Monday, October 26, 2020

My 40th

২০১২ সালে আমার বড় মেয়ে মিশেল আয়াত খান জন্ম নেয়, ২৩শে অক্টোবর--তার পিতার জন্মবার্ষিকীর ঠিক এক দিন আগে। সেই থেকে অক্টোবর মাসের এই দু'টি দিন আমার জন্য স্পেশাল। অনেকেই ভাবে, জন্মদিনের আর বিশেষত্ব কি? বিশেষ করে "বুড়া বয়সে"? আমি আসলে সেভাবে চিন্তা করি না। এই দিনটিকে ধরে নেই একটি বিশেষ দিন হিসেবে, যেদিন সুযোগ আসে জীবনকে উপভোগ করার, আর পেছনে ফিরে তাকানোর।


গতকাল আমার ৪০তম জন্মদিন পালন করলাম। সেলিব্রেশান তারও দুইদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে। পরিবারের অকৃত্রিম ভালবাসা এবং তৎপরতায় খুব ভাল গিয়েছে গত তিনটি দিন--আমার আর মিশেলের জন্মদিনের কল্যানে।


মিশেলের জন্য একটি ফিশ বোল এবং দু'টি গোল্ড ফিশ কিনে এনেছিলাম। ওর মা এনেছে ওর পছন্দ করা দুইটি "বিজ্ঞান বাক্স", যা খুবই চমৎকার উপহার বলে ধারণা করি। আমাদের শিশুকালে এরকম গিফট পেলে খুবই খুশী হতাম, তা বলাই বাহুল্য।



ফিশ বোলের গোল্ড ফিশ মিশেলের চেয়ে দু'বছর দশ মাস বয়সী মিরান্ডা (ইশাল) কে বেশি অভিভূত করেছে। সকাল বিকাল সে তাদেরকে "হ্যালো ফিশ, হাউ ডু ইউ ডু ফিশ? ওয়াট ইউ ডুইং ফিশ?" জাতীয় প্রশ্ন এবং সম্বোধন করে যাচ্ছে। অথ্যধিক খাদ্য প্রদানের কারণে দুই দিনেই ফিশ বোলের পানি খানিকটা ফিকে হয়ে গিয়েছে। তবে বাসায় এরকম এক জোড়া পোষ্য থাকলে সেটা অন্যরকম আনন্দের ব্যাপার। মিশেল ভালবাসে "আওয়ার নিউ ফ্যামিলি মেম্বার্স" দের নাম রেখেছে ম্যাগনোলিয়া এবং ডেইজি--লম্বা এবং কালো ফুটকি সমৃদ্ধ মাছটি ম্যাগনোলিয়া, আর অন্যটি ডেইজি।


২২ তারিখ রাত ১১ঃ৫৯ পর্যন্ত দুই শিশুকে জাগিয়া রাখা হয়েছিল বিভিন্ন ছলাকলায়। আমি ওদেরকে রাখছিলাম, আর উপরে ওদের মা, আমার মা এবং কাজিনদের নিয়ে বেলুন দিয়ে সুন্দর করে স্টেজ সাজাচ্ছিলো।


এরপর মিশেলের জন্য সারপ্রাইজ পার্টি হলো। চমৎকার একটি কেক কাটার মাধ্যমে ও অষ্টম বর্ষে পদার্পন করলো।


২৩ তারিখ দুপুরের দিকে সপরিবারে কেশচর্চা করতে গেলুম। দুই কন্যা ও তাদের মাতা ফারজানা শাকিলে গেল, আর আমি হাবিব'স এ। "ফ্যামিলি হেয়ারকাট" সেশান আর কি।


সেখান থেকে বের হয়ে আমার পছন্দের জাপানী খাদ্য যোগে লাঞ্চ করলাম। মেনুতে ছিল ক্যালিফোর্নিয়া মাকি রোল, এসর্টেড সুশি, ড্রাগন ফ্রুট স্মুথি (এটার সুদৃশ্য পিঙ্গল বর্ণ দেখে ইশালের খেতে ইচ্ছে করবে--এই আশায় অর্ডার দেয়া), চিকেন নানবান এবং জাপানিজ ফ্রাইড রাইস। চিকেন নানবানের নাম শুনে কেউ কেউ নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন যে আমরা "টোকিও এক্সপ্রেস" নামক দোকানে খেতে গিয়েছিলাম। আমি নিশ্চিত "মেয়োনেজ" দিয়ে রান্না করা এই চিকেনের রেসিপী কোন জাপানী ভদ্রলোকের মস্তিষ্কপ্রসূত নয়; বড়ং জাপানী কাউকে এহেন রান্না করতে বললে সে অপমানিত বোধ করার সমূহ সম্ভাবনা আছে বলেই আমার ধারণা।



জাপানী সুশী "কাচা মাছ" হলেও ঢাকায় প্রাপ্য সুশী ডিশগুলো কাচা হবার ধারেকাছেও না। কিছু কিছু অভিজাত রেস্তোরায় সাশিমি পাওয়া যায়, যা কিঞ্চিৎ কাচা।


এই লাঞ্চকে আমার জন্মদিনের উপহার হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল Nabila, কিন্তু সে প্রয়াস সফল হয় নি। এখনো আমি গিফটের জন্য অপেক্ষা করছি 


এরপর সেখান থেকে মিশেল ইশালের নানাবাড়ী গেলাম। সেখানে আমার গুণী শ্যালক Fatehin এর একক প্রচেষ্ঠায় সুমীজ হট কেক (who is this Sumi anyway?) থেকে আনা খুবই সুস্বাদু একখানা কেক এবং ক্র্যাবযুক্ত তৃপ্তিদায়ক নুডুলস সহযোগে কেক কেটে হ্যাপি বার্থডে টু মি করলাম।



এরপর রাতে বাসায় ফিরে আরেক সারপ্রাইজ। আম্মা আব্বার আয়োজনে পুডিং কেক এবং আমার অতিশয় প্রিয় খাবার সসেজ রোল ও আলুর চপ দিয়ে দ্বিতীয়বারের মত হ্যাপী বার্থডে করলাম। আম্মা জিজ্ঞাসা করেছিল কি গিফট চাই। মিশেলের জন্য ছবি আকার ব্রাশ ও অন্যান্য সরঞ্জাম কিনে দিয়েছে মা। আমি বলেছি আগামী মাসে বের হতে যাওয়া পাওলো কোয়েলহোর "দ্যা আর্চার" বইটি কিনে দিলেই চলবে।




এভাবে প্রকৃত জন্মদিন আসার আগেই দুইবার জন্মদিন হয়ে গেল!


২৪ তারিখ ঘুম থেকে উঠলাম দেরী করে, আয়েশী ভঙ্গিতে। অবশ্য করোনা পরবর্তী সময়ে প্রায় প্রতিদিনই রাত জেগে কাজ করে সকালে দেরী করে ওঠা হয়। ভাবলাম ৪০ এ পা দেয়ার দিনটি কিভাবে উদযাপন করা যায়। নাস্তা করেই বসলাম দু'টি বই নিয়ে। উলটে পালটে সারাদিনে পড়লামঃ


যদ্যপি তোমার গুরু - আহমদ ছফা

Astrophysic for People in a Hurry - Neil deGrase Tyson


দু'টি বই দুই ধরণের। বিষয়বস্তু পুরোই এসপার ওসপার। যদ্যপি তোমার গুরু বইটি সাত দিন ধরে পড়ছি। এর আগের দিন পড়ে শেষ করেছিলাম বিটলস এর একটি আত্মজীবনী--এই বইটি প্রায় ১৩০০ পাতার বিধায় পড়তে অনেকদিন সময় লেগেছে।


আমি এর আগে আহমদ ছফার কোন বই পড়িনি। সত্য বলতে গেলে, বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলা বই পড়া হচ্ছে না। আগে, প্রতি বছর বইমেলা থেকে একগাদা হুমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবালের বই কিনে আনতাম; আজকাল আর তা করা হচ্ছে না। আর ইংরেজী বই পড়ার নেশায় বাংলাকে অবজ্ঞা করা হচ্ছিল। এই অসাধারণ বইটির মাধ্যমে পুনরায় বাংলা পড়ার চর্চাটি ফিরিয়ে আনলাম ৪০তম জন্মদিনে। "When was the last time you did something for the first time?" -- প্রশ্নের একটি উত্তর অন্তত হাতে জমা থাকলো।


টাইসনের বইটির মাত্র ২০ পাতার মত পড়া হয়েছে। যেহেতু এটি বিজ্ঞানচর্চার বই, খুব সতর্কতার সাথে পড়তে হচ্ছে। এই ভদ্রলোকের নাম অনেকেই না জানলেও তাকে নিয়ে বানানো ট্রলটি আমরা মোটামুটি সবাই দেখেছি।

বইটি বেশ আগ্রহোদ্দীপক; যারা জীবনেও এস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে পড়েনি, বা এ ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ (আমার মত), তাদের জন্যেও বইটি উপযোগী।


দুপুরে আবারও সারপ্রাইজ। আম্মা কাচ্চি বিরিয়ানী রান্না করেছেন, আর সাথে ছিল ডিম ভুনা এবং সাবার বানানো সুস্বাদু রায়তা এবং কোকা কোলা। খুবই তৃপ্তি করে খেলাম। চাচী, ফুফু ও এসেছিলেন। কাজিনরা সবাই আসতে পারেনি। কানাডা আর অস্ট্রেলিয়া থেকে ফ্লাইট কম আসতেসে এখনো।


এ সবের মাঝে এসেছে হাজার হাজার জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ফোন কল, ভিডিও কল, ফেসবুক কল, ফেসবুকের ইনবক্স, ওয়াল, গ্রুপের পোস্ট, Whatsapp--ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য উইশের নিচে চাপা পড়ে গিয়েছি প্রায়।


বেশিরভাগ লিখিত উইশের উত্তর দিতে পারিনি অদ্যবধি, তবে আশা করছি সবাইকে আলাদাভাবে ধন্যবাদ জানাতে পারবো।


এখানে একটা গণ ধন্যবাদ দিয়ে দেই!


ধন্যবাদ আমাকে মনে রাখার জন্য। আমি প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞ। যদি কোন কারণে কারও শুভকামনার উত্তর দিতে ভুলে যাই, তা হবে অনিচ্ছাকৃত।


আমার প্রিয় গায়ক জন লেনন তার বন্ধু ও বিটলস ব্যান্ডের সহকর্মী রিংগো স্টারের জন্য একটি গান লিখেছিলেন। ততদিনে ব্যান্ড ভেঙ্গে গিয়েছে, আর চারজন সদস্যই নিজের মত করে সলো ক্যারিয়ার গড়ায় মন দিয়েছেন। রিংগো ছিলেন ব্যান্ডের ড্রামার ও একজন নিপাট ভালমানুষ--বাকি সবার সাথে একমাত্র তারই শেষাবধী সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কটি টিকে ছিল। বিভিন্ন কারণে বাকি তিনজনের মধ্যে মোটামুটি দা কুমড়া সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল, যার কারণেই ব্যান্ড ভেঙ্গে যাওয়া।


জন ভাবলেন রিংগোর ক্যারিয়ার কে একটু এগিয়ে দেই। একটা গান লিখে দেই তার জন্য! তিনি লিখলেন "লাইফ স্টার্টস এট ফরটি" (জীবন শুরু হয় চল্লিশ বছর বয়সে) নামের এই গানটিঃ


They say life begins at forty
Age is just a state of mind
If all that's true
You know that I've been dead for thirty-nine


তারা বলেন জীবন শুরু হয় চল্লিশে
বয়স, সে তো শুধুই এক মনের ভাব
এটাই যদি হয় সত্য
তবে তো আমি উনচল্লিশ বছর ধরে বেঁচে মরে আছি


এই গান লেখার অল্প কিছুদুন পরেই, ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখে জন লেনন নিহত হন আততায়ীর গুলিতে। ৪০ এ আর নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেননি তিনি।


তখন আমার বয়স ছিল ১ মাস ১৪ দিন। আমি আরো ১৫-১৬ বছর পর টের পাই যে আমার প্রিয় গায়ক আমার জন্মের প্রায় সাথে সাথেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।


জনের মৃত্যুতে রিংগো এতটাই শোকাতিভূত হয়েছিলেন যে তিনি আর এই গানটি রেকর্ডই করেননি। বহু বছর পর জনের নিজের একটি হোম রেকর্ডিং খুঁজে পাওয়া যায়, যেটা পরে একটি সংকলনে প্রকাশ করা হয়।
এভাবে খাওয়া দাওয়া, পরিবারের সাথে সময় কাটানো এবং বই পড়ার মাধ্যমে নতুন যুগে পদার্পণ করলাম। তেমন কোন মাইলফলক নয় এটি, নয় কোন অর্জনও--কিন্তু তারপরেও, ৪০ বছর বয়সে আমার চিন্তাভাবনা ও ধ্যানধারণা কেমন ছিল সেটার একটি প্রতিচ্ছবি হিসেবে এই লেখাটা লিখে রাখলাম।


প্রথমে ভাবসিলাম নিজের একটা ছবি দিয়ে লিখে দিব নচিকেতার এই লাইনগুলোঃ


কেউ বলে বুড়ো ভাম
কেউ বলে পাজি
কেউ বলে এইবার
বেটা মরলেই বাঁচি


কিন্তু ব্যাপারটা চিন্তা করে হাসি পেল, তাই সেরকম কিছু না করে এই লেখাটা লিখলাম। ধৈর্য্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।


২৫শে অক্টোবর, ২০২০
#ishtiaq_radical

No comments: