Thursday, July 01, 2021

Holy Artisan Remembered

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ কিছুদিন আগে 'অন দিস ডে' নামে একটি নতুন ফিচার যোগ করা হয়েছিল, যার নাম পরে পরিবর্তন করে পরে 'মেমরিজ' দেওয়া হয়। 


প্রতিদিন এই মেমরিজ ট্যাবটিতে ক্লিক করলে সেই দিনে বিগত বছরগুলোতে ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্ট, স্মৃতি ও ছবি দেখা যায়। 


আমার মত অনেকেরই বিগত দিনের ফেসবুকীয় স্মৃতিগুলো দেখতে আর শেয়ার করতে ভাল লাগে। 


তবে আজকের দিনটি ভিন্ন ছিল। এ দিনের স্মৃতিগুলো কেমন যেন। 


১ জুলাই তারিখটি আমাদের সবার জীবনে একটি কালো দিনকে মনে করিয়ে দেয়। ২০১৬ সালের সে দিনটিতে আমরা সপরিবারে ইফতার করতে গিয়েছিলাম গুলশান ১ ও ২ এর মাঝামাঝি, ১১৩ নং রোডে অবস্থিত 'গ্লাসহাউজ ব্রেসারি' নামের একটি মোটামুটি অখ্যাত রেস্তোরাঁয়। 


খাবারের মান ভাল হওয়া স্বত্বেও রেস্তোরাঁটি বন্ধ হয়ে গেছে। যেমন বন্ধ হয়েছে ৭৭ নং রোডের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁটিও। তবে দুটি রেস্তোরাঁ বন্ধ হওয়ার নেপথ্যের কাহিনী পুরোপুরি ভিন্ন। 


হলি আর্টিজানকে সব দিক দিয়েই বলা যেত 'দেশের মধ্যে বিদেশের' স্বাদ। পাঁচ তারকা হোটেল বাদে এটিই সম্ভবত ঢাকার একমাত্র রেস্তোরাঁ ছিল যেখানে 'অথেনটিক' ইউরোপীয় খাবার পাওয়া যেত। বিভিন্ন বেকারি আইটেমের পাশাপাশি এখানে সি-ফুড, স্প্যানিশ খাবার, যেমন পায়েইয়া, ইতালীয় পিৎজা, পাস্তা সহ আরও অনেক ধরণের ভিন্ন স্বাদের খাবার পাওয়া যেত।  


'চেক-ইন' যুগে প্রায় প্রতিদিনই দেখতাম কোন না কোন বন্ধু, সুহৃদ, সহকর্মী সেখানে যাচ্ছেন। 


যে বাসাটিতে রেস্তোরাঁটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, সেটি এর আগে একটি বাসাই ছিল। বিলাসবহুল এই বাড়ীটিতে এক সময় আমার এক সাবেক কর্মস্থলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তার পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি নিজ দেশে চলে যাওয়ার পর সেখানে হলি আর্টিজান প্রতিষ্ঠিত হয়। 


২০১৬ সালের মর্মান্তিক ঘটনাটির আগে মোট তিন বার সেখানে যাওয়া হয়েছিল। 


শেষবার গিয়েছিলাম আমার বড় মেয়ে (তখনও ছোট জনের জন্ম হয়নি) মিশেল ও তার মাকে নিয়ে।


২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কোন এক ছুটির দিনে তিনজন বেশ উপভোগ করেছিলাম 'দেশের মধ্যে বিদেশ' ব্যাপারটি। রেস্তোরাঁর ভেতরটি অনেক খোলামেলা ছিল। বাইরে সুদৃশ্য বাগান এবং অনেকখানি অব্যবহৃত জায়গা। এমনকি, তখনও দোতালায় পানাহারের ব্যবস্থাও পুরোপুরি চালু হয়নি। খোলা জায়গা পেয়ে মিশেল প্রচুর দৌড়াদৌড়ি করেছিল। ভেতরে দেশী-বিদেশী অনেক ভোক্তা ছিলেন; সম্ভবত বিদেশীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন। 





খাবারের দাম একটু বেশি হলেও স্বাদ ছিল অতুলনীয়। আমরা বড় দুজন মানুষ এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছিলাম যেত এত ভাল খাবার দেশের মাটিতে বেশ কিছুদিনের মাঝে খাওয়া হয়নি আমাদের। 


২০১৬ সালের সে ভয়াবহ সন্ধ্যায় টিভি চ্যানেলের ধারাভাষ্য শুনে আর বিভিন্ন ওয়েবসাইটের আপডেট পড়তে পড়তে বিস্ময়, দুঃখ, বিহ্বলতা, ভীতি--সব ধরণের আবেগ-অনুভূতির শিকার হচ্ছিলাম। হলি আর্টিজানে আক্রমণ শুরু হওয়ার অল্প কিছুক্ষণ আগেও আমরা ১১৩ নং রোডের সে রেস্তোরাঁয় ছিলাম। 


হ্যাঁ, সেদিনও দেশের মাটিকে বিদেশ বলে মনে হচ্ছিল। তবে এই ভাবনাটি সুখের ছিল না। বাসায় ফিরে টিভি ছাড়তে না ছাড়তেই জানতে পারলাম মর্মান্তিক ঘটনার বিস্তারিত। 


ভুল উচ্চারণের 'সোয়াত টিম',  টেরোরিজম, বম্ব স্কোয়াড, রেসকিউ মিশন, কমান্ডো হামলা, জঙ্গি--এসব বিদেশী শব্দ আর ধারণা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ ছিল না কোন দিনই। 


পাঁচ বছর চলে গেছে, সেতুর নিচ দিয়ে অনেক পানি চলে গেছে--কিন্তু সেদিনের ঘটনার সকল রহস্য কি উদ্ঘাটিত হয়েছে? মনে হয় না। অন্য অনেক কিছুর মত এই ভয়াবহ দিনটিও আমাদের মন থেকে মুছে গেছে। এক ভাইরাল ঘটনার পর আরেক ভাইরাল ঘটনা আমাদের মানসপটকে দখল করে নিয়েছে। 


সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, আবার যদি এরকম হয়?  


মানে আবার যদি এরকম কোন ঘটনা ঘটে, আমাদের সংশ্লিষ্ট বাহিনী ও কর্তৃপক্ষ কি সেটার সাথে মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত? নাকি দিনের অর্ধেক সময় ধরে সোয়াট না সোয়াত, সে বিতর্ক করে অশ্বডিম্ব উৎপাদনেই সময় কাটাবো?


আশা করি রূঢ়ভাবে এই প্রশ্নের উত্তর যেন আমাদের জানতে না হয়।