ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছিলাম সদ্য প্রতিষ্ঠিত সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের "বাংলাদেশ দূতাবাস স্কুল" এ।

সে স্কুলটি সম্ভবত এখন আর নেই, বা থাকলেও, তার নাম পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। সে সময় প্রথম শ্রেনীতে আমরা ৮-১০ জন ছাত্র ছাত্রী ছিলাম মাত্র।

আমাদের প্রিন্সিপাল ছিলেন হাসিখুশী ধরণের একজন ভারতীয় মহিলা। উনার ব্যাপারে তেমন কিছু মনে নেই, তবে এটুকু মনে আছে যে উনি আমাদের গণিত পড়াতেন। অসম্ভব ফর্সা, গোলগাল চেহারার এই মানুষটি মোটা গোল ফ্রেমের চশমাও পড়তেন।

ক্লাস ওয়ার্ক কিংবা হোমওয়ার্কে ফুল মার্ক্স পেলে তিনি "এক্সিলেন্ট" লিখে নিচে একটি সোনালী তারার স্টিকার লাগিয়ে দিতেন। সেই সোনালী তারা পাওয়ার যে আনন্দ ছিল, সেটা সম্ভবত আজকাল শিশুদের জিপিএ ফাইভ পাবার আনন্দের চেয়েও অনেক, অনেক বেশি ছিল। সব উত্তর সঠিক না হলেও সমস্যা ছিল না, রুপালী তারকা পাওয়া যেত। এভাবে সব ছাত্রকেই কোন না কোন পুরষ্কার পেতে দেখে সেই শৈশবেই সাম্যবাদ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেয়ে গিয়েছিলাম।

সে সময় আমার বাবা দাম্মাম শহরের একটি কন্সট্রাকশান কোম্পানীতে জ্যেষ্ঠ স্থপতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। উনার অফিস যে দালানে ছিল, সেই একই দালানেরই অন্য একটি তলায় আমরা ছোট একটি এপার্টমেন্টে থাকতাম।

সকাল বেলায় আমাকে স্কুলে নেয়ার জন্য গাড়ী আসতো। স্টেশন ওয়াগন টাইপের একটি গাড়ী ছিল সেটি।

আমাকে সবার আগে নিতে আসতো, আর ড্রপ করতো সবার শেষে। শহরের এক প্রান্তে বাসা হবার কারণে এই যন্ত্রণা পোহাতে হোত।

ড্রাইভার ছিলেন একজন বাঙ্গালী, ধার্মিক ব্যক্তি। উনার গায়ে থাকতো ইসলামী লেবাস, আর মাথায় থাকতো টুপি। তিনি কখনো ট্রাফিক সিগ্নাল ঠিক মত মানতেন না। লাল বাতি দেখলেও গাড়ী চালিয়ে যেতেন, আর সবুজ দেখলে থেমে যেতেন কখনো কখনো। হলুদ বাতির কাজ সম্পর্কে তার কোন ধারণাই ছিল না।

আমার সাথে তার বেশ খাতির ছিল। আমি সবার আগে উঠতাম বিধায় সামনের সিটে, তার পাশেই বসে যেতাম প্রতিদিন, এবং যাত্রাপথে টুকটাক আলাপও হোত। তিনি দেশের গল্প করতেন, যার বেশিরভাগই আমার মাথার উপর দিয়ে যেত। যতদূর মনে পড়ে, তিনি তার সন্তানদের খুব মিস করতেন। মাঝে মাঝে পেছনের বাচ্চারা বেশি শব্দ করলে ভ্রকুটি করতেন, কিন্তু কখনো কাউকে বকা দিতেন না।

একদিন ট্রাফিক সিগ্নালের পুরো ব্যাপারটা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, এবং তিনি খুব অবাক হবার ভান করলেন। পুরোটা সময় জুড়ে তিনি শুধু "তাই নাকি? আমি তো জানতামই না" ধরণের বাক্য বলে বলে ক্লাস ওয়ানের এক মাতব্বর শ্রেণীয় ছাত্রের লেকচারটি (!) হজম করলেন। আমিও বেশ খুশি হলাম এটা ভেবে যে বৃদ্ধ এক ব্যক্তিকে অনেক কিছু শিখিয়ে ফেলতে পেরেছি।

সিগ্নাল অমান্য করার পাশাপাশি অহেতুক স্পিড ওঠানো এবং ওভারটেক করার মত লঘু অপরাধও তিনি নিয়মিত করতেন। বেশি স্পিডে গাড়ী চালালে আমাদের বেশ আমোদ হোত। আমরা হৈহুল্লা করে উনাকে উৎসাহ দিতাম।

সব মিলিয়ে আমরা, গাড়ীর শিশু যাত্রীরা উনাকে পছন্দই করতাম। উনি ছিলেন আমাদের "ইউসুফ আংকেল"।

হঠাত একদিন স্কুল ছুটির সময়ে দেখলাম নতুন, অচেনা একজন ড্রাইভার গাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে। আমরা খুব অবাক হলাম। সকালে ইউসুফ আংকেলকে চুপচাপ দেখেছিলাম। তবে আমরা আমাদের স্বভাবসুলভ চপলতার সাথেই স্কুলে এসেছি, একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি চুপচাপ আছেন কিংবা তার মন খারাপ, এত কিছু বোঝার মত বয়স আমাদের তখনও হয়নি।

কিছুক্ষণ পর দেখলাম তিনি এগিয়ে আসছেন আমাদের দিকে। বলে উঠলেনঃ

"আংকেল, তোমরা ভাল থেক। আমি চললাম"
আমরা সমস্বরে বলে উঠলাম "আপনি কই যাচ্ছেন?"
"চলে যাই । আমার আর এখানে রিজিক নাই"

(রিজিক শব্দের মানে তৎক্ষণাৎ বুঝিনি। পরে জেনেছি)

আমরা অবাক হয়ে উনাকে মাথা নিচু করে চলে যেতে দেখলাম। দেখে মনে হচ্ছিল ডুয়েলে পরাজিত হয়ে একজন কাউবয় সূর্যাস্তের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন; ক্লিন্ট ইস্টউডের সিনেমার মত।

পরে জেনেছিলাম যে উনার নামে একাধিক ছাত্র ছাত্রীর অভিভাবকেরা অভিযোগ এনেছিলেন, যে কারণে স্কুল কতৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিছুদিন পরে তিনি দেশে ফিরে যান।

নতুন ড্রাইভারের সাথে আমাদের তেমন কোন সখ্যতা হয়নি। উনি গম্ভীর এবং চুপচাপ প্রকৃতির ছিলেন, এবং কিছুক্ষন পরপর বিরক্তিকর ভঙ্গিতে "ফুলাফান, তুমরা চিল্লাফাল্লা করিও না" বলে উঠতেন।

#নস্টালজিয়া
পর্ব ৬ঃ প্রথম স্কুল

আপনি আরবে কাজ করে কতটা সন্তুষ্ট?

মূল পোস্টঃ 

https://bn.quora.com/apani-arabe-kaja-kare-katata-santusta-o-khusi 


আপনি আরবে কাজ করে কতটা সন্তুষ্ট? 

এই প্রশ্নের উত্তরে নিচের লেখাটি লিখেছিলাম কোরা তে। কোরা হচ্ছে একটি প্রশ্নোত্তর সংক্রান্ত জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। 


 চ্যাপটার ১

আমার আব্বা সৌদি আরবে চাকুরী করতেন। একটা আর্কিটেকচারাল কন্সাল্টেন্সী ফার্মে। প্রায় আট বছর কাজ করেছেন ওখানে। জায়গাটা ছিল দাম্মাম নামক একটি ছোট শহরে।

উনার কাছে যা শুনেছি, তাতে মনে হয়েছে যে আরব দেশে চাকুরী করার অভিজ্ঞতাগুলো অম্ল মধুর ছিল। আয় রোজগার ভালো ছিল, কিন্তু বসদের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মান ও ভালো ব্যবহার সব সময় পেতেন না। কোম্পানীর মালিকেরাই ছিলেন বস।

তাদের মধ্যে শিক্ষা দীক্ষা এবং যথোপযুক্ত কর্পোরেট কালচারের অভাব ছিল। তারা রুমে বসে সারাদিন খাওয়াদাওয়া করতো এবং আড্ডা মারতো নিজেদের মধ্যে। হঠাত হঠাত তাদের বেগমদের আগমন ঘটতো অফিসে, সাথে কখনো কখনো আন্ডা বাচ্চাও নিয়ে আসতো। তখন বদ্ধ রুমের ভেতর থেকে হাউ কাউ শোনা যেত। বস, বসের পুত্র, তার পুত্র—এরা সকলেই বেশ স্বাস্থ্যবান ছিলেন। সে কারণে বাসায় তাদের খাওয়া দাওয়ার উপর ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপিত থাকতো। সেই বিধিনিষেধ গুলো কে কাচকলা দেখিয়ে উনারা অফিসে খাওয়া দাওয়া করতেন, আর সেই উৎসবে বাগড়া দিতে আসতেন বেগমগণ। বেগমগণ বলছি কারণ অনেকেই ইসলাম ধর্মের চার বিয়ে করার সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতেন।

সব মিলিয়ে অফিসে একটি এলোমেলো পরিবেশ বিরাজ করতো প্রায় সময়ই। ভাবছেন আমি, আমার শৈশবে এত কিছু কিভাবে জানতাম? ঐ অফিসে কাজ করার একটি ভালো দিক ছিল যে একটি বহুতম ভবনের দুইটি তলা নিয়ে ছিল অফিসটি, আর অন্যান্য বিভিন্ন তলায়, কর্মীদের পরিবারসহ বিনা ভাড়ায় থাকার ব্যবস্থা ছিল।

এ কারণে আমি ৬/৭ বছরের শিশু হওয়া স্বত্তেও অফিসের অনেক ঘটনা নিজের চোখেও দেখেছি। বাবার মুখে শুনেছি বাকিগুলো। আমাকে বলতেন না, কিন্তু মা কে বলতেন। আর আমি শুনে ফেলতাম!

এত অব্যবস্থাপনার পরেও দক্ষ কর্মীদের কল্যাণে কাজগুলো হয়ে যেত। বেশিরভাগ কর্মীই ছিলেন বিদেশী—কেউ ভারতীয়, কেউ পাকিস্তানী, আর অল্প কয়েকজন বাংলাদেশের। এই বিভিন্ন দেশী সহকর্মীরাই নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগাভাগি করে নিয়ে সুচারু ভাবে প্রতিটি প্রজেক্ট নামিয়ে দিতেন—এসব কাজে আরব বস দের অবদান খুব কমই থাকতো। সময় মত বেতন দিয়ে আর কালেভদ্রে রুমে ডেকে নিয়ে দু'কথা শোনানো ছাড়া তারা তেমন কিছু করতেন না বলেই জেনেছি সর্বদা।

তবে মাঝে মধ্যে ভোজের আয়োজন হোত। সে এক আলিশান ব্যাপার। আস্ত উট জবাই করে, মুরগীর ও ভেড়ার রোস্ট সহযোগে, পুরাই সৈয়দ মুজতবা আলীর আব্দুর রহমানের মত করে খাবার পরিবেশ করা হোত। এত এত খাবার দেখে যখন মুখ শুকিয়ে যেত, তখন কেউ একজন ঠিকই বলতো "চিন্তা নেই, আরো আছে!"

ভালো খারাপ মিলিয়ে আট বছর পার করার পর বাবা সিদ্ধান্ত নেন যে "আর নয়, এবার নিজের দেশে ফিরে নতুন ভাবে জীবনটা শুরু করবো"। সেই আশির দশকের শেষের দিকের কথা। দেশে ফিরে এলাম আমর।

চ্যাপটার ২

প্রায় ১১ বছর টেলিকমে চাকুরী করার পর আমার একটা সুযোগ আসে, তিন মাসের একটি স্বল্পকালীন প্রজেক্টে যাওয়ার। প্রজেক্টটি লেবাননের প্রধাণ টেলিকম অপারেটর "আলফা টেলিকম" এর সাথে, থ্রিজি এবং কর্পোরেট মার্কেট সংক্রান্ত কনসাল্টেন্সি।

আমি সুযোগটি লুফে নেই, এবং খুব কম সময়ের মধ্যেই বেশ বড়সড় একটি স্যুটকেস সমেত বৈরুত এর রফিক হারিরি বিমান বন্দরে অবতরণ করি।

তিন মাসের প্রোজেক্ট দু'মাসেই শেষ হয়ে যায়। প্রথম দিন থেকেই আমি একটি বিরুপ পরিবেশ দেখতে পাই অফিসে। সেখানকার আরব কর্মীগণ বাংলাদেশ থেকে আসা কনসাল্ট্যান্ট কে কেন জানি সহ্যই করতে পারছিলেন না।

প্রথমেই আমি ভাষাগত বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম। সে দেশের প্রধাণ ভাষা আরবী এবং ফরাসী। এরপর তৃতীয় ভাষা ইংরেজী। ট্যাক্সি চালক থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট এর বেয়ারা, শপিং মলের কর্মী, পথচারী, এবং কোন কোন কলিগও ইংরেজী ব্যবহারে চরম ভাবে অনিচ্ছুক ছিল।

আমরা, বাংলাদেশে, বিদেশী কোন সহকর্মী পেলে তাদের সামনে কখনো মাতৃভাষায় কথা বলি না। এটা এক ধরণের অভদ্রতা। আর যদিও বলতে হয়, তাহলে অনুমতি নিয়ে বলি। কিন্তু লেবাননের লোকজন এই ব্যাপারটাকে একদমই পাত্তা দিতো না।

আমাকে সাথে নিয়ে যেত লাঞ্চ করার সময়, কিন্তু আরবীতে কিচির মিচির করতে থাকতো সহকর্মীরা। আমি এক বর্ণও বুঝতাম না। এক আধ দিন আমাকে দুই একজন আরবীতেই প্রশ্ন করে ফেলতো কিছু না কিছু। আমি না বুঝে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতাম, কিছু বলতাম না। তখন অন্য কেউ আমাকে উদ্ধার করতো।

আর আমি যখনই কোন পরিকল্পনা তাদের সাথে শেয়ার করতাম, তারা সেটা তৎক্ষণাৎ নাকচ করে দিত। ব্যাপারটা ছিল এরকম যে "এই বাঙ্গালী যাই বলুক না কেন, আমরা শুনবো না। ও কি জানে?"

স্বভাবতই, আমার প্রজেক্টটি খুব একটা সুবিধাজনক ভাবে এগুচ্ছিল না। এক পর্যায়ে আমিও বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিলাম। আমি আমার কাজ সুচারু ভাবেই শেষ করলাম; আমার সকল সুপারিশ গুলো গুছিয়ে, সুন্দর করে প্রেজেন্টেশান বানিয়ে তাদের সকল বসদের পাঠিয়ে দিলাম।

যদিও আমার প্রজেক্ট তিন মাসের ছিল, দু'মাসের মাথায় ওদের মানব সম্পদ অধিদপ্তর থেকে আমাকে জানানো হলো যে তারা আমাকে আরও এক মাসের জন্য রাখতে চায় না। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাচলাম। দ্রুতই দেশে ফিরে এলাম।

এই হল আমার এবং আমার বাবার আরব দেশে কাজ করার অম্লমধুর অভিজ্ঞতা।

Thursday, November 26, 2020

Book Review: The CATCHER in the RYE by J.D. Salinger

The Catcher in the RyeThe Catcher in the Rye by J.D. Salinger
My rating: 5 of 5 stars

Book Review: The CATCHER in the RYE
My score: 5/5

I just finished reading "The Catcher in the Rye". This was my second attempt at reading this book. When I first started reading it, I could not get myself interested and engaged enough to go through it. At some point, I lost the book and kind of forgot about it.

However, this time around (probably after more than 5 years since my last effort), it took me less than 2 weeks to finish it, and I read it on my Kindle.

It has been a captivating experience. To be honest, I can't remember when was the last time I felt so invested in a character. Though two week's was needed, I actually read the whole book in about seven days, which means 25 pages per day; which is top speed--considering the amount of peaceful, book reading time I can get these days.

Holden Caulfeld, the protagonist of this novel is a likable person. He is kind of a tragic hero; he speaks for many of us who are riddled by things the society expects us to do, but apparently, most of them makes no sense to us and feels somewhat underwhelming and futile.

If I compare the book to music, it falls under "easy listening" genre. Throughout the book, we expect something extraordinary or game changing will happen "any moment now", but nothing happens like that.

In other words, the entire book changes the game, and it keeps doing that on a constant basis. This may sound a bit confusing, but I can't elaborate more without giving away spoilers. Just know that you won't feel bored at all, once you get in character.

The setting of the book is post-world war II era. Though the setting is of a distant past, it amazes me as to how many elements of Holden's life is still relevant and comparable with our lives.

I have read a good number of books on various topics and scopes lately, both fictional and non-fiction, but I must say, this is one book that I'd love to get back to again, and again.

I can't describe the feeling I have after finishing it. I really craved for more. I wanted Holden's story to go on for a bit more.

i guess that's one good way of knowing that I just finished reading a great book.

View all my reviews

Thursday, November 19, 2020

নস্টালজিয়া ৫ঃ কুক্কু ঘড়ি

আমার দাদুর বাসায় একটি সুদৃশ্য দেয়াল ঘড়ি ছিল। ঘন্টার কাটাটি একবার পুরো ঘুরে আসলেই ঘড়ির উপরের দিকে একটি দরজা খুলে যেত, আর সেখান থেকে একটি পাখি বের হয়ে এসে "কুক্কু কুক্কু" ধরণের একটি শব্দ করতো। যতটা বেজেছে, ঠিক ততবার এই কুহু ধ্বনি করে, তারপর পাখিটি পুনরায় তার স্বীয় প্রকোষ্ঠে ফিরে যেত। এ ছাড়াও, প্রতি আধ ঘন্টা পরপর সে তার বাসা থেকে বের হয়ে এসে একটিবার কুহু ধ্বনি তুলে আবার জায়গামত ফিরে যেত। 







সে সময় বয়স কম ছিল, মনে অনেক অদ্ভুত অদ্ভুত চিন্তা আসতো। ভাবতাম, ঘড়ির ভেতরে পাখির জন্য অসীম শস্যদানা রাখা আছে। ঘন্টার কাটা আবর্তনের মাঝের সময়টিতে সে হয় ঘুমাচ্ছে, আর না হলে শস্য দানা মুখে পুরছে একের পর এক। ব্যাপারটা কল্পনা করে মজা লাগতো। কল্পনার পাখি একদিন বিরাট বড় ডানা মেলেছিল; সেদিন ভেবেছিলাম "আহা, ঘড়ির পাখি হিসেবে জন্ম নিলে খুব একটা খারাপ হোত না। অন্তত খাওয়া দাওয়ার চিন্তা থাকতো না"। 

"কাক্কু/কুক্কু ক্লক" নামের এই ঘড়িটি কোথায় প্রথম নির্মিত হয়েছিল, তা আজ আর জানা যায় না। তবে এটির বেশিভাগ উন্নয়ন, এবং বর্তমান রূপটি এসেছে জার্মানীর ব্ল্যাকফরেস্ট নামক স্থানে। ১৮শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এই ঘড়িগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এখনো খুজলে এনটিক হিসেবে পাওয়া যায়, আর হালের এমাজন জাতীয় অনলাইন স্টোরে নতুনও পাওয়া যায়। 

এই ঘড়িগুলোতে প্রতিদিন দম দিতে হয়। একবার দম দিলে ঘড়ি চব্বিশ ঘন্টা চলে। এই ব্যাপারটা এখনো অবিকল রয়েছে। 

আমাদের বাসার ঘড়িটি আমার সেঝো চাচা তার বিয়েতে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন, এবং পরবর্তীতে তিনি তা দাদুকে দিয়ে দিয়েছিলেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফ কোয়ার্টারে, আমার দাদা শহীদ বুদ্ধিজীবী ডঃ সিরাজুল হক খানের বাসভবনের বৈঠকখানায় সেই ঘড়িটি রাখা ছিল আমার জন্মের আগে থেকেই। 

জন্মের অল্পদিন পরেই আমরা সৌদি আরবে চলে গিয়েছিলাম; আব্বা সেখানে স্থপতি হিসেবে কাজ করতেন একটি প্রতিষ্ঠানে। সম্ভবত ১৯৮৫ সালের দিকে, ছুটি কাটাতে দেশে এসেছিলাম আমরা, এবং তখনই প্রথম দেখেছিলাম এই ঘড়িটি। তবে সে সময়ের তেমন কোন স্মৃতি নেই। আবছা আবছা মনে পড়ে পাখিটির কথা।  

তারপর ১৯৮৯ তে পাকাপাকি ভাবে আমরা দেশে ফিরে আসার পর থেকে সেই ঘড়ি নিয়ে রয়েছে অনেক স্মৃতি। সে সময় আমাদের কারো হাতঘড়ি কেনার কিংবা ব্যবহার করার অনুমতি ছিল না, এবং পুরো বাসায় সেটিই ছিল একমাত্র, উল্লেখযোগ্য ঘড়ি। দূর থেকে কুক্কু ধ্বনি শুনে বুঝতে পারতাম কয়টা বেজেছে, আর ঘন্টার কাটাটি একবার ঘুরে আসার সময়টায় প্রিয় কাজ ছিল লিভিং রুমে গিয়ে পাখির ডাক শোনা।  কালের পরিক্রমায় ঘড়িটি ফুলার রোড থেকে খিলগাঁয়ে চলে আসে। 

এখনো চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই সেসময়ের দৃশ্যগুলো। কান পাতলে শুনতে পাই শব্দগুলো। 

পবিত্রতা, ভরসা ও আস্থার প্রতীক হয়ে দাদু সাদা শাড়ী পড়ে বসে আছেন উনার আরামকেদারায়। চোখে চশমা, হাতে দৈনিক বাংলার ফ্রেশ কপি। মগ্ন হয়ে পড়ছেন পেপার। তবে খুবই সজাগ। পাশে দিয়ে বিড়াল হেঁটে গেলেও তার চোখ এড়ায় না। 

এরই মাঝে পেছনের দেয়ালে সেই পাখির ডাক ডাকা ঘড়ির টিক টক চলছে নিরন্তর। পাশে একটি শোকেসে রবীন্দ্রনাথের কুঁজো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মূর্তি, কক্সবাজারের শামুক ঝিনুকের খেলনা, এবং আরো অনেক কিছু। পাশের বুক শেলফে দাদার সব ইংরেজী বই; আইভানহো, ডক্টর জিভাগো। সামনে একটি পুরনো ফিলিপ্স টিভি আর এনালগ টেলিফোন। 

কবে, কিভাবে, কোথায় যেন সেই ঘড়িটি হারিয়ে গিয়েছে। 

দাদু আমাদের মাঝে নেই অনেক বছর হয়েছে। উনার সাথে সমার্থক, স্মৃতি বিজড়িত বস্তুগুলোও একে একে হারিয়ে গিয়েছে আমাদের জীবন থেকে। খুজলে হয়তো অনেক কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে, কিন্তু সব কিছু মিলিয়ে শৈশবের সেই স্মৃতি আর কখনোই ফিরে আসবে না। 

#নস্টালজিয়া

পর্ব ৫ঃ কুক্কু ঘড়ি 

[এই পোস্টের সাথে দেয়া ছবিগুলো ঘড়িটির প্রকৃত ছবি নয়, তবে সেটির ডিজাইন অনেকটা এরকমই ছিল] 

Wednesday, November 18, 2020

A Changing World

 


The world is changing, and Covid 19 is not the only cause.


Even a decade ago, a president like Donald J. Trump would be impossible to comprehend.

A trash talking, rhetoric spewing , twitter addicted president for arguably the world's most important economy--who would have thought this possible?


But it happened, and it happened for whole 4 years.


And as for Bangladesh's perspective, I never thought work from home would be feasible. I remember, one of my former organizations ran a WFH pilot project. Few employees were selected who's work did not really require them to be present at office.


Interestingly, the outcome of that experiment was disastrous. One employee was good at data mining and IT related work. While going through WFH, he started taking third party projects, and soon got involved in outsourced work. One fine morning, he informed his boss that he will be quitting. That was the same line manager who recommended him for WFH.


Some others lost focus, and could never get anything done on time. They felt disconnected and dejected, and many of them asked to be brought back in the office.


However, back then, we had flexibility. But now, after almost a year of this pandemic running through our lives and causing havoc, can we get back?


#covid19 #people #work

[Originally written for and posted in Linkedin]

Wednesday, November 11, 2020

তুমি না থাকলে





"তুমি না থাকলে"

তুমি না থাকলে,
হে প্রিয়, আমি তো দরজাই খুঁজে পেতাম না।
দেখতেই পেতাম না যে দরজা আছে একখানা!
আমি বেদনায় নীল হতাম,
যদি তুমি না থাকতে ।


তুমি না থাকলে,
হে প্রিয়, আমি সারা রাত জেগে থাকতাম।
সকালের আলোর জন্য থাকতো অপেক্ষা;
আর জ্বলজ্বলে সুর্যোদয় দেখার জন্য তৃষ্ণা।
তবে তা নতুন হোত না,
যদি না তুমি থাকতে।


তুমি না থাকলে,
আকাশ পড়তো ভেঙ্গে,
আর সাথে নামতো বিধ্বংসী বৃষ্টি।
তোমার ভালবাসা ছাড়া আমার অস্তিত্বই থাকতো না;
হারিয়ে যেতাম একেবারেই ।
এবং তুমি জানো এটা সত্য


যদি তুমি না থাকতে,
তবে শীতের পরে বসন্তের আগমন হোত না।
কোকিলের ডাকও শোনা হোত না;
বোধগম্য হোত না কিছুই।
কোন ভাবেই সত্যের দেখা পেতাম না,
যদি না তুমি থাকতে।

[বব ডিলানের "If Not For You" গানের লিরিক্স অবলম্বনে

গানের লিংক্ঃ
https://youtu.be/yyouhbgAiCA
মূল লিরিক্সঃ https://www.azlyrics.com/lyrics/bobdylan/ifnotforyou.html
ছবিঃ গুগল ]

#ishtiaq_radical