Saturday, October 31, 2020

Greta Thunberg's Speech

ভবিষ্যত প্রজন্মের সাথে প্রতারণা করার অভিযোগ এনে সুইডিশ পরিবেশবাদী কর্মী গ্রেটা থানবার্গ বিশ্ব নেতাদের এক হাত নিয়েছিলেন গত ২৩শে সেপ্টেম্বরে। তার মতে, বিশ্ব নেতারা জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর জন্য যথেষ্ঠ উপযোগী কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।





"আপনারা আমার শৈশব কে চুরি করেছেন, এবং স্বপ্নগুলোকে ধূলিসাৎ করেছেন ফাঁকা বুলি আউড়ে।" – নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ক্লাইমেট একশান শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতা প্রদান কালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন “আপনারা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছেন, আর তরুণরা আপনাদের এই বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপারে টের পেয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের সকল সদস্যদের দৃষ্টি এখন আপনাদের উপর, এবং আপনারা যদি এই ভুল পথে চলতে থাকেন, তাহলে আমরা কখনোই আপনাদেরকে ক্ষমা করবো না।“। এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য থানবার্গ পালতোলা নৌকায় করে উত্তর আমেরিকার পথে যাত্রা করেছিলেন গত মাসে।

ইউটিউবে থানবার্গের আত্মবিশ্বাসী এবং শক্তিশালী বকৃতাটি দেখে/শুনে খুবই চিন্তিত হয়েছি। আসলেও, আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মদের জন্য কি রেখে যাচ্ছি?

Friday, October 30, 2020

A Very Old Writeup

 Didn't even know that they published my translation of the Satyajit Roy story


http://monsoonletters.com/wp-content/uploads/2017/02/Issue-II-FEB-2008.pdf 


Surprisingly, the table of contents does not mention it! 

Thursday, October 29, 2020

নস্টালজিয়া ৩ঃ নিউজ পেপার




আমি স্কুলে থাকতে ডে শিফটে পড়তাম। বাসা থেকে বের হতাম ১১ঃ৩০ এর দিকে; আর ক্লাস শুরু হত ১২টায়। 

সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখতাম বাবা পেপার হাতে নিয়ে নাশতা খেতে বসেছেন। এই নিয়মের ব্যাতিক্রম হতে দেখিনি কোনদিন। মাঝে দুই একদিন বাবা ওয়াশরুমে থাকতে থাকতে পেপার দিয়ে যেত পেপারবয়, আর সেদিনগুলো ইদের মত লাগতো। 

অন্য কেউ হাতে নেয়ার আগে, নতুন পেপারের ভাজ খুলে সরাসরি ক্রীড়া পেইজে চলে যাওয়ার যে আনন্দ, সেটি ছিল অতুলনীয়। নিউজপ্রিন্ট কাগজের একটি অন্যরকম গন্ধ ছিল, আর তাকে ছোয়ার অনুভবটাও ছিল অনন্য। 

তবে এ আনন্দ হোত ক্ষণস্থায়ী। বেশিরভাগ সময়ই একটি বা দু'টি সংবাদ পড়তে না পড়তেই বাবা এসে পেপারখানা নিয়ে, অফিসে চলে যেতেন। সন্ধ্যের আগে আর সেই পেপার চোখে দেখা হোত না। 

ইতিমধ্যে দাদুর বাসায়ও পেপার চলে আসতো। আমাদের বাসায় রাখা হোত কিঞ্চিৎ আধুনিক মনষ্ক কোন পত্রিকা (প্রথমে আজকের কাগজ, তারপরে ভোরের কাগজ, এবং শেষাবধি প্রথম আলো), আর দাদু রাখতেন "দৈনিক বাংলা"। 

পেপার হিসেবে দৈনিক বাংলার আকর্ষণ কম ছিল, কিন্তু স্কুলের পথে রওনা হবার আগে একটি সুযোগ থাকতো পেপারটি হাতে নেয়ার। এই পেপারের মূল আকর্ষণ ছিল প্রতিদিন প্রকাশ হওয়া টারজান কার্টুন।  
আমরা পেপার পড়ার জন্য কেন এত উতলা ছিলাম? 

আমার কাছে ভাল লাগতো খেলাধূলার খবর গুলো। মোহামেডান ফুটবল ক্লাবের বিশাল ভক্ত ছিলাম। আব্বা এবং চাচারা সবাই। আমাদের বাসার ছাদে মোহামেডানের ফ্ল্যাগও ঝোলানো হয়েছিল একবার। নানা বাড়ীতে আবার সম্পুর্ণ ভিন্ন চিত্র ছিল--সেখানে আবাহনীর সমর্থক বেশি ছিল। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, দাবা,--সবরকম খেলার খবরই পড়তাম। 

একবার আজকের কাগজে (কিংবা ভোরের কাগজে) প্রতিদিন একজন করে রাজাকারের ছবি (কার্টুনিস্ট শিশিরের আঁকা ক্যারিকেচার) এবং তার কুকীর্তির বিবরণ থাকতো। খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতাম প্রতিদিন--আজ কোন রাজাকারের গল্প আসছে? সেই সিরিজের সর্বশেষ দিনের নিউজে কোন ছবি ছিল না, শুধু ছিল একটি টাইটেল "হ্যা, বিশ্বাস আছেন" এবং কিছু ভাসাভাসা বর্ণনা। সে যুগে, ব্যাপারটা বেশ সাহসিকতামূলক ছিল, তা বলাই বাহুল্য।   

এরপর আস্তে আস্তে সংবাদপত্রের কলেবর বাড়তে লাগলো। আসলো ক্রোড়পত্র, বিশেষ সংখ্যা, ইদ সংখ্যাসহ আরো অনেক কিছু। প্রথম আলোর আলপিন খুব প্রিয় ছিল। মজার মজার ব্যাঙ্গাত্নক লেখাগুলো মিস করি। 

এক পর্যায়ে ইংরেজী শেখার উদ্দেশ্যে বাসায় সপ্তাহে দুইদিন (শুক্র আর শনি) ডেইলি স্টার রাখা শুরু হল। মূল উদ্দেশ্য ছিল "রাইজিং স্টার্স" পড়া। আমার মনে আছে, ইংরেজী পত্রিকা পড়ে আমার শেখা প্রথম শব্দটি ছিল Lucrative।  

ইন্টার্নেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এখন আর সেভাবে পত্রিকা পড়া হয় না। এমনকি অনলাইন এডিশনও নিয়ম করে পড়া হয় না। 

বাসায় এখনো প্রতিদিন পেপার আসে। তরুণ পেপারবয় আজ প্রৌঢ় মালিক--বার্ধ্যক্যজনিত রোগে ঠিকমত হাঁটতে পারেন না, তাও দেখা হলে স্মিত হেসে বলেন "তোমার বাসায় একটা পত্রিকা দেই আগামী মাস থেকে?"। প্রতিবারই বিনম্র শ্রদ্ধায় অপারগতা প্রকাশ করি। 

যুব বয়সে মনে হোত একদিন নিজের বাসা হবে, নিজের মত পেপার রাখবো, আর কাউকে না দিয়ে একা একা পড়বো সারাদিন ধরে। 

কিন্তু এর মাঝে যুগ আর সময় এত পালটে যাবে, তা কে জানতো? 

#নস্টালজিয়া
পর্ব ৩ঃ নিউজপেপার 

Monday, October 26, 2020

My 40th

২০১২ সালে আমার বড় মেয়ে মিশেল আয়াত খান জন্ম নেয়, ২৩শে অক্টোবর--তার পিতার জন্মবার্ষিকীর ঠিক এক দিন আগে। সেই থেকে অক্টোবর মাসের এই দু'টি দিন আমার জন্য স্পেশাল। অনেকেই ভাবে, জন্মদিনের আর বিশেষত্ব কি? বিশেষ করে "বুড়া বয়সে"? আমি আসলে সেভাবে চিন্তা করি না। এই দিনটিকে ধরে নেই একটি বিশেষ দিন হিসেবে, যেদিন সুযোগ আসে জীবনকে উপভোগ করার, আর পেছনে ফিরে তাকানোর।


গতকাল আমার ৪০তম জন্মদিন পালন করলাম। সেলিব্রেশান তারও দুইদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে। পরিবারের অকৃত্রিম ভালবাসা এবং তৎপরতায় খুব ভাল গিয়েছে গত তিনটি দিন--আমার আর মিশেলের জন্মদিনের কল্যানে।


মিশেলের জন্য একটি ফিশ বোল এবং দু'টি গোল্ড ফিশ কিনে এনেছিলাম। ওর মা এনেছে ওর পছন্দ করা দুইটি "বিজ্ঞান বাক্স", যা খুবই চমৎকার উপহার বলে ধারণা করি। আমাদের শিশুকালে এরকম গিফট পেলে খুবই খুশী হতাম, তা বলাই বাহুল্য।



ফিশ বোলের গোল্ড ফিশ মিশেলের চেয়ে দু'বছর দশ মাস বয়সী মিরান্ডা (ইশাল) কে বেশি অভিভূত করেছে। সকাল বিকাল সে তাদেরকে "হ্যালো ফিশ, হাউ ডু ইউ ডু ফিশ? ওয়াট ইউ ডুইং ফিশ?" জাতীয় প্রশ্ন এবং সম্বোধন করে যাচ্ছে। অথ্যধিক খাদ্য প্রদানের কারণে দুই দিনেই ফিশ বোলের পানি খানিকটা ফিকে হয়ে গিয়েছে। তবে বাসায় এরকম এক জোড়া পোষ্য থাকলে সেটা অন্যরকম আনন্দের ব্যাপার। মিশেল ভালবাসে "আওয়ার নিউ ফ্যামিলি মেম্বার্স" দের নাম রেখেছে ম্যাগনোলিয়া এবং ডেইজি--লম্বা এবং কালো ফুটকি সমৃদ্ধ মাছটি ম্যাগনোলিয়া, আর অন্যটি ডেইজি।


২২ তারিখ রাত ১১ঃ৫৯ পর্যন্ত দুই শিশুকে জাগিয়া রাখা হয়েছিল বিভিন্ন ছলাকলায়। আমি ওদেরকে রাখছিলাম, আর উপরে ওদের মা, আমার মা এবং কাজিনদের নিয়ে বেলুন দিয়ে সুন্দর করে স্টেজ সাজাচ্ছিলো।


এরপর মিশেলের জন্য সারপ্রাইজ পার্টি হলো। চমৎকার একটি কেক কাটার মাধ্যমে ও অষ্টম বর্ষে পদার্পন করলো।


২৩ তারিখ দুপুরের দিকে সপরিবারে কেশচর্চা করতে গেলুম। দুই কন্যা ও তাদের মাতা ফারজানা শাকিলে গেল, আর আমি হাবিব'স এ। "ফ্যামিলি হেয়ারকাট" সেশান আর কি।


সেখান থেকে বের হয়ে আমার পছন্দের জাপানী খাদ্য যোগে লাঞ্চ করলাম। মেনুতে ছিল ক্যালিফোর্নিয়া মাকি রোল, এসর্টেড সুশি, ড্রাগন ফ্রুট স্মুথি (এটার সুদৃশ্য পিঙ্গল বর্ণ দেখে ইশালের খেতে ইচ্ছে করবে--এই আশায় অর্ডার দেয়া), চিকেন নানবান এবং জাপানিজ ফ্রাইড রাইস। চিকেন নানবানের নাম শুনে কেউ কেউ নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন যে আমরা "টোকিও এক্সপ্রেস" নামক দোকানে খেতে গিয়েছিলাম। আমি নিশ্চিত "মেয়োনেজ" দিয়ে রান্না করা এই চিকেনের রেসিপী কোন জাপানী ভদ্রলোকের মস্তিষ্কপ্রসূত নয়; বড়ং জাপানী কাউকে এহেন রান্না করতে বললে সে অপমানিত বোধ করার সমূহ সম্ভাবনা আছে বলেই আমার ধারণা।



জাপানী সুশী "কাচা মাছ" হলেও ঢাকায় প্রাপ্য সুশী ডিশগুলো কাচা হবার ধারেকাছেও না। কিছু কিছু অভিজাত রেস্তোরায় সাশিমি পাওয়া যায়, যা কিঞ্চিৎ কাচা।


এই লাঞ্চকে আমার জন্মদিনের উপহার হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল Nabila, কিন্তু সে প্রয়াস সফল হয় নি। এখনো আমি গিফটের জন্য অপেক্ষা করছি 


এরপর সেখান থেকে মিশেল ইশালের নানাবাড়ী গেলাম। সেখানে আমার গুণী শ্যালক Fatehin এর একক প্রচেষ্ঠায় সুমীজ হট কেক (who is this Sumi anyway?) থেকে আনা খুবই সুস্বাদু একখানা কেক এবং ক্র্যাবযুক্ত তৃপ্তিদায়ক নুডুলস সহযোগে কেক কেটে হ্যাপি বার্থডে টু মি করলাম।



এরপর রাতে বাসায় ফিরে আরেক সারপ্রাইজ। আম্মা আব্বার আয়োজনে পুডিং কেক এবং আমার অতিশয় প্রিয় খাবার সসেজ রোল ও আলুর চপ দিয়ে দ্বিতীয়বারের মত হ্যাপী বার্থডে করলাম। আম্মা জিজ্ঞাসা করেছিল কি গিফট চাই। মিশেলের জন্য ছবি আকার ব্রাশ ও অন্যান্য সরঞ্জাম কিনে দিয়েছে মা। আমি বলেছি আগামী মাসে বের হতে যাওয়া পাওলো কোয়েলহোর "দ্যা আর্চার" বইটি কিনে দিলেই চলবে।




এভাবে প্রকৃত জন্মদিন আসার আগেই দুইবার জন্মদিন হয়ে গেল!


২৪ তারিখ ঘুম থেকে উঠলাম দেরী করে, আয়েশী ভঙ্গিতে। অবশ্য করোনা পরবর্তী সময়ে প্রায় প্রতিদিনই রাত জেগে কাজ করে সকালে দেরী করে ওঠা হয়। ভাবলাম ৪০ এ পা দেয়ার দিনটি কিভাবে উদযাপন করা যায়। নাস্তা করেই বসলাম দু'টি বই নিয়ে। উলটে পালটে সারাদিনে পড়লামঃ


যদ্যপি তোমার গুরু - আহমদ ছফা

Astrophysic for People in a Hurry - Neil deGrase Tyson


দু'টি বই দুই ধরণের। বিষয়বস্তু পুরোই এসপার ওসপার। যদ্যপি তোমার গুরু বইটি সাত দিন ধরে পড়ছি। এর আগের দিন পড়ে শেষ করেছিলাম বিটলস এর একটি আত্মজীবনী--এই বইটি প্রায় ১৩০০ পাতার বিধায় পড়তে অনেকদিন সময় লেগেছে।


আমি এর আগে আহমদ ছফার কোন বই পড়িনি। সত্য বলতে গেলে, বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলা বই পড়া হচ্ছে না। আগে, প্রতি বছর বইমেলা থেকে একগাদা হুমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবালের বই কিনে আনতাম; আজকাল আর তা করা হচ্ছে না। আর ইংরেজী বই পড়ার নেশায় বাংলাকে অবজ্ঞা করা হচ্ছিল। এই অসাধারণ বইটির মাধ্যমে পুনরায় বাংলা পড়ার চর্চাটি ফিরিয়ে আনলাম ৪০তম জন্মদিনে। "When was the last time you did something for the first time?" -- প্রশ্নের একটি উত্তর অন্তত হাতে জমা থাকলো।


টাইসনের বইটির মাত্র ২০ পাতার মত পড়া হয়েছে। যেহেতু এটি বিজ্ঞানচর্চার বই, খুব সতর্কতার সাথে পড়তে হচ্ছে। এই ভদ্রলোকের নাম অনেকেই না জানলেও তাকে নিয়ে বানানো ট্রলটি আমরা মোটামুটি সবাই দেখেছি।

বইটি বেশ আগ্রহোদ্দীপক; যারা জীবনেও এস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে পড়েনি, বা এ ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ (আমার মত), তাদের জন্যেও বইটি উপযোগী।


দুপুরে আবারও সারপ্রাইজ। আম্মা কাচ্চি বিরিয়ানী রান্না করেছেন, আর সাথে ছিল ডিম ভুনা এবং সাবার বানানো সুস্বাদু রায়তা এবং কোকা কোলা। খুবই তৃপ্তি করে খেলাম। চাচী, ফুফু ও এসেছিলেন। কাজিনরা সবাই আসতে পারেনি। কানাডা আর অস্ট্রেলিয়া থেকে ফ্লাইট কম আসতেসে এখনো।


এ সবের মাঝে এসেছে হাজার হাজার জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ফোন কল, ভিডিও কল, ফেসবুক কল, ফেসবুকের ইনবক্স, ওয়াল, গ্রুপের পোস্ট, Whatsapp--ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য উইশের নিচে চাপা পড়ে গিয়েছি প্রায়।


বেশিরভাগ লিখিত উইশের উত্তর দিতে পারিনি অদ্যবধি, তবে আশা করছি সবাইকে আলাদাভাবে ধন্যবাদ জানাতে পারবো।


এখানে একটা গণ ধন্যবাদ দিয়ে দেই!


ধন্যবাদ আমাকে মনে রাখার জন্য। আমি প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞ। যদি কোন কারণে কারও শুভকামনার উত্তর দিতে ভুলে যাই, তা হবে অনিচ্ছাকৃত।


আমার প্রিয় গায়ক জন লেনন তার বন্ধু ও বিটলস ব্যান্ডের সহকর্মী রিংগো স্টারের জন্য একটি গান লিখেছিলেন। ততদিনে ব্যান্ড ভেঙ্গে গিয়েছে, আর চারজন সদস্যই নিজের মত করে সলো ক্যারিয়ার গড়ায় মন দিয়েছেন। রিংগো ছিলেন ব্যান্ডের ড্রামার ও একজন নিপাট ভালমানুষ--বাকি সবার সাথে একমাত্র তারই শেষাবধী সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কটি টিকে ছিল। বিভিন্ন কারণে বাকি তিনজনের মধ্যে মোটামুটি দা কুমড়া সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল, যার কারণেই ব্যান্ড ভেঙ্গে যাওয়া।


জন ভাবলেন রিংগোর ক্যারিয়ার কে একটু এগিয়ে দেই। একটা গান লিখে দেই তার জন্য! তিনি লিখলেন "লাইফ স্টার্টস এট ফরটি" (জীবন শুরু হয় চল্লিশ বছর বয়সে) নামের এই গানটিঃ


They say life begins at forty
Age is just a state of mind
If all that's true
You know that I've been dead for thirty-nine


তারা বলেন জীবন শুরু হয় চল্লিশে
বয়স, সে তো শুধুই এক মনের ভাব
এটাই যদি হয় সত্য
তবে তো আমি উনচল্লিশ বছর ধরে বেঁচে মরে আছি


এই গান লেখার অল্প কিছুদুন পরেই, ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখে জন লেনন নিহত হন আততায়ীর গুলিতে। ৪০ এ আর নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেননি তিনি।


তখন আমার বয়স ছিল ১ মাস ১৪ দিন। আমি আরো ১৫-১৬ বছর পর টের পাই যে আমার প্রিয় গায়ক আমার জন্মের প্রায় সাথে সাথেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।


জনের মৃত্যুতে রিংগো এতটাই শোকাতিভূত হয়েছিলেন যে তিনি আর এই গানটি রেকর্ডই করেননি। বহু বছর পর জনের নিজের একটি হোম রেকর্ডিং খুঁজে পাওয়া যায়, যেটা পরে একটি সংকলনে প্রকাশ করা হয়।
এভাবে খাওয়া দাওয়া, পরিবারের সাথে সময় কাটানো এবং বই পড়ার মাধ্যমে নতুন যুগে পদার্পণ করলাম। তেমন কোন মাইলফলক নয় এটি, নয় কোন অর্জনও--কিন্তু তারপরেও, ৪০ বছর বয়সে আমার চিন্তাভাবনা ও ধ্যানধারণা কেমন ছিল সেটার একটি প্রতিচ্ছবি হিসেবে এই লেখাটা লিখে রাখলাম।


প্রথমে ভাবসিলাম নিজের একটা ছবি দিয়ে লিখে দিব নচিকেতার এই লাইনগুলোঃ


কেউ বলে বুড়ো ভাম
কেউ বলে পাজি
কেউ বলে এইবার
বেটা মরলেই বাঁচি


কিন্তু ব্যাপারটা চিন্তা করে হাসি পেল, তাই সেরকম কিছু না করে এই লেখাটা লিখলাম। ধৈর্য্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।


২৫শে অক্টোবর, ২০২০
#ishtiaq_radical

Saturday, October 24, 2020

Ishtiaque Khan's Reviews > The Beatles: The Biography

The Beatles: The BiographyThe Beatles: The Biography by Bob Spitz
My rating: 5 of 5 stars

This book is a must read for any who has an interest in "not so arguably" the most famous band, ever. It's a big book. Though the narrative part ends somewhere around 1100 pages, there's another, additional 300 pages of photographs, anecdotes, bibliography, links and a lot more.

As per my reading experience, I can divide the book in to three parts. First, the early years. This is where we get to know about all the people and things that played a pivotal role in the lives of the four Beatles. It's not just four guys getting together and making magic, it was a long, and often painful journey, filled with challenges and creative problem solving.

In the mid part, their success as a band is highlighted, e.g. the phenomenon called "Beatlemania" is described in detail. This is perhaps the most well known part of the Beatles history. Here, too, we get a lot of fine details that are a treat for any die hard Beatlefan.

Last, but not the least, the final part talks about how the band reached the zenith, and then slowly started to become a dysfunctional unit and experienced decline; thanks to the unique, personal issues faced by each of the Beatles. This part is also quite well known, but the intermingled nature of their issues have never been dissected like this before.

Even for a die hard fan like myself, the first portion of the book seemed a bit challenging to read on. In that part, too many characters are introduced and talked about, and it often seemed that the lives of other people got more highlighted than the Beatles themselves.

However, once you manage to read through that part, you will soon understand the importance of those people in the the lives of the Beatles, and the earlier portion makes full sense.

Once you finish reading the book, you will acquire a different perspective on the music and the lives of the Beatles, that is ensured. This is the first full fledged Beatles biography I read; despite of being a big fan since 1996, and I am now looking at the band in a new light.

Many songs, tunes and lyrics now have different, and new meanings to me. While I was reading the book, whenever the songs were mentioned, they started getting played in my mind. That is perhaps the biggest fun part of reading about music and musicians you love. I also found about many great musicians from the olden times; people who influenced the Beatles. For example, Fats Domino, Tony Sheridan, Cilla Black and many others.

Really enjoyed it, and this book made me curious about other, similar books about bands and their careers.



View all my reviews

Thursday, October 22, 2020

নস্টালজিয়া পর্ব ২ঃ রেডিও

"আর মাত্র তিন রান দরকার। ব্যাট হাতে ক্রিজের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন বাংলাদেশ দলের বর্ষীয়ান ও অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। অপর প্রান্ত থেকে দৌড়ে এসে বল ছুড়লেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। কব্জির মোচড়ে ব্যাট ঘুরিয়ে চারটি রান! বাংলাদেশ জিতে গেল। "


"বোলার তার ট্রাউজার খুলে আম্পায়ারের হাতে দিলেন। এবার তিনি দৌড় শুরু করলেন বল করার জন্য"


আমরা বড় হয়েছি রেডিওতে এসব আজব ধরণের ধারাভাষ্য শুনে।


আজকাল গাড়ীতে, মোবাইলে, ইন্টার্নেট ব্রাউজারে--সব খানে রেডিও সহজলভ্য, আর আছে অসংখ্য স্টেশান। এফ এম রেডিওর আগ্রাসনে আমরা ভুলেই গিয়েছি যে আগে বাংলাদেশ বেতার বা রেডিও বাংলাদেশ নামক একটি জিনিস ছিল, যা আমরা ছোট ছোট সাদা কালো রেডিও কিংবা ট্রাঞ্জিস্টারের মাধ্যমে শুনতে পেতাম।


রেডিও কে আবিষ্কার করেছেন? মার্কোনি না ম্যাক্সওয়েল? সেটা নিয়েও একধরণের "প্র্যাংক" এর শিকারও হয়েছি ছোটবেলায়। ভুলে "মার্কোনি" বললেই প্রশ্নকর্তা এসে "কনুই" দিয়ে গুতা মারার চেষ্টা করতো, তাই ভুল উত্তর হলেও ম্যাক্সওয়েল বলাই শ্রেয় ছিল।


রেডিওতে আমার প্রিয় অনুষ্ঠান ছিল "ওয়ার্ল্ড মিউজিক", যা প্রতি শুক্রবার দুপুরবেলায় হোত। খুবই চমৎকার ইংরেজী উচ্চারণের দুইজন আরজে সেই অনুষ্ঠানটি পরিচালণা করতেন, আর সেখান থেকে আমরা শুনতে পেতাম বিদেশী শিল্পীদের অনবদ্য পরিবেশনা। খাতা কলম নিয়ে বসতাম; যে গানগুলো ভাল লাগতো, সেগুলোর নাম টুকে রাখতাম; আর পারলে দুই এক লাইন লিরিক্সও। বলাই বাহুল্য, সে যুগে ইন্টার্নেট বলে কোন বস্তুর অস্তিত্ব ছিল না।


মনে পড়ে প্রিয় গায়ক মাকসুদের উদাত্ত কন্ঠের সুরেলা হাহাকারঃ

"মাঝি তোর রেডিও নাই বইলা জানতেও পারলি না
আইতাছে ভাইঙ্গা এত বড় ঢেউ
সারা বাংলাদেশ জানলো মাঝি
তুই তো জানলি না রে।"


রেডিও না থাকার কারণে ১৯৯১ সালে অনেক মাঝি, যারা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরেতে যেত নৌকায় করে, জানতে পারেনি যে একটি ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে বঙ্গোপসাগরের উপকূল ধরে। সে ঝড়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সরকারী হিসেব মতে ১৩৮,৮৬৬ জন মানুষ নিহত হয়েছিলেন সে ঝড়ে, এবং প্রায় ১.৭ বিলিয়ন ইউ এস ডলার পরিমাণ সম্পত্তি বিনষ্ট হয়েছিল।




আমরা দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঘরে ব্যাটারী চালিত ছোট রেডিও শুনেছি। বিশেষ করে লোডশেডিং এর সময়ে, যখন টিভি দেখা যেত না। তখনো মোবাইলের সাথে রেডিও সংযুক্ত থাকতো না, আর মোবাইল ফোনও সহজলভ্য ছিল না।

দিন বদলিয়েছে। রেডিও বলতে আমরা যে জিনিস বুঝতাম, আজকালকার মানুষ অনেকে সেই বস্তু চোখেও দেখেনি, দেখবেও না হয়তো।


তারপরেও, বেঁচে থাকুক পুরনো স্মৃতিগুলো।

ছবিঃ গুগল; একজন বাংলাদেশী কৃষক রেডিও শুনছেন।

#nostalgia
পর্ব ২

নস্টালজিয়া ১ঃ রিকশার পেছনের হারিকেন




আশির দশকে প্রতিটি রিকশার পেছনের দিকে একটা করে হারিকেন ঝুলানো থাকতো। হ্যারিকেন ঝড়ের কথা বলছি না। আমি আলোর উৎস হারিকেনের কথা বলছি।

তখনো ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় নিয়ন আলোয় উদ্ভাসিত স্ট্রিট ল্যাম্পের প্রচলন ঘটেনি সেভাবে। বেশিরভাগ জায়গায় ছিল পুরনো, সাদা আলোর ল্যাম্প, আর সেগুলোও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কল্যাণে প্রায়শই বিকল থাকতো।
সে কারণে সন্ধ্যার পরে ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় একটি ভুতুড়ে আলো আধারী পরিবেশ দেখা যেত। সেই বাংলা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট আবহের মাঝে আলোর দিশারী হিসেবে হারিকেনযুক্ত রিকশা দেখা যেত অনেক দূর থেকে।
হঠাত দেখলে মনে হোত হাওয়ায় ভেসে ভেসে হারিকেন আসছে, কারণ সেই নিভু নিভু আলোতে রিকশাটাও ভাল করে দেখা যেত না।
অনেক খুজেও গুগলে ভাল কোন হারিকেন রিকশার ছবি পেলাম না।

Tuesday, October 13, 2020

সেলফিজ

 সেলফিজ

(বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে)






#৭৩৩

শেষ কয়েকটা ছবির মধ্যে একটায় আমাকে দৌড়াতে দেখা যাচ্ছে। আমি রাস্তার মধ্য দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি, আর চারপাশে আধার নেমে এসেছে। রাস্তার ল্যাম্পগুলো নিভু নিভু, আর সেগুলো থেকে এক ধরণের অশুভ, হলদেটে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। আমার হৃদপিন্ড এত জোরে ধুকপুক করছে যেন মনে হচ্ছে ফেটেই যাবে যেকোন মুহুর্তে। আমি মুখে এক ধরণের তেতো, বিচ্ছিরি স্বাদ পাচ্ছি। আমি প্রাণপনে ছুটছি; আমাকে এখান থেকে পালাতেই হবে—যে কোন উপায়ে।

আকাশে ইদের মত বাকানো চাঁদ উঠেছে। চাঁদের মুখমন্ডল ব্রণের দাগে ভর্তি। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে; দেখে মনে হচ্ছে যেন বিকৃত ছুরিটি মাথার উপরে দাঁড়ানো। তারা আমার পিছে পিছে দৌড়ে আসছে, আর আমাদের মাঝে দূরত্বটা কমে আসছে। এর জন্য তাদেরকে খুব বেশি কষ্টও করতে হচ্ছে না। তারা আমার চারপাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে; আমার দৌড়ানোর গতির সাথে নিজেদের গতিকে একাত্ম করে ফেলেছে তারা, অনায়াসেই। তারা আমার কানের কাছে ফিসফিস করে নাম ধরে ডাকছে “রিতা, রিতা”। একটু দুরেই আমাদের পুরনো খেলার মাঠের জং ধরা লোহার গেইট। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন সেখানে দোলনায় দুলতাম। তারা আমাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে। আমি জানি না বাচ্চারা এখনো দোলনাগুলো ব্যবহার করে কি না। আমি গেটের ভেতর দিয়ে ঢুকতে গিয়ে হোঁচট খেলাম, কিন্তু তবুও কোনমতে খেলার মাঠে ঢুকে গেলাম। আমার এখন দৌড়ে পালানোর কথা, কিন্তু আমি দাঁড়িয়ে গিয়ে একটি ছবি তুল্লাম । নিজেকে সংবরণ করতে পারলাম না; একটা ছবি নিলাম যেটাতে শুধু আমি, গেইট এবং বাকানো চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আমার পেছনে আর কেউ নেই।

রিতার সহপাঠীদের আলাপ

“আমি একটা ঘটনা শুনলাম একটা মেয়ের ব্যাপারে, যে কয়েক মাস আগে পাগল হয়ে গিয়েছিল”।
“কোন মেয়ে?”
“তার নাম ছিল রিতা, আর সে আমার সাথে একই ক্লাসে পড়তো। একই ক্লাশে থাকা স্বত্তেও তার সাথে আমার খুব একটা দেখা সাক্ষাত হয়নি কখনোই। একদিন তারা তাকে মৃত অবস্থায় খুঁজে পায় পুরনো খেলার মাঠের পাশের রাস্তায়। রাতের বেলায়। এটা কয়েক মাস আগের ঘটনা।
“আমি খুবই দুঃখিত।“
“ব্যাপার না। আমি আসলে তাকে খুব বেশি ভাল করে চিনতাম না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমি তাকে যখন দেখি, তার কয়েক মুহুর্তের মধ্যেই তারা বডি ব্যাগের চেইন আটকে দেয়, আর লাশ নিয়ে চলে যায়। সেই মুহুর্তে, তার চেহারাটা ছিল আমার দেখা সবচেয়ে ভয়ংকর দৃশ্য। দেখ, ঠিক চেইন আটকে দেয়ার আগমুহুর্তে, আমি একটা ছবি তুলেছিলাম। এটাই সেটা”।
“… কি জঘন্য!” (ছবি দেখে)
“আমি এই ছবি ফেসবুক বা অন্য কোথাও দেইনি”
“এগুলা কি চোখ?”
(নিরবতা)
“তার মুখ এরকম হয়ে আছে কেন?”
“আমার ধারণা সে চিৎকার করছিল। পুলিশ তাকে যখন খুঁজে পেয়, তখনো সে তার ফোনটি আকড়ে ধরে রেখেছিল, যদিও তার পুরো শরীর দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছিল। আমার চাচাতো ভাই আজমল ফরেনসিক ল্যাবে কাজ করে। সে বলেছে যে মেয়েটার ফোনে হাজার হাজার ছবি পাওয়া গিয়েছে। ভাবতে পারো! হাজার হাজার ছবি!”
(নিরবতা)
“আজমল বল্লো যে পুলিশ তার শেষ কয়েক মাসের জীবনের প্রতিটি মুহুর্তেকেই পুনর্বিন্যস্ত করতে পেরেছে সেসব ছবিকে অনুসরণ করে।। বেশিরভাগই ছিল সেলফি। তবে কিছু ছবি খুবই বিচিত্র ধরণের। আজমলের ধারণা হয়তো কেউ সেগুলোকে ফটোশপ দিয়ে এডিট করেছিল। শেষের দিকের কিছু ছবির কোন আগামাথা নেই”।
“এসবে কি তার মৃত্যু রহস্য উদ্ধারের ক্ষেত্রে কোন লাভ হবে?“
“মনে হয় নয়া”
(নিরবতা)
“সবচেয়ে উদ্ভট ব্যাপারটা কি ছিল, জানো?”
“কি?”

“এই ঘটনার কয়েকদিন পরে আমি আগোরা সুপারশপে গিয়েছিলাম। হঠাত মনে হলো, আমি রিতাকে দেখলাম। সে আটা ময়দার শেলফগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, আর ফোনে কথা বলছিল। তার হাতে এক প্যাকেট কুড়কুড়ে চিপস ছিল। আমি তাকে দেখে অসুস্থ বোধ করলাম। মানে, এটা তো সম্ভব না, তাই না? তারপর মনে হলো, সে জানে যে আমি তার খুব কাছেই দাঁড়িয়ে আছি। সে হঠাত ঘুরে আমার দিকে তাকালো, আর একটা হাসি দিল। তার সাদা দাঁতগুলো কেমন জানি এবড়োথেবড়ো দেখাচ্ছিল, আর তার চুলগুলো জট বাধা ছিল। সে দেখতে বেশ সুন্দরী ছিল। কিন্তু যখন সে আমার দিকে সরাসরি তাকালো, তার চোখগুলো দেখে একদম ডিমের খোসার মত লাগলো। চোখের মণিও দেখা যাচ্ছিল না, আর তার চোখে কোন পাপড়ীও ছিল না। চোখের জায়গাটা ছিল ধবধবে সাদা রঙের এবং চ্যাপ্টা, আর সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল”।


“তুমি এই পুরা গল্পটা বানিয়ে বলছো। আমাকে ভয় দেখানোর জন্য”।
“আমার হাতে কোকের ক্যান ছিল। সেটা হাত থেকে পড়ে গিয়ে ফেটে গিয়েছিল, আর চারদিকে ছড়িয়েছিটিয়ে গিয়ে একটা বিশাল গ্যাঞ্জাম তৈরি হয়েছিল। আমি নিচু হয়ে বসে ক্যানটা তুলতে গেলাম। এরপরে উপরে তাকিয়ে দেখি সে উধাও।

“কোকের দাম দিয়েছিলে?”
“হ্যা, স্ন্যাকস এর এরিয়া থেকে নগদ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। কোক খেতে খেতেই শপিং করছিলাম। এই ঘটনার কয়েকদিন পরে রিতাকে কবর দেয়া হয়েছিল। আমি সেখানে যাইনি। কারণ, ঐ যে বললাম, আমি তাকে খুব ভাল করে চিনতাম না।“

#১
ঠিক ফোন কেনার পরের ঘটনা এটা। আমি সেটা কিনেছিলাম ইস্টার্ন প্লাজার একটি দোকান থেকে। আজকাল কেউ সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল খুব একটা কেনে না, আর ইস্টার্ন প্লাজাতেও খুব বেশি মানুষ যায় না। অনেক নতুন নতুন, বড় বড় মার্কেট খুলেছে—কে যাবে এই পুরনো মার্কেটে? সে যাই হোক, আমি মার্কেটে ঘুরতে ঘুরতে হঠাত এই দোকানটা খুঁজে পেলাম। এটা ছিল গ্রাউন্ড ফ্লোরের একদম শেষ মাথায়। এ জায়গায় এর আগে কখনো এরকম কোন দোকান চোখে পড়েনি। এ পাশটায় এসেছিও কম। দোকানের বাইরের সাইনবোর্ডে বড় বড় করে লেখা ছিল “পূর্বে ব্যবহৃত পণ্যের সম্ভার”।

একদম শেষ মাথার এই দোকানগুলো ধুলোয় ধূসরিত এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন। পাশেই একটা শিশুদের কাপড়চোপড়ের দোকানে, যেখানে কোন শিশুর পা পড়েনি বহু বছর ধরে। আরেকটা দোকান দেখলাম যেখানে নিরামিষাশীদের জন্য বিভিন্ন রকমের খাদ্য উপাদান বিক্রী হচ্ছে, এবং অবশেষে, একটা ভিডিও ক্যাসেটের দোকান যেটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমি দোকানটিতে ঢুকে থমকে গেলাম। সেখানে ছিল বিভিন্ন ধরণের অদ্ভুত জিনিসপত্র; যেমন ঘড়ির কাটা সম্বলিত যন্ত্রপাতি, শিহরণ জাগানিয়া ভুডু পুতুল ও বিকৃত এবং বিকলাঙ্গ পশুদের চেহারা সম্বলিত পেইন্টিং, যা দেখলে রুপকথার বইয়ের রাক্ষসদের কথা মনে পড়ে যায়। প্রথমে দোকানে কাউকে চোখে পড়লো না, কিন্তু আমি কাশির শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখলাম কাউন্টারের পেছনে একজন অদ্ভুত, বুড়ো মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। সে যেন হঠাত ভোজবাজির মত উদয় হলো। তার চেহারাটি ছিল কিছুটা ঘোড়ার মত, লম্বাটে ধরণের, আর তার চোখগুলো ছিল ঢুলু ঢুলু। হঠাত করে তাকে দেখে মনে হলো যেন তাকে ছায়া থেকে ধার করে এনে মানুষের মত রুপ দিয়ে দাঁড়া করিয়ে দেয়া হয়েছে—এখানে তার আসলে থাকার কথা না। সে আবারও গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো “কি লাগবে আপা?”

আমি বললাম “এইতো, দেখছি একটূ”, আর সাথে সাথে তার চেহারায় একটা রাগের ছাপ ফুটে উঠলো। আমি খানিকটা বিব্রত হলাম।
“আপনি অনেক সুন্দর”, সে হঠাত বলে উঠলো, আর আমার গালদু’টো পাকা টমেটোর মত লাল হয়ে উঠলো। আমি বোকার মত মাথা নাড়ালাম দুইপাশে। সে আবার বলে উঠলো “না, আসলেই”।
“ধন্যবাদ”, আমি বললাম।

“এই নিন”, সে বল্লো। কাউন্টারের পেছন থেকে সে একটা জিনিস বের করে আনলো, যেটা দোকানের আর সব পণ্যের মাঝে পুরোই বেমানান; এটি ছিল একটি সম্পূর্ণ নতুন মোবাইল ফোন।
সে বল্লো “আপনার আছে এটা?”
“কি? ফোন?”
“এটার মত একটা ফোন”।
“না, না”, আমি বললাম। “আমার পুরনো মডেলের একটি আছে”, বলে তাকে আমার পুরনো স্যামসাং ফ্লিপ ফোনটা দেখালাম।
“তাহলে এটা নিয়ে যান। আমার তরফ থেকে”।
“কি বলছেন। আপনি আমাকে এটা ফ্রি তে দিচ্ছেন?”
“না”, সে বিরক্তি সহকারে বলে উঠলো, আর আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন আমি একটা গন্ডমূর্খ। “অবশ্যই ফ্রি না, আমি এখানে দানছত্র খুলে বসি নাই”।
“ইয়ে মানে…”
“তবে খুব স্বস্তায় ছেড়ে দেব”, এটা বলে সে ফোনটা আমার দিকে ঠেলে দিল।
“নিয়ে নিন। এই সুযোগ আর পাবেন না”।

টাচ স্ক্রিণের উপর সোয়াইপ করলাম, আর আইকনগুলো আমার দিকে জ্বলজ্বল করে তাকিয়ে রইলো। আমি সেই ভয়ানক লোকটির কথা আর মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম না; সে একটা দাম বল্লো, আর আমি ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে তার হাতে দিয়ে দিলাম। সে আবার বল্লো যে আমি দেখতে অনেক সুন্দর, কিন্তু আমি নিজেকে কখনো সুন্দরী ভাবিনি। মানে, আমি আসলে এই ব্যাপারটা নিয়ে কখনো তেমন একটা ভাবিইনি। আমি দোকান থেকে বের হয়ে এলাম, আর হঠাত আমার চারপাশে অনেক আলো দেখতে পারলাম। জোরালো বাতাস বইতে শুরু করলো। আমার আঙ্গুলগুলো চুলকাচ্ছিল। আমি ফোনটা আমার সামনে ধরে ক্যামেরা বাটনে চাপ দিলাম, আর মনে হল যেন কোন কিছু আমার ভেতরে প্রথমবারের মত জেগে উঠলো, আর কোন কিছুর মৃত্যু ঘটলো—আমি আসলে ব্যাপারটাকে সঠিকভাবে বর্ণনা করতে পারছি না। সেটার দরকারও নেই। আমি বাটনে প্রেস করলাম, আর ছবি উঠলো। সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

#৭৩৬
শেষ ছবিতে আমি মৃত।

#১১২
মজার ব্যাপার হলো, আমি সেই একই জায়গায় ফিরে গেলাম কয়েকদিন পর, আর দেখলাম সেখানে কোন দোকানের চিহ্নই নেই। সেই চিরাচরিত ফুচকা চটপটির দোকানটিই আছে সেখানে, এবং কাউন্টারের মামা আমার দিকে বিচিত্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার পাগলামি দেখছে। ছবিতে আমি জিভ কামড়ে ধরে আছি, আর আমাকে দেখে দুঃচিন্তাগ্রস্থ মনে হচ্ছে। আমি ছবি তুলেই যাচ্ছিলাম। আমাকে ছবি তুলতেই হবে, কিন্তু ছবিগুলো আসতে আসতে মিথ্যা বলা শুরু করেছিল।

#৪৪৭
“ব্যাপারটা অসাধারণ ছিল, রিতা!”, সজীব বলে উঠলো। তাকে দেখে খুবই আনন্দিত মনে হচ্ছিল। সে আমার দিকে দন্ত বিকশিত হাসি দিল।
আমি বললাম “কি নিয়ে কথা বলছো?”
আমি একটা ছবি তুল্লাম। আমি ওর রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে, চেহারায় বিরক্তির ছাপ। তার জানালার পাশে জারবেরা ফুল রাখা। ফুলগুলোর উপরে যেভাবে আলো পড়েছে, তা দেখতে ভাল লাগছেনা। কেমন যেন একটি অসুস্থ ভাব, আর রোদটাও কেমন জানি বিবর্ণ।
“গতকাল রাতে! তুমি অসাধারণ ছিলে!”, সজীব বলতে লাগলো। “আমি এর আগে কখনো…”, বলে সে লজ্জা পেল। “তুমি কোথায় শিখলে এসব?”, সে ফিসফিস করে বল্লো। বলে সে আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি তার গায়ের তীব্র গন্ধ পেলাম; ঘাম ও যৌনতায় ভরা। আমি তাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিলাম। আমার চোখ আদ্র হয়ে যাচ্ছিল, যদিও আমি কাদতে চাইছিলাম না। আমি বলে উঠলাম “কিন্তু আমি তো গতকাল এখানে ছিলাম না, সজীব। তোমার মনে নেই? আমি শেলীর সাথে সিনেমা দেখতে গেলাম সিনেপ্লেক্সে, আর তারপর রাতে ওর বাসায় থাকলাম।“এর উত্তরে সে বলে উঠলো “তুমি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছো?”, আর আমি কাদতে লাগলাম। তখন সে আবার আমার দিকে এগিয়ে এল, আর আমি তাকে সরিয়ে দিয়ে দৌড়ে তার বেডরুমের দিকে চলে গেলাম। সেখানে এবড়োথেবড়ো বেডশিট দেখতে পেলাম, আর আয়নায় স্কচ টেপ দিয়ে আটকানো একটা ছবি দেখতে পেলাম—সেটি সম্ভবত গতকাল রাতে তোলা, এবং সদ্য প্রিন্ট করা। সেখানে আমি ক্যামেরার জন্য পোজ দিয়েছি, সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায়, এবং আমার একটি হাত উরুতে আর আরেকটি হাত কোথাও দেখা যাচ্ছে না। অন্য হাতটি ছবিতে নেই, কিন্তু স্পষ্টতই তা সেলফি তোলার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। ছবিতে আমি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিচ্ছি, আর আমার দাঁতগুলো হিংস্র শ্বাপদের মত লাগছে। আমার চোখগুলো যেখানে থাকার কথা, সেখানে কিছুই নেই। আমি আয়না থেকে ছবিটা টান দিয়ে নামালাম, আর ছিড়ে টুকরো টুকরো করলাম। ছেড়া টুকরোগুলো আমার পায়ের কাছে পড়ে রইলো।

#৭৩
বাবা, মা আর সজীবের সাথে ডিনার করছি। আমরা সবাই হাসছি। সজীবের হাত আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে, আর সে বোকার মত একটা হাসি দিচ্ছে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে, আর আমিও একইভাবেই হাসছি। আমার মনে হচ্ছে আমার মধ্যে যেন এক ধরণের আগুন; যা আমাকে ভেতরে আর বাইরে থেকে পোড়াচ্ছে। ফিল্মের নেগেটিভের উপর আলো পড়লে যেরকম হয়, সেরকম একটা অনুভূতি; আর তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে, সব কিছুকে ছুয়ে দিচ্ছে আলো দিয়ে।

#৫০১
আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, কিন্তু ছবিটার সব কিছুই ভুল। এটা আমি সজীবের বাসা থেকে বের হয়ে নিজের বাসায় যাওয়ার পরে তোলা। আমি ক্যামেরার বাটনে চাপ দেয়ার সময় কাদছিলাম, কিন্তু ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমি হাসছি।

#২১০
ছবিটা একটু ঘোলা, কারণ আমি দৌড়াচ্ছি। আমি রাস্তায়, এবং একটা মানুষ আমাকে তাড়া করছে।

#২০৯
ঘোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমি লোকটার দিকে পিঠ দিয়ে তাকিয়ে আছি অন্যদিকে, কিন্তু সে তখনো কথা বলে যাচ্ছে।

#২০৮
তার গলার স্বর অস্থির এবং উত্তেজিত, এবং সে চিৎকার করে করে আমার ফোনটির ব্যাপারে কথা বলছে। আমাদের দুইজনকেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আর এক মুহুর্তের জন্য তার চেহারায় একই সাথে কামাতুর ভাব এবং প্রচন্ড ভীতি দেখা যাচ্ছে।

#২০৭
একজন মানুষ আমার দিকে এগিয়ে আসছে রাস্তায়, কিন্তু সে ছবিতে নেই। সে আমার ফোনটি কিনতে চায়। আমি তার কথা বুঝতে পারছি না একদমই। সে চিকন, এবং লম্বা, আর তার একটি অগোছালো দাড়ি আছে। তার গা থেকে এমন বাজে গন্ধ আসছে যে মনে হচ্ছে যেন সে দীর্ঘদিন ধরে গোসল করেনা। সে বলেছে তার নাম সিকদার, আর সে একজন সংগ্রাহক। সে বারবার আমাকে জিজ্ঞেস করছে আমি ফোনটি কোথায় পেয়েছি, আর আমি কি জানি কি না, যে সেটা আসলে কি। আমি বলছিলাম যে এটি শুধুই একটি ফোন, কিন্তু সে আমার কথায় কর্ণপাত করছিল না। সে বলে যাচ্ছিল যে এটা অন্য জিনিসের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে, এর মাঝে রয়েছে পরজীবী প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য, আর এটি অন্য বস্তুদের মত চেহারাও ধারণ করতে পারে।

সে বলে যাচ্ছে “অন্ধকার প্রকোষ্ঠ, অন্ধকার প্রকোষ্ঠ, এটি একটি ক্যামেরা অবস্কিউরা”। আমি জানি না এসবের মানে কি। আমি তার থেকে ঘুরে দাড়াই। মনে হলো আমি আমার চোখের কোণা দিয়ে আমার নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সেখানে কোন আয়না ছিল না।

#৬০০

আমার বাসার বাইরের স্ট্রিট ল্যাম্পের নিচে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু আমি ভয়ে তাকাতে পারছি না।
চারপাশে অনেক বেশি নিরবতা। পরিবেশটা একদম শুনশান এবং কোন কিছুই নড়ছে না। যদিও কিছু নড়ছে না, তাও আমি জানি ওটা ওখানে আছে। মনে হচ্ছে যেন নিরবতারও নিজস্ব জীবন আছে, অথবা সে জীবন্ত প্রাণীর প্রতিধ্বনির মত। এটা আমার রুমের অন্ধকার প্রকোষ্ঠের মত, আর একমাত্র আলোর উৎসটি ঘরের বাইরে। আলো এসে আমার পর্দার উপর আছড়ে পড়ছে।
ল্যাম্পের নিচে কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে।
আমি পর্দার এক কোণায় সরে যাই। আমি বাইরে তাকাই না, কিন্তু একটি ছবি তুলি।
ছবিতে কিছু একটা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, অবিকল আমার চেহারা নিয়ে। সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আর হাসছে।

#৩৪২
কেউ একজন রাতের বেলায় আমার দরজার নিচে দিয়ে একটি খাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। সেটার ভেতরে আমি বই থেকে ছিড়ে নেয়া এক টুকরো কাগজ পেলাম। আমি সেটা আমার মুখের পাশে ধরে রেখেছি। আমার চোখগুলো ঢুলুঢুলু। সেলফিতে কোন মতে কাগজের লেখাগুলো পড়া যাচ্ছে। সেখানে লেখাঃ
“ম্যাড জেসুইট” নামে পরিচিত ফাদার আলফনসো তার ষোড়শ শতাব্দীর পান্ডুলিপি “উমব্রা আউটেম এক্স টেম্পোরে” তে প্রথম উল্লেখ করেন এক বিশেষ ধরণের আলোর ব্যাপারে, যেটি কিছুটা ছায়া, কিংবা ছায়া সমূহের মত। তবে এই অনুবাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তার লেখা পান্ডুলিপিটি স্কটল্যান্ডের একটি মঠের পাঠাগারে লুকানো ছিল অনেক বছর ধরে, যেখানে তাকে ব্লাসফেমীর জন্য বন্দী করে রাখা হয়েছিল।

এই পান্ডূলিপিতে সে এমন একটি যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে, যা একধরণের অণুবিক্ষন যন্ত্র, বা ক্যামেরা অবস্কিউরা। এর অন্য নাম “অন্ধকার প্রকোষ্ঠ”, যা এরকম ছায়া আলোকে ধারণ করার কাজে ব্যবহার করা হোত। কিছু অনুবাদে ছায়ার বদলে এটিকে আত্মা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে; যেমন ১৬৫৩ সালে লিপিবদ্ধ ফরাসী; গেরোউ পান্ডুলিপিতে।

ম্যাড জেসুইট আত্মহত্যা করেছিলেন, অথবা তাকে হত্যা করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত নথি খুব একটা পরিষ্কার না। মঠের ছাদ থেকে তিনি নিচের চোরাবালিতে পড়ে গিয়েছিলেন। কিভাবে তিনি জেলখানার কুঠুরী থেকে বের হয়ে খাড়া দেয়াল বেয়ে ছাদে উঠেছিলেন, সেটার কোন কুলকিনারা কেউ করতে পারেননি। তার কারাকক্ষে, কিংবা মৃতদেহের সাথেও কোন ধরণের কোন যন্ত্র পাওয়া যায়নি। কিভাবে তিনি নিঃশব্দে, এবং সবার অগোচরে সেখান থেকে বের হয়েছিলেন, সে রহস্যও অমিমাংসিত থেকে যায়। তার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, এবং তাকে কবরও দেয়া হয়েছিল, কিন্তু এরপরেও, বেশ কয়েক মাস ধরে এলাকাবীরা অভিযোগ করেন যে হুবহু আলফনসোর চেহারার বর্ণনার সাথে মিলে যায় এরকম একজন ব্যক্তিকে কখনো কখনো গভীর রাতে, এবং কখনো পরিষ্কার দিনের আলোতে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু তার সাথে কেউ কখনো কোন কথা বলতে পারেনি, কিংবা বল্লেও, সেটার কোন বর্ণনা কারও কাছে নেই।

আমি জানি না এসবের অর্থ কি। এসব কিছুই আমার কাছে হজবরল।

#৬৫৫
ছবিটা ঘোলাটে, কেননা আমার হাতগুলো অনেক বেশি কাঁপছিল, এবং এ কারণেই তুমি কিছু বুঝতে পারছিলে না।

#৪১৫
সিকদার আবার এসেছে। আমি তার দিকে ফোন তাক করার সাথে সাথে সে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে পালালো, তাই আমি তার ছবি তুলতে পারলাম না। তাই বদলী হিসেবে নিজের একটা তুল্লাম।

#৪১৬
আরও একটা

#৪১৭
আরেকটা

#৪১৮
এবং আরও একটি, আর প্রতিটি ছবির সাথে সাথে আমার আরও ভাল লাগতে থাকে, এবং একই সাথে খারাপও লাগতে থাকে। মনে হচ্ছে যেন আমাকে কেউ কেটে ছোট ছোট টুকরা করে ফেলছে, আরে প্রতিটি টুকরার সাথে সাথে কিছু একটা হারিয়ে যাচ্ছে আমার থেকে, আর চারপাশে খালি আমি, আমি আর আমি এবং আরও একটি আমি।

#১২
আমি আমার নতুন ফোন নিয়ে পার্কে দাঁড়িয়ে আছি সূর্যের আলোতে, আর আমি খুব খুশী! সব কিছু ভাল যাচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ ।

#৪৬৯
আমি, কান্না কান্না চেহারায়। আর চোখ দু’টো গণগণে লাল হয়ে আছে, আর চোখের নিচে কালি। এখন রাত, আর এইমাত্র আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। সিকদার বাইরে থেকে চিৎকার করছে। সে ইকিরির কথা বলছে। একটি অভিশাপের কারণে আত্মা থেকে অংশবিশেষ বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রেতাত্মা তৈরি হয়, যাকে ইকিরি বলা হয়। বিচ্ছিন্ন হয়ে সে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে পারে।
কিছু কিছু সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করা হয় যে প্রতিটি ছবি মানুষের আত্মা থেকে একটু করে অংশ কেড়ে নেয়।
“আমি তোমাকে যেকোন মূল্য দিতে রাজি আছি”, বলে উঠলো সিকদার। আমি একটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনলাম। “আমাকে ওটা দিয়ে দাও!”। তার গলার স্বরে একাকীত্বের সুর, এবং মরিয়া ভাব। তখন হঠাত কুকুরের ডাক বন্ধ হয়ে গেল, আর আমি সিকদারের রক্ত হিম করা আর্তচিতকার শুনতে পেলাম। বাইরে না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম সে কি দেখেছে।


#৬৫২
আগোরা সুপারস্টোরের বাইরে

#৬৫৩
আমি সুপারশপের ভেতরে যেতে না যেতেই আরেকজনের কাস্টোমারের সাথে ঢাক্কা খেলাম, আর “সরি” বললাম। আর যখন আমি এক মুহুর্তের জন্য তার দিকে তাকালাম, সে ঘুরলো, আর সম্পূর্ণ আমার চেহারায়, আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিল।

#৬৫৪
আমার হাত কাঁপছে। এই সেলফিটা সুপারস্টোরের শেলফের পাশে দাঁড়ানো অবস্থায়। ক্রেতারা ট্রলি ভর্তি আটা ময়দা আর অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। একে একে তারা থেমে যাচ্ছে, আর মাথা উঁচু করে আমার দিকে তাকাচ্ছে। সবার চেহারা অবিকল আমার মত, এবং সবাই হাসছে। তাদের কারও চোখ নেই।
কেউ একজন আমার কানের কাছে ফিসফিস করে আমার নাম বলছেঃ রিতা, রিতা
আমি দৌড় দিলাম

#৭২৯
এটা আমার দৌড়ানোর শেষ কয়েকটি ছবির মাঝে একটি। আমার সামনে বিস্তৃত পথ এবং শহরতলীর ঘুমন্ত বাসাগুলো। রাস্তার পিচের মধ্যে চাঁদের আলো লেপ্টে আছে। আমি দৌড়াচ্ছি, শুধুমাত্র হার্টবিটের দুম দুম শব্দ পাচ্ছি। বাতাসে বেলী ফুলের গন্ধ। সামনে পুরনো খেলার মাঠ। আমি পেছনে না তাকিয়েই ছবিটা তুল্লাম, কিন্তু আমি জানি তারা সেখানে আছে।

#ishtiaq_radical