Saturday, May 30, 2020

Beirut Diary 11

দেশের বাইরে প্রথম জন্মদিনের মত প্রথম ঈদও পালন করলাম সেবার বৈরুতে। ঈদ উল আযহা। 

আলফা টেলিকমের মার্কেট অপারেশানস ডিপার্ট্মেন্টে কোন মুসলমান ছিল না। এই ব্যাপারটা আমাকে খুব একটা প্রভাবিত করেনি, কিন্তু শুক্রবারে জুম্মার নামাজের সময়ে অফিস করার ব্যাপারটা বেশ অদ্ভুত লাগতো।

অফিসের আশেপাশে কোন মসজিদ ছিল না। জুম্মা পড়তে হলে ট্যাক্সি নিয়ে বেশ খানিকটা দূরের একটি জায়গায় যেতে হোত। বলাই বাহুল্য, অফিসে কোন নামাজের কক্ষ ছিল না। 

ঈদের দিনে আমি ছিলাম পুরাই একাকী। আগেই বলেছি, কলিগদের মধ্যে কেউ ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিলেন না, এবং সেই দেশের কোন মুসলমানের সাথে আমার সেভাবে পরিচয়ও ছিল না।

প্রতিবারের মত সেবারও দেশে গরু ও খাসী কুরবানী দেয়া হচ্ছে, জানতাম। গরুর ছবিও পাঠানো হলো আমাকে। কিন্তু দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে! প্রচন্ড মিস করছিলাম চাচাদের সাথে ঘুরে ঘুরে হাট থেকে গরু কেনা, গভীর রাতে সেই গরুকে হাটিয়ে হাটিয়ে বাসায় নিয়ে আসা সহ ঈদের সকল আয়োজন কে।

ভেবেছিলাম সকালে উঠে নামাজে যাব। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে আর জামাত ধরা হলো না। দেখি ১১ঃ৩০ বেজে গিয়েছে। তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে মনে পড়লো, আজ অফিস নেই। ধীরে সুস্থেই বিছানা ছেড়ে উঠলাম।

শুধু সেদিন নয়, এরপর আরও তিন দিন ছুটি পেয়েছিলাম। এটাই ছিল লেবানন থাকাকালীন আমার সব চেয়ে বড় ছুটি। ঈদের সাথে সাথে তাদের জাতীয় কোন একটি দিবসও পড়ে গিয়েছিল, যে কারণে এত লম্বা ছুটি।

উদ্যমের অভাবে বৈরুত ছেড়ে কোথাও যাওয়া হয়নি, কিন্ত এখন মনে পড়লে আফসোস হয়--চাইলেই আমি ঘুরে আসতে পারতাম পার্শ্ববর্তী কোন নতুন শহরে, কিংবা বৈরুতের অজানা কোন এলাকাতেও ঢুঁ মারা যেত সহজেই। কিন্তু মনটা আসলে বেশ খারাপই ছিল; নতুন কোন এডভেঞ্চারের দিকে না গিয়ে বড়ং চিরপরিচিত "আশরাফিয়েহ" এলাকায় চলে গেলাম ট্যাক্সী নিয়ে। 

বৈরুতে থাকার সময়টায় এই জায়গাটাই আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় ছিল, কারণ এখানে এক সাথে অনেক কিছু পেয়ে যেতাম। ABC Mall নামের একটি বড় শপিং মল ছিল সেখানে, যেখানে উইন্ডো শপিং এর জন্য বড় বড় ও সুদৃশ্য দোকানপাট , খাওয়া দাওয়া করার জন্য অসংখ্য সুলভ রেস্তোরাঁ, সুবিশাল থ্রিডি সিনেমা হল, হাঁটাহাঁটি করার জন্য মনোরম পরিবেশ এবং সর্বোপরি স্টারবাকস এর একটি বড়সড় শাখা-ছিল। 




অফিস থেকে যে দৈনিক ভাতা পেতাম, সেটা দিয়েই মোটামুটি খাওয়ার খরচ হয়ে আরো বেশ খানিকটা বেঁচে যেত। সেই বাড়তি অর্থ থেকেই সময় কাটানোর জন্য এসব বিনোদন মূলক কাজে কিছু খরচ করতাম। তাও খুব বেশী না। দু'মাসের সফরে কেনাকাটা তেমন কিছুই করিনি। শুধু জীবনে প্রথমবারের মত কয়েকটি অরিজিনাল সিডি কিনেছিলাম; সদ্য রিলিজ হওয়া আইরন মেইডেনের এলবাম "ফাইনাল ফ্রন্টিয়ার", স্যান্টানার "গিটার হেভেন" এবং শাকিরার "সালে এল সোল"। 


 

উইকেন্ডের বাঁধা রুটিন ছিল এটি। সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে ১১-১২ টার দিকে চলে আসতাম এখানে। কিছুক্ষণ দোকানপাট ঘুরে লাঞ্চ সারতাম। তারপর পরপর দু'টি মুভি দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে আসতো। এরপর আরো খানিক্ষণ ঘুরে ডিনার করতে যেতাম। একেক সপ্তাহে একেক রেস্তোরাঁতে, এবং একেক ধরণের খাবার। 

যারা আমাকে ভাল চেনেন, তারা সবাই জানেন আমি কফি প্রচন্ডরকম ভালোবাসি। জীবনে প্রথম স্টারবাকস এর কফি খেয়েছিলাম মালয়েশিয়া গিয়ে। সেই কফি পান করে মনে হচ্ছিল অমৃত সূধা পান করছি। পরবর্তীতে অন্যান্য দোকানে আরও ভাল কফি খাওয়ার সুযোগও হয়েছে, কিন্তু সেই প্রথম কাপের কথা আজও মনে পড়ে।

এবিসি মল এর বাইরে ছিল সব চেয়ে বড় স্টারবাকসটি। সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ভীড়ের কমতি থাকতো না। উইকেন্ডে বেশী ভীড় হোত। দোকানের বাইরে আর ভেতরে, দু'খানেই বসার সুন্দর বন্দোবস্ত ছিল। এক পাশে হয়তো স্যুট টাই পরে দুই তিন জন্য ব্যক্তি বিজনেস মিটিং সারছেন, আবার অন্য পাশে ৪-৫ জন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ছাত্রী মিলে গ্রুপ এসাইনমেন্ট শেষ করছে, আবার আরেক মাথায় টুলে বসে কপোত কপোতী মধুর দৃষ্টি বিনিময় করছে। এই দৃশ্যগুলো খুবই সাধারণ ছিল। 

সবাই কথা বলছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত ভাবে। শোরগোল নেই একদমই । কেউ কাউকে বিরক্ত করছে না, এবং কেউ কারও ব্যাপারে বাড়তি উৎসাহ দেখাচ্ছে না। 

সবার হাতে সাদার উপর সবুজ রঙে আঁকা মৎস্যকণ্যা সম্বলিত কফির কাপ, আর তা থেকে ধোয়া ওঠা কফির সুঘ্রাণে পুরো দোকানটা ভরে যেত।  কফিশপের ১০০ গজ দূর থেকেই সেই মন মাতানো গন্ধে মাথা খারাপ হবার জোগাড় হোত। এক অমোঘ টানে ঢুকে যেতাম দোকানে, আর অর্ডার দিতাম হ্যাজেলনাট লাটে, পিপারমিন্ট মোকা, কিংবা ক্যারামেল্লো সহ আরও বিবিধ স্বাদের কফিগুলো। লেবাননে থাকাকালীন কফির বিলই ছিল আমার সবচেয়ে বড় বিলাসিতা। 

কপাল গুণে, লেবাননে খাবারের দাম বেশ আয়ত্তের মধ্যে ছিল। ঢাকা শহরে সে যুগেও বড় দোকানে, মোটামুটি মানসম্মত ডিনার করতে অন্তত হাজার খানিক টাকা বের হয়ে যেত, বিশেষ করে বিফ স্টেইক খেতে গেলে। কিন্তু লেবাননে তিনশো চারশো টাকাতেই বেশ ভাল মানের স্টেক পাওয়া যেত। 

কিন্তু সেদিন আমি এবিসি মলের ঐদিকে বেশিক্ষন না থেকে ডাউনটাউনের দিকে চলে এলাম, কারণ সেখানে রয়েছে সুদৃশ্য কিছু মসজিদ এবং প্রাচীন আমলের কিছু স্থাপত্য কীর্তি।

কিন্তু মসজিদের কাছে গিয়ে বেশ হতাশ হলাম। ঈদ উৎসবের কোন ধরণের চিহ্নই সেখানে দেখলাম না। পরে জানতে পেরেছিলাম, যে অন্য অনেক দেশের মত লেবাননেও প্রকাশ্যস্থানে পশু জবাই করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক আগেই এবং সকল কুরবানী সম্পন্ন হয় সরকার কতৃক নির্ধারিত জবাইখানায়।

কিছুক্ষন মসজিদ এলাকায় ঘোরাঘুরি করে মনটা আবার খারাপ হলো। জন্মদিনে যেরকম আশা করেছিলাম যে দেশ থেকে অনেক ফোন পাব, এবার আর সেরকম ভাবিনি। আসলেও, ইংরেজী তে একটা কথা আছে না, আউট অফ সাইট আউট অফ মাইন্ড--অর্থাৎ, চোখের আড়াল মানেই মনের আড়াল, সেটা যে সত্য তা হাড়েহাড়ে টের পেয়েছিলাম সেবার। তবে এর মানে এই না যে আমাকে সবাই ভুলে গিয়েছিল; শুধু সামনে না থাকায় অত বেশী খোজ করেনি কেউ, এই আর কি।

অফিসের বৈরি পরিবেশের কথা ভেবে আরও বিরক্ত লাগছিল। ছুটির আগে দিয়ে এইচ আর এর সাথে একটা ছোটখাট বচসা হয়েছিল। আমাকে অন্য কর্মীদের মত ব্যাংক একাউন্টে টাকা দিত না ওরা; ব্যাংকে গিয়ে ফর্ম ফিলাপ করে জমা দিলে খামে ভরে ডলার দেয়া হোত। আমি যেহেতু টুরিস্ট ভিসায় ওদের ওখানে ছিলাম, ওরা আমাকে চাইলেও সরাসরি ব্যাংক একাউন্টে বেতন দিতে পারতো না।

সেবার ঈদের মাসে আমাকে অর্ধেক মাসের বেতন দেয়া হলো। অর্থাৎ তৃতীয় মাসের বেতন পুরোটা না দিয়ে শুধু প্রথম ১৫ দিনেরটা দেয়া হলো।

আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না এরকম কেন করা হলো আমার সাথে। ব্যাপারটা নিয়ে এইচ আর এর একজন এক্সিকিউটিভ এর সাথে কথা বলতে গেলাম, সে ঠিক করে বলতে পারলো না কারণটা। আমাকে হেড অফ এইচ আর এর সাথে দেখা করতে বলে সে দায় সারলো।

হেড অফ এইচ আর ভদ্রমহিলার নাম ছিল পাওলা। অত্যন্ত চৌকস, স্মার্ট মহিলাটির ডেস্কে ছিল বেশ বড়সড় একটা ছবি--সুন্দর করে ফ্রেমিং করা। দুই কন্যা ও স্বামী সহ পারিবারিক ছবিটি বেশ সুন্দর ছিল। পরে জেনেছিলাম, ছুটি কাটাতে বিচে গিয়েছিল ওরা, তখন এই ছবিটা তোলা।

এর আগেও পাওলার সাথে যতবার কথা হয়েছে, সে খুবই আন্তরিক আচরণ করেছে।

সেদিন আমাকে সে ঠান্ডা মাথায় দুঃসংবাদ দিল। জানালো, আমার ভিসা রিনিউ করা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। হয়তো আমাকে সময়ের আগেই ফিরে যেতে হবে। সেজন্য আমাকে পুরো মাসের বেতন না দিয়ে শুধু অর্ধেক মাসেরটা দেয়া হয়েছে। তবে তারা চেষ্টা করছে ভিসা রিনিউ করার এবং হয়তো ছুটির পরেই আমি একটা আপডেট পেয়ে যাব।

এই দোটানা ভাব নিয়ে ছুটিতে গেলাম, যার রেশ পুরো চারদিনই টানতে হয়েছে আমাকে।

(চলবে) 

Friday, May 22, 2020

ফ্লপি ডিস্ক এর সেই আড্ডাটা

"ফ্লপি ডিস্ক এর সেই আড্ডাটা"
-ইশতিয়াক খান, #৯৮২১৪০ (৯৮ ব্যাচ, গ্রুপ ২ সাইন্স)




স্কুল জীবনে প্রচুর "পালাইতাম", অর্থাৎ টিফিন পিরিয়ডে ব্যাগ সহ ভেগে যাওয়া, কিংবা স্কুলেই না আসা, এ জাতীয় কাজ প্রচুর করেছি। কিন্তু কলেজে এসে কেন জানি এই ব্যাপারটা মাথাতেও আসতো না।

শুধু সেকেন্ড ইয়ারে অমল কৃষ্ণ বণিক স্যারের বোটানি ক্লাসের ঝিমানি এড়াতে উনার কিছু ক্লাস মিস দিয়েছি। সেটা সংখ্যায় এতই কম যে শেষ পর্যন্ত ঠিকই আমি "পারফেক্ট এটেনডেন্স" এর একটা সুদৃশ্য সার্টিফিকেট পেয়েছিলাম, যা এখনো আমার কাছে রাখা আছে সযত্নে।


কি ছিল এনডিসি তে? পুরো নতুন একটা দুনিয়া। কলেজের গেট দিয়ে ঢুকে কিছুদুর এগিয়ে হাতের ডানে গেলে, একদম শেষ মাথায় একটা ছোটখাট বিল্ডিং ছিল। সেটার নাম ছিল "মার্টিন হল"। কলেজে ভর্তি হবার বহু বছর আগে সেই হলের নিচতলায় একটা বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছিলাম।


সেদিন আব্বা আমাকে, আম্মাকে আর আমার বোনকে "তার কলেজ" ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলাম আর ভাবছিলাম "বাহ, পড়ালেখার জায়গা কখনো এত সুন্দর হয়?"।


তো সেই মার্টিন হলের উপরে ছিল লাইব্রেরী, যা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। না না, আমাকে বই এর পোকা বা অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ভাবার কোন কারণ নেই। লাইব্রেরীতে মূলত যেতাম কম্পিউটারের সামনে বসার লোভে।


সেসময় কলেজের কম্পিউটার ক্লাব ছিল একটা, যেখানে আমাদেরই গুণী সহপাঠীরা, এবং সহকারী লাইব্রেরিয়ান/কম্পিউটার শিক্ষক ব্রাদার (নামটা খেয়াল নেই, সম্ভবত ব্রাদার পালমা) আমাদেরকে এম এস ডস এবং উইন্ডোজ ব্যবহার করা শিখাতেন।


সেই লাইব্রেরী তে ছিল দু'টি ৩৮৬ কিংবা ৪৮৬ মডেলের কম্পিউটার। ডস বা ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেম এর কমান্ডগুলো খুব দ্রুতই শিখে নিয়েছিলাম। সবচেয়ে প্রথমে শিখলাম কিভাবে ফাইল হাইড করে রাখা যায়, এবং কিভাবে কম্পিউটারে থাকা হিডেন ফাইল গুলোকে খুঁজে বের করা যায়। দ্বিতীয় কমান্ডটা ব্যবহার করে কেন কেউ সেই কম্পিউটারের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফ্লপি ডিস্ক নির্ভর মেমোরী থেকে সফট পর্ণ এর কালেকশানগুলো (এই যেমন শ্যারন স্টোন এর বেসিক ইন্সটিংক্ট এর ছবিগুলা, সান্দ্রা বুলক এর সামনের দিকে আগায় থাকা ছবি, সিন্ডি ক্রফোর্ড এর সামার ড্রেস পরা ছবি, ইত্যাদি) মুছে দেয় না, সেটা ভাবতে না ভাবতেই একসময় দেখলাম ছবিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।


এরপর এল উদ্ধারকর্তা হিসেবে ১.৪৪ ইঞ্চির ফ্লপি ডিস্ক। সবাই তাদের ব্যাগে ২-৩টা করে ফ্লপি বহন করতে লাগলো। ফ্লপি গুলোতে জেপেগ ছাড়াও থাকতো বিভিন্ন মজার মজার ভিডিও গেম। ফ্লপি থেকে গেম কপি করে খেলা যেত; ব্রাদার আসেপাশে না থাকলে। খেলা শেষে গেমটা আবার ডিলিট করে দিতে হবে, এটাই ছিল শর্ত। ব্রাদার কাউকে গেম খেলতে দেখলে তেমন কিছু বলতেন না, কিন্তু একবার হলেও মনে করিয়ে দিতেন "আরে গেম না খেলে বড়ং কিছু কাজ শেখার চেষ্টা কর"।


যে গেমগুলো জনপ্রিয় ছিল তার মাঝে আছে Skyroads, Allan Border's Cricket, Dangerous Dave, Paranoid, ইত্যাদি।


এর মাঝে একদিন সবাই বেশ উত্তেজিত, কারণ বাম পাশের কম্পিউটারে ১১ খানা ফ্লপি যোগে ব্রাদার উইন্ডোজ ৩.১১ ইন্সটল করেছেন।


সেই প্রথম গ্রাফিকাল ইন্টারফেস দেখে আমরা সবাই মুগ্ধ। তখন মাইক্রোসফট মাত্র উইন্ডোজ ৯৫ বের করেছে, সেটা চালানোর মত কম্পিউটার পুরো কলেজে এক্টাও ছিল বলে মনে হয় না।


কয়েকদিন ওয়ার্ড পারফেক্ট আর অন্যান্য উইন্ডোজ ভিত্তিক টুলস নিয়ে খুব নাড়াচাড়া চল্লো। ইতিমধ্যে অনেকেই কম্পিউটার ক্লাবের নতুন মেম্বার হচ্ছে, আর তাদেরকে যথারীতি ডস শেখানো হচ্ছে।


এখনো যেকোন কম্পিউটারে ডস এর একটা ভার্সান দেখা যায়। "Run" এ গিয়ে cmd লিখে এন্টার দিলেই চলে আসবে। অথবা কমান্ড প্রম্পট এ ক্লিক করলে। ডস এর একটা মহা শক্তিশালী কমান্ড আছে, যার নাম deltree. এটা মূলত ডিলিটের জন্য ব্যবহার করা হয়।


ধরুন আপনার সি ড্রাইভে একটি ফোল্ডার আছে Movies. সেটার ভেতরে আরো অসংখ্য ফোল্ডার আর ফাইল আছে। সবগুলোকে একবারে মুছে ফেলতে হলে শুধু লিখতে হবে

deltree c:\movies


এক নব্য শিক্ষার্থী বিপুল উতসাহে deltree c:\windows লিখে এন্টার দিয়েছিল।


এর পরের কয়েকদিন ব্রাদার কে দেখেছি কিছুক্ষন পর পর নিজের মাথাটা দুইহাত দিয়ে চেপে ধরতে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের যে বন্ধু এই অকাজটি করেছিল, সে নিজেই গিয়ে ব্রাদারকে বলেছে। ব্রাদার তাকে একটা বকাও দেননি, শুধু হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়েছিলেন।


পরবর্তী ছয় মাসের মধ্য আর উনাকে দেখিনি উইন্ডোজ রিইন্সটল করার হ্যাপা নিতে।


সবাইকে ধন্যবাদ লম্বা লেখা কষ্ট করে পড়ার জন্য।

Wednesday, May 20, 2020

Spiderman 2018 for PS4, The Best Super Hero based Video Game, Ever



Spiderman is one of the biggest brand names in today's world. He is arguably the most popular comic book hero ever. What came out as a simple comics issue and a character penned by Mr. Stan Lee (RIP) has gone on to become a billion dollar brand within a span of 58 years. The character first appeared in August, 1962. 

Eventually, the character was adapted for a number of movies, and notably, video games. They have seen success to various extent. Today I want to specifically write about Spiderman based video games. 

Most of the games could not get it right. There are several reasons as to why the comic book/movie to video games transition does not work too well for a character like Spiderman. 

I am sure the developers spent a significant time pondering over questions like "What skills and abilities do we give Spiderman? Yes, he has super human strength, he can crawl walls and shoot webs--but what else? He doesn't use firearms or any other weapons. Sometimes he uses gadgets, but what kind? Do we let Spiderman in the video game zap away for hours, without taking any rest? Who do we team him up with? What villains will he fight against? Should we stick to the comic book canon, pick up the story from a movie or go for an original one?"

Answering all that and still coming up with an enjoyable game is no easy task. Thus we saw a bunch of mediocre, uninspired and simply "not fun" Spidey games getting released over the last couple of decades. 

I remember playing a few Spiderman titles on PC, where navigating Spiderman was so complicated that it seemed to me that I was learning to play a flight simulator game. So after all that hullabaloo, when I could finally take Spiderman zooming through the New York skyline, I got held back by "stamina". Yes, you read it write--one had to clear missions, perform tricks or continue doing mundane stuff to just keep Spidey on the air. That felt restrictive and boring. The fights were not fun, either. A few simple combos, counters and throws, and a lot of quick time events, and that's it. Thankfully, this game has very few QTE's, and they don't even feel like QTE's.  

So eventually I lost interest and gave up on Spiderman games, until recently. 

In 2018, a brand new Spidey game for the PS4 console got released. The reviews were staggering and the game seemed to get it all right. But I waited till the price dropped and only got it recently, and I must say, the waiting was worthwhile. I could grab the game of the year edition at a decent price. 

In my opinion, this is a brilliant game; a breakthrough achievement for super hero based video games. There's too many things that can be done in this game, and most of them are fun. For the first time, zapping across New York as Spiderman is totally unrestricted, and fun. 

The next portion of this article contains very minor spoilers for the game. If you don't want to get spoiled about the general tone of the game or get very minimal ideas about the gameplay and plot, you should stop reading now. 

The New York that has been portrayed in this game looks surreal; an urban utopia. Or at least, at the beginning of the game. We see pedestrians moving about, lots of traffic, people trying to hail a taxi cab, and whenever Spidey decides to descend to the ground levels, people all around cheers him and some of them also wants to take a selfie or to shake hands with him. There's even an achievement for doing so. There are all kinds of shops, stores, and important Marvel universe landmark locations like Fogwel's gym (where Daredevil Matt Murdock's dad used to train), Wakandian embassy, Sanctum Sanctoriam and many more. 

As a quick way to gain some XP, you can swing about the entire city and take photographs of these landmark locations. You will also see "backpacks" spread across the map. Each one contains a Spiderman memorabilia, which is a great fan service for fans of the comic book hero. It rewards the player with a little bit of XP, but for each item, Peter describes what the specific items means to him through a well made audio clip.  

But as Spidey keeps on meeting some familiar, and some obscure foes, things change. At one point, the game's tone turns very dark. There's fire, gunshots, snipers, chaos all across the city. You can't swing two blocks without confronting an ambush or two. This drastic shift in the visuals creates a great sense of urgency to reach the end game. 

As an exception, this game totally ignores the Spiderman origin story, and jumps right ahead to a point where Peter is working as an understudy to Dr. Octavius, which resembles the story line of the second movie of the Sam Raimi trilogy. He is already quite good at being Spiderman, and is working closely with the law enforcement agencies. 

All the characters in the game looks authentic, and there is some level of character development, too. The story, albeit linear, is quite interesting, and has a sizable amount of interest to keep players hooked. 

As for the gameplay, it is like the most liberating experience with a super hero game, ever. While it takes inspirations from a few other games, it still feels fresh and unique. 

To mix things up, you assume the role of some other characters in a few missions. The tone of the game changes drastically when these stages start. Although the game emphasizes the need for being stealthy, it doesn't become a must for most Spiderman missions. But the missions were you have to use other characters like MJ, you cannot move one feet without being stealthy. But then again, this is not stealth like Metal Gear Solid; you can go through a lot of trial and errors, and still the missions are quite easy to beat. 

I am not a big fan of stealth, but I, too, enjoyed the change of pace. '

It's a third person brawler/shooter action game, but it often acts like an RPG, as you get to earn things like challenge points, crime points, etc. which you can use to buy new outfits and to get new gadgets, and also, to upgrade them. 

The usage of additional suits has been managed brilliantly in this game--perhaps, all games that use suits should follow suit; no pun intended. 

Once you get a new suit, you unlock a new "ability", but you don't need to keep wearing that suit to be able to use the ability. Also, you have three slots for each suit where you can add some additional perks. Suit abilities range from crowd control moves, buffs to other, subtle things like enemies losing the ability to call in reinforcements. 

And perks include enhancements and modifications on the skills that spiderman unlocks. 

So why this is so great? It's because you can combine any sets of abilities and perks with any suits. Yes, you can be the goofy fantastic four shopping bag wearing spiderman, but you can still bring out the tentacles seen in Avengers: End Game. 

Along with suit abilities, Spiderman also has an extensive skills tree. With each level up, you get skill points, which can be used to unlock devastating new moves and things that make webbing around a lot more easier than before. 

Now let's talk about variety. You will meet many cool enemies from the comic books and movies, and some familiar story lines, too. Things never get boring in Queens, New York, and if you need a break from the fighting, you can always go sightseeing; which also gets rewarded in the form of XP.  

I must say, there is a perfect mix of varied content within the game to keep gamers interested for hours. 

The sounds of beating up the foes are quite satisfying, and they are filled with Spidey quips and funny one liners. The soundtrack is nice enough to soothe the mind, but not distracting enough the hamper the experience. 

Graphics is top notch, and the optimization is also brilliant. I finished the game in a couple of weeks, and it did not even crash once. There were hardly any frame rate drops, and the details are comparable with games like GTA V or Red Dead Redemption 2, if not better. 

When I finished the final, emotionally charged up mission. I was hungry for more. It's a must play game for any PS4 owner; even if he or she is not a fan of the Spiderman franchise. 10/10 for me. 



Tuesday, May 05, 2020

What If এর গল্প

What If এর গল্প
আজকে রাতুলের জন্য একটা খারাপ দিন। প্রতি সপ্তাহেই এই দিনটা আসে, আর সকাল থেকেই তার মেজাজটা গরম থাকে। কোন দুঃখে আম্মা যে স্কুলটা চালু করলো!
সপ্তাহে দুইদিন আম্মা আশেপাশের সব বাসার কাজের ছেলে আর মেয়েদের পড়ায়। দুই দুই চার ঘন্টা ক্লাস সপ্তাহে। বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রী শুরুতে ফ্রি নাস্তার লোভে আসলেও এখন নিজেদের আগ্রহেই আসে। যেসব বাসায় এই বাচ্চারা কাজ করে, তারা প্রথমে একটু গাইগুই করলেও এখন খুশি মনেই ওদেরকে পড়তে পাঠায়।
সবাই এই ব্যবস্থায় সুখী হলেও কপাল পুড়েছে রাতুলের, কারণ বুধ আর শুক্রবারে এই ক্লাশটা নেন মিসেস রহমান। বুধবারে রিতুর ক্লাস থাকে; এলিফ্যান্ট রোডে, জামান স্যারের বাসায়। বাংলামোটর থেকে এলিফ্যান্ট রোড বেশী দূরে না হলেও ছোট বোনকে মা কখনোই একা আসা যাওয়া করতে দেন না। বাকি দিনগুলোতে আম্মা নিজে গেলেও বুধবারে রাতুল কে যেতে হয় তার বোন কে উদ্ধার করে আনার জন্য।
সেদিনও সে গেল। ক্লাস শেষ হবার কথা বিকেল চার টায়, কিন্তু জামান স্যার প্রায়ই ওদেরকে আরো কিছুক্ষণ আটকে রাখেন। আবার কোন কোন দিন আরো আগেই ছেড়ে দেন। তাই রাতুল কে সাড়ে তিনটা থেকেই ওখানে গিয়ে বসে থাকতে হয়।
ঘটনাচক্রে, ঐ সময়ে স্যারের ব্যাচটি ছিল "অল গার্লস", এবং এ কারণেই মূলত রাতুলের বিরক্তি। গলির শেষ মাথার স্যারের বাসা, আর পুরো গলি ভর্তি ছিল আরো কয়েকজনের স্যারের বাসা।
আজকে রিকশা থেকে নেমেই আরেক দফা মেজাজ গরম হলো রাতুলের। মনে হয় সব স্যার আজকে আগে ক্লাশ ছুটি দিয়ে দিয়েছে। দল বেঁধে কিশোরী মেয়েগুলো কিচির মিচির করছে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে। আচারওয়ালা মামার আজকে সেইরকম রমরমা ব্যবসা।
সে ব্যাগ থেকে নাইকির "জাস্ট ডু ইট" লেখা এবং টিক চিহ্ন মার্কা দেয়া নীল ক্যাপটা বের করে পড়ে নিল, তারপর অন্যদিনের মত মাথা নিচু করে হনহন করে সামনে আগাতে লাগলো। কিন্তু খুব একটা দ্রুত হাঁটতে পারছিল না সে।
প্রথমে সে থমকে গেল চারজনের একটি দলের কারণে। সে ভেবেছে তাকে দেখে মেয়েগুলো সরে দাঁড়াবে। কিন্তু তারা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। রাতুল অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েগুলোর চোখে ও মুখে আমোদ। মুচকি হেসে একটা মেয়ে বলেই বসলো "হাই হ্যান্ডসাম"। রাগে লাল হতে হতেই পাশের মেয়েটা চোখ টিপে দিল। রাগ ও লজ্জার সাথে লড়াই করতে করতে কোনমতে এই দলের হাত থেকে পালিয়ে বাচলো সে।
আরেকটু আগাতে সে বুঝতে পারলে তার ডানপাশ থেকে আরেকদল মেয়ে তাকে লক্ষ্য করছে। তারা আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকলেও সে মাথা নিচু করেই এগিয়ে গেল। পেছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো "একবারও চোখ তুলেও তাকালো না!"
রাতুলের মনে হলো সে প্রায় দশ বছর ধরে হাটছে। অবশেষে জামান স্যারের বাসার সামনে এসে দাড়াতে পারলো সে। একের পর এক মেয়ে বের হচ্ছে। অনেকেই তাকে রিতুর ভাই হিসেবে চিনে এক চিলতে শ্রদ্ধা(!) মাখানো হাসি দিয়ে যাচ্ছে, আর সে শুধু শুধুই লাল হচ্ছে। অবশেষে তাকে যখন প্রায় রক্ত মানবের মত লাগছে, তখন রিতু বেরিয়ে এল।
"এতক্ষন লাগে বের হইতে? সমস্যা কি তোর?"
"ভাইয়া, বকাঝকা করবা না তো। স্যার আজকে টেস্ট নিয়েছেন"
"টেস্ট কি তোর একার? তুই দেরী করিস, আর এদিকে সব ফাজিল মেয়েগুলা..."
"কোন ফাজিল মেয়ে? কে কে কে? ওই যে, লাল ফিতা গোলাপী জামাওয়ালা রেবেকা?"
"চুপ করবি? বাসায় চল। আমি আর আসতে পারবো না তোকে নিতে"।
এভাবে রাগে গজগজ করতে করতে গলির মুখের কাছাকাছি এসে রাতুল আবার খেয়াল করলো আসলেই লাল ফিতা গোলাপী জামা একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে তখনো। সে বুঝতে পারলো যে এই সেই চোখ টিপ দেয়া মেয়েটি।
তাকে দেখেই রিতুর চোখে মুখে কৌতুক খেলা করতে লাগলো। কিন্তু ভাইকে আর রাগাতে চাইলো না। তার এই বোকাসোকা লাজুক ভাই এর জন্য অনেক মায়া। দুনিয়ার দুষ্টু নারীকূল থেকে তাকে রক্ষা করার এক মহান ইচ্ছা মাঝে মাঝে তার মনে খেলা করলেও সে পুরো ব্যাপারটাকে নির্দোষ কৌতুকের মত করেই দেখে। রেবেকা তার ক্লাশেই পড়ে।
কিছু বোঝার আগেই রেবেকা এসে রাতুলের হাতে একটা চিরকূট দিয়ে গেল। পারফিউমের গন্ধ মাখা কাগজে কি আছে, সেটা না দেখেই ছিড়ে ফেলার এক অদম্য ইচ্ছা তার মনে জাগলেও সে অতটা অভদ্রতা করতে পারলো না।
তবে কাগজটা ভাজ করে তার ব্যাগে রেখে দিল। না পড়েই।
এইটা সাত বছর আগের কাহিনী।
সেদিন রিকশায় করে বাসায় ফেরার সময় জনৈক রসিক মোটরসাইকেল আরোহী টান দিয়ে তার হাত থেকে সেই ব্যাগটি নিয়ে গিয়েছিল। ব্যাগের ভেতর একটা ভারী জ্যাকেট, দুইটা পেন ড্রাইভ আর সেই কাগজ ছাড়া আর কিছু ছিল না।
আজকে রেবেকা আর তার বোনের গ্র্যাজুয়েশনের অনুষ্ঠানে এসে সেদিনের কথা ভাবছিল রাতুল। ঠিক করে রেখেছে এক ফাকে রেবেকা কে জিজ্ঞেস করেই ফেলবে সেই কাগজে কি লেখা ছিল।
এই what if মূলক জীবন আর ভাল্লাগছে না তার।

Saturday, May 02, 2020

A Not So Typical Review of Extraction (2020)

A Not So Typical Review of "Extraction (2020)"



যখন প্রথম শুনলাম যে ঢাকার পটভূমিকায় বানানো একটি মূভী আসছে নেটফ্লিক্সে, বেশ উৎসাহিত বোধ করলাম।
নায়ক বা মূল চরিত্রও বেশ পরিচিত একজন, ক্রিস হেমসওয়ার্থ, যে কিনা এভেঞ্জারস মুভি সিরিজের বজ্র দেবতা থর চরিত্রে রূপদানের জন্য বেশ বিখ্যাত।
মুভি রিলিজের আগে থেকেই বেশ কিছু নেগেটিভ কথা শুনলাম। মুভির কাহিনী ঢাকা ভিত্তিক হলেও কোন বাংলাদেশী অভিনেতা নেই, এবং মুভিতে কিছু স্টক ছবি ব্যবহৃত হলেও ঢাকায় কোন শুট্যিং হয়নি। যারা অভিনয় করেছেন, তাদের বাচণভঙ্গী মূলত পশ্চিম বঙ্গের মানুষদের মত; আমাদের মত নয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রথমে কিছুটা নিরুৎসাহিত হলেও শেষ পর্যন্ত "সিনেমায় ঢাকা শহর" দেখার লোভের কাছে পরাস্ত হয়ে প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপি সিনেমাটি দেখেই ফেললাম ঘরে বসে।
এটি অন্য যেকোন ধুমধারাক্কা হলিউড (কিংব কিছুটা বলিউড ও বটে) এর মুভির মতই। প্রচুর ভায়োলেন্স, তেমন কোন প্লট কিংবা ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট নেই, এবং মুভির সমাপ্তিও বেশ গতানুগতিক।
এত কিছুর পরেও আমার রিভিউঃ ৮/১০
মূল কারণ, হলিউডের একশন মুভির কাছে আমার যা প্রত্যাশা, এই মুভি সেটা পুরোপুরি পূরণ করতে পেরেছে। একশন দৃশ্যগুলো সুন্দর ভাবে চিত্রায়িত হয়েছে, এবং নায়ক তার সাধ্যমত চেষ্টা করেছে নিজ চরিত্র কে বাস্তবসম্মত করে তুলতে।
এবার সমালোচকদের দরজায় একটু ঠক ঠক করি।
যেসব জিনিস নিয়ে মানুষ অভিযোগ করছে, তার বেশিরভাগই হাস্যকর এবং খোঁড়া যুক্তি নির্ভর।
হ্যা, মুভিতে দেখানো হয়েছে র‍্যাব সদৃশ "এলিট" বাহিনী, ডিএমপি এবং বাংলাদেশের আর্মীর কিছু সদস্য এক ড্রাগ লর্ডের কাছ থেকে টাকা খেয়ে তার পক্ষে কাজ করছে। হলিউডের অসংখ্য মুভিতে এরকম ঘুষ খাওয়া সিআইএ, পুলিশ, এফবিআই এবং আর্মী দেখানো হয়। সত্য বলতে, "করাপ্ট কপ" বা দূর্নীতিগ্রস্থ পুলিশ ব্যাপারটা এতই সাধারণ যে, মুভিতে এরকম অন্তত একটা চরিত্র না থাকলে মানুষ বেশ অবাকই হয়।
এবং যেহেতু তারা "খারাপ", স্বভাবতই তারা নায়ক কিংবা নায়ক সমূহ (ক্ষেত্রবিশেষে নায়িকাও) দের হাতে বেধড়ক মার খায়, এবং তাদের গোলাগুলি সর্বদা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ইহাই স্বাভাবিক। এই মুভিতেও তাই হয়েছে। "এলিট" বাহিনী, ডিএম্পি এবং আর্মির যৌথ আক্রমণও নায়ক এবং তার সাময়িক সাইডকিক (কে এই সাইডকিক, তা না লিখি--লিখলে যারা মুভি দেখেনি তাদের জন্য স্পয়লার হয়ে যায়) এর একটি চুলও স্পর্শ করতে পারেনি।
সিনেমা এরকমই হয়। ইহা কোন প্রামাণ্য চিত্র নহে।
কেন বাংলাদেশে শুটিং হলো না?
এই প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নকারী নিজেই জানে। যে কারণে শাকিরা বা এমা ওয়াটসন দেশে এসে চলে যাওয়ার পর খবর পাই আমরা, সে কারণেই। (উপরোক্ত দু'টি ঘটনাই আমাকে যথেষ্ঠ বেদনা দিয়েছিল, কিন্তু সেই গল্প এখানে অপ্রাসঙ্গিক)
কেন বাংলাদেশী এক্টর নাই?
হাহাহা, হোহোহো। ওমর সানীর সাক্ষাতকার দেখেন গিয়া।
কেন ওদের বাংলা অন্যরকম?
Bengali is not their native tongue. It is only normal that the accent will be different.
এরপরেও না বুঝলে থর এর "পমান চাই" অংশ দ্রষ্ঠব্য।
কোন সাহসে উনারা র‍্যাব আর ডিএম্পি কে হেয় করলো?
এই ব্যাপারটা "ক্রিয়েটিভ লাইসেন্স" দ্বারা প্রটেক্টেড। মুভির শুরুতেই ডিসক্লেইমার দেয়া থাকে যে জীবিত কিংবা মৃত কোন চরিত্রের সাথে ঘটনাবলীর কোন মিল নাই।
এই ব্যাখায় যারা সন্তুষ্ট না, তাদেরকে বলি সাশা ব্যারন কোহেন এর "বোরাট" ছবিটা দেখতে। সেখানে কাজাখিস্তান কে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে তাদের জাতিগত ভাবে গ্ণ-আত্নহনন করা উচিৎ। একইভাবে, আরবদের কেও বিভিন্ন সিনেমায় হেয় করা হয়েছে, আর কোল্ড ওয়ারের এত বছর পরেও এখনো রাশিয়ান এক্সেন্ট সহ বেকুব ভিলেন দেখা যায় বিভিন্ন ছবিতে।
বোরাট নিয়ে কাজাখিস্তান অনেক মাইন্ড করসিল, তারা সিনেমাটা ব্যান করে দেয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপি সিনেমাটি দর্শক নিন্দিত। একইভাবে 300 মুভিটা ইরানে ব্যান হয়, কারণ তাদের এক প্রাচীণ রাজাকে খারাপভাবে (কিন্তু সত্যতার সাথেই) উপস্থাপন করা হয়েছিল। সেই সিনেমাটি বিভিন্ন এওয়ার্ড জিতেছে।
উদাহরণ দিতে বসলে হাজার হাজার উদাহরণ দেয়া যাবে। আচ্ছা, এবার নিজের দেশের দিকে আবার তাকাই।
অনন্ত জলিল মোস্ট ওয়ান্টেড নামক একটা ছবিতে নিজেকে পুলিশ অফিসার হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। সেখানে ভদ্রলোক যেসব অবাস্তব কার্যকলাপ করেছেন আর যেসব হাস্যকর ডায়লগ দিয়েছেন, তাতে কি ডিএম্পির খুব সম্মান বেড়েছে? তার সাজসজ্জার কথা আর না বলি!
আমরা মুভিকে প্রামাণ্য চিত্রের সাথে গুলিয়ে ফেলেছি। এই সিনেমার নির্মাতারা কখনোই বলে নাই যে তারা ঢাকা শহরের একটি নিখুঁত চিত্র আমাদেরকে দেখাবে; বড়ং তারা দেখাতে চেয়েছে একজন ভারতীয় ড্রাগ লর্ডের সাথে একজন বাংলাদেশী ড্রাগ লর্ডের যুদ্ধ, যেখানে একজন অস্ট্রেলিয় খলনায়ক থাকবে যে শুরুতে ভিলেনের মত কাজ করলেও শেষে গিয়ে নায়কে পরিণত হবে।
যারা এই ছবি নিয়ে অনেক উগ্র সমালোচনা করছেন, আমার ধারণা তাদের অনেকে ছবিটা দেখেনই নাই। আগে দেখেন, তারপর সমালোচনা করেন। আর সবচেয়ে বড় কথা, চামড়াটা আরেকটু মোটা করেন। দেশের সম্মান এত স্বস্তা না যে একটা সিনেমা এসে সেটাকে ভুলুন্ঠিত করতে পারবে।
ভাল থাকুন সবাই।

My Recent Publications

১। "এখন আরো বেশী কল্পকাহিনী পড়ুন"- জোসেফ স্টিগলিজ এর সাক্ষাতকার

https://www.prothomalo.com/onnoalo/article/1651163/%E2%80%98%E0%A6%8F%E0%A6%96%E0%A6%A8-%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A6%93-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A7%9C%E0%A7%81%E0%A6%A8%E2%80%99?fbclid=IwAR17Ki4xQ1n4f3Wc6w3lqaZLCyXXxAB3Atn1cTX8ffb-grgEkjNdSXcYxgg

১৬ এপ্রিল, ২০২০


২। "সবচেয়ে বড় বিপদ ভাইরাস নিজে নয়" - ইউভাল নোয়া হারারির সাক্ষাতকার

https://www.prothomalo.com/onnoalo/article/1653917/%E0%A6%B8%E0%A6%AC%E0%A6%9A%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%9C-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%A6-%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A7%9F?fbclid=IwAR0MX2GECcWRxACKMxNQaiwv1mbRR107nTrUAbUjTCNjIufKtFcyqCSSRdQ

৩০ এপ্রিল, ২০২০

৩। "আমার বাবা গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের কাছে চিঠি" 


২০ মে, ২০২০

৪। বাংলার শোরা, রহস্যময় ‘প্রকৃতির প্রেয়সী’  




৪ জুলাই, ২০২০

৫। ‘যুদ্ধগুলো আমাদেরকেই লড়তে হবে, এবং বেশিরভাগ সময়ে আমরা একাই থাকব’


৪ জুলাই, ২০২০