Friday, June 26, 2020

কিভাবে মানসিক চাপ কমাবেন

মূল রচণাঃ Beyond Blue. (2008). Reducing Stress [fact sheet]. Retrieved from https://www.livingwell.org.au/wp-content/uploads/2012/11/Reducing%20Stress.pdf

অনুবাদঃ ইশতিয়াক খান

কিভাবে মানসিক চাপ কমাবেন

মানসিক চাপ এবং অবসাদ 

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সবার লক্ষ্য রাখতে হবে যে মানসিক চাপ এবং অবসাদ এক নয়। তবে অনেক দুঃখ কষ্টের সাথে কঠিন সময় যুক্ত হলে সেটা একজন মানুষকে অবসাদের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এরকম অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চললে অবসাদগ্রস্থ হবার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। 

মানসিক চাপের ব্যবস্থাপনা

কোন ঘটনা কিংবা পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে মানসিক চাপ আবির্ভুত হয়। এই চাপ ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক, দু'টিই হতে পারে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চাপের মুখে পড়া খুবই সাধারণ ঘটনা, এবং কাজ, পরিবার কিংবা ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারনে এটি তৈরি হতে পারে। মানসিক চাপ তখনই আসে যখন এমন কোন কিছু ঘটে যা আমাদের দুঃচিন্তার কারণ ঘটায়, এবং সাথে আমাদের চিন্তা এবং অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। 


গত দুই সপ্তাহ ধরে আপনি কেমন বোধ করছেন এবং কি কি করেছেন, সেটা একটু ভাল করে ভাবুন। আপনি কিঃ

১। যখনই রিলাক্স করতে গিয়েছেন, তখনই ব্যাপারটাকে খুব কঠিন মনে হয়েছে? 
২। বেশিরভাগ সময়ই নিজেকে চাপের মুখে এবং কাজের মাঝে নিমজ্জিত অবস্থায় আবিষ্কার করেছেন? 
৩। সারাক্ষণ সন্ত্রস্ত থেকেছেন এবং নিজেকে দুঃচিন্তাগ্রস্থ অবস্থায় অনুভব করেছেন?

এই তিনটি প্রশ্নের মাঝে এক বা একাধিকের উত্তর যদি "হ্যা" দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি মানসিক চাপে আছেন, এবং সেই চাপ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা শুরু করা উচিত এখনই। 

চাপ ব্যবস্থাপনা থেকে আমরা নিম্নলিখিত ব্যাপারগুলো শিখতে পারিঃ

১। চাপ এবং উদ্বেগের উপসর্গগুলো চিহ্নিত করতে পারা
২। চাপ এবং উদ্বেগ কমানোর জন্য কিছু নিঃস্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম (ব্রিদিং এক্সারসাইজ) 
৩। রিলাক্স করা এবং শারীরিক কার্যকলাপের উপকারিতা। 


চাপ কমানোর পন্থাসমূহ

কিছু সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে চাপ কমিয়ে আনতে পারি। 

১। জীবনের বড় কোন পরিবর্তন কে পিছিয়ে দিন

  • জীবনের যেকোন পর্যায়ে বড় কোন পরিবর্তন চাপের সৃষ্টি করতে পারে। আপনি যদি চাপের মুখে থাকেন কিংবা কোন কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন, তাহলে বাসা বদলানো কিংবা চাকুরী পরিবর্তনের মত বড় ব্যপারগুলো থেকে আপাতত দূরে থাকাই শ্রেয়। আপনি আরও ভাল বোধ করতে থাকলেই কেবল এসবে হাত দিন।  

২। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব সমূহ দূরীভুত করুন

  • ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে পাওয়া মানসিক চাপ অনেকসময় বিষন্নতার জন্ম দেয়। একজন কাউন্সেলর কিংবা সাইকোলজিস্ট এর সাথে কথা বলুন যিনি আপনাকে এ ব্যাপারে সহায়তা করতে পারবেন। 

৩। যেসব কাজ উপভোগ করেন, সেগুলোই করুন

  • আপনি হয়তো লক্ষ্য করবেন যে আপনি সময়টা কম উপভোগ করছেন আর বেশি দুঃচিন্তা করছেন। সুষ্ঠুভাবে রিলাক্স করার জন্য আপনাকে কিছু সময় আলাদা করে নিতে হবে উপভোগ্য কাজগুলো করার জন্য, যেমন ব্যায়াম করা, মেডিটেশান করা, বই পড়া, বাগান করা কিংবা গান শোনা। 

৪। আপনার কাজকে নিয়ন্ত্রণ করুন

  • আপনার কাজ কিংবা চাকুরীর উপর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করুন--অফিসে লম্বা সময় দেয়া এবং অতিরিক্ত দায়দায়িত্ব কাধে নেয়া থেকে বিরত থাকুন। বর্তমান সময়ে এটা ম্যানেজ করা খুবই কঠিন হতে পারে, কিন্তু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কিছু পরিবর্তন জীবনে অনেক বড় পার্থক্য এনে দিতে পারে। 
  • মানুষকে বেশি বেশি করে "না" বলতে শিখুন। জীবিকা নির্বাহের কাজ এবং আপনি যেসব কাজ উপভোগ করেন, তার মাঝে স্থিতি আনুন। নিজেকে নতুন নতুন দায়বদ্ধতা দ্বারা পিষ্ট হতে দেবেন না। 
  • এটা নিশ্চিত করুন যে আপনার হাতে বিশ্রাম নেয়া, রিলাক্স করা এবং ব্যায়াম করার জন্য যথেষ্ট সময় থাকছে। 
  • কিভাবে রিলাক্স করা যায় তা শেখার অন্যতম বড় অংশ হচ্ছে নিজের উপভোগ্য কাজসমূহ সম্পাদনের জন্য দৈনিক কিছুটা সময় আলাদা করে রাখা।
৫। নিয়মিত ব্যায়াম করুন
  • হাঁটা, সাঁতার কাটা, নাচা, ফুটবল খেলা কিংবা জিমে যাওয়া আপনার পেশীর চাপ কে লাঘব করতে পারে, এবং আপনার মনকে রিলাক্স করতে সহায়তা করতে পারে। 
  • প্রতিদিনই কিছু পরিমাণে শরীরচর্চা করার চেষ্টা করুন। শুধুমাত্র হাঁটা হলেও। 
৬। সাহায্য নিন

আপনাকে সাহায্য করার জন্য কিংবা মানসিক চাপ লাঘব করার জন্য একজন বন্ধু, ডাক্তার, কাউন্সিলর কিংবা এমন একজন, যার উপর আপনার ভরসা রয়েছে, তার সাথে কথা বলতে পারেন। বাসায়, অফিসে কিংবা আপনার অন্যান্য নিয়মিত যাত্রার স্থানে সাহায্য ও সহযোগিতা চাইলে চাপ কমতে পারে। 


(লেখার পরবর্তী অংশে স্লো ব্রিদিং এক্সারসাইজ এর বিস্তারিত দেয়া আছে। সেটি উপরে সংযুক্ত ফাইল লিংক থেকে ডাউনলোড করে পড়া যাবে, এবং নির্দেশনাগুলোও সহজ ইংরেজীতে লেখা। তাই আর ঐ অংশটি এখানে যুক্ত করলাম না।) 

Thursday, June 18, 2020

US VS Them

"US Versus Them"




Us versus them is a very troubling sentiment.

There are many people in this world who thinks that everyone from the "other side" is against them. It means, the government is out there to steal, businessmen are out there to rob, journalists are out there to confuse, restaurants are out there to charge more for smaller portions of food, and above all, doctors are out there to overcharge, not treat properly and to suck blood out of their clients, e.g. patients who go to them to save their own lives.

Now there are both sides of this paradox. It is sometimes true, that a pregnant woman, who could get a normal delivery is influenced, and or often forced to go for a c-section delivery. That is a trend in our country, and instead of blaming the doctors, people should get a hold of the health and safety authorities to impose strong laws against the often forced upon choice of getting denied of the opportunity to get a normal delivery.

Sometimes you may be having very simple symptoms like a dry cough and sporadic fevers. Still, the so called doctors will ask you to do tests worth thousands of takas. Then they become butchers, blood suckers and what not. But even for that, the hospital authority plays a strong role. I heard theories that hospitals specifically instruct (instructions here act like orders) to prescribe a specific set of tests for most patients, no matter what their symptoms are, because these tests are an additional source of income for them. Needless to say, they don't accept tests that have been performed elsewhere.

However, we do not see the owner of Apollo (now evercare) or United. We only see the doctors, and it is very easy to hate them; especially if you are not being covered by insurance and have to pay a lot of extra money for the c-section delivery of your child or the additional tests that probably you did not need to get done.

The happy news of getting blessed by a newborn baby often gets shadowed by discussions like

"Hey, they even charged for the bandages"
"Hey, we didn't even use up all the medicines, and still we are getting charged"
"The cabin didn't even have good air conditioning, and yet such a hefty charge is being imposed"
"If we had normal delivery, we could save 33% costs"

At the end of the day, what we can do? We can just blame the "blood sucking" doctors, because the owners of these hospitals are way out of our reach, and there are no industry watchdogs like BTRC, who can keep an eye on medical malpractices.

Meanwhile, the doctor probably don't even know the details of these additional charges, or they are reluctantly prescribing the tests. It might be possible that they are "in on it, too", e.g. like they get a percentage of tests or the additional charges. But I do not believe this is true.

In most cases, she or he is just doing their work with a lot of dedication. They are not taking up arms and waging wars against enemies, but they are probably facing the highest amount of risk without being in an active war zone, as they are in regular contact with people who have the deadliest of diseases.

In the current scenario, any and every doctor who is treating or being exposed to COVID-19 patients is going through this huge risk. They are taking up the risks voluntarily. If a doctor does not want to treat Covid patients, no law in this world can force them to do so. If all goes sour, the doctor can just quit. You just can't conscript a doctor like kings who would conscript whoever they want for their wars; e.g. from small children to rake carrying farmers.

And, to be honest, no doctor wants to kill their patients. Some of them may have less knowledge and access to limited resources, but still, they will try to save their patients till the last minute. Just like in any other profession, the level of dedication and effort varies, but as a general thumb rule, we can agree that the recovery and survival of patient has a direct connection with a doctor's goodwill, reputation, and as a result, his livelihood.

So no doctor will willingly let his patient die. NO ONE. I repeat.

So when an unfortunate event like that happens, and that too, due to a disease that does not yet have a proper treatment--should we punish the doctor by killing him?

In contrast, the doctor should need emotional support. He tried his best, and yet the patient died. He must be under mortal grief, and to a great extent, shame, too, when such an event occurs.

When we fail in our work assignments, we also feel shame and helplessness, but no one kills us for that. Yes, we might get rebuked by our boss, get denied of a promotion, or in extreme cases, may even lose the job--but getting killed is never an option.

Let's look at some other situations.

You asked a baker to bake a cake for your daughter's birthday. When you go ahead to pick up the cake, the baker informs you that he did bake the cake, but it has been ruined due to refrigeration issues--the area did not have electricity for over 12 hours, and the cream has melted, and made the cake inedible..

You instantly feel enraged, as this action has pretty much ruined your and your daughter's day. So should you pull out a loaded gun from your pocket and blast the baker's brains off? Or would you try to realize the situation, and acknowledge the fact that things like this can happen anytime?

You paid a lawyer to fight a case on behalf of you. Losing it will cause you significant money and goodwill. He tries his best, puts up a fierce fight against the state, and still loses. Now, do you try to execute the poor fellow with a guillotine? Or should you try to accept the damages, and try to turn around?

There can be hundreds and thousands of examples where we faced difficult odds, accepted them, and recovered. A rogue bus hits a pedestrian, and he dies while he was being taken to the hospital. His children are enraged, devoured by mourning--they shout with the hospital authority and curse them for not issuing a death certificate fast; and yet, they decide not to press any charges against the rogue bus driver and its owner. Why? Because that would mean their father cannot be buried instantly; he will have to go through postmortem and they would have to come to the court regularly.

But no, a doctor cannot be pardoned for trying his best, and not being able to save his patient.

He may have saved hundreds of lives in his 61 year life, but still, one casualty will be good enough to vilify him, and it will be perfectly okay to beat him to his death.

Yes, the family members of a deceased Corona patient did the very same. They beat up Dr. Rakib, and killed him.

I know they will not be punished for their sins in this life. But there is an afterlife, and I am sure a grand welcome is being planned for them in hell.

Wednesday, June 17, 2020

অপমানের উপহারসমূহ

অপমানের উপহারসমূহ



মূল লেখক - পাউলো কোয়েলহো ,
অনুবাদ - আমি

টোকিওর কাছাকাছি একজন বিখ্যাত সামুরাই যোদ্ধা বাস করতেন। উনার অনেক বয়স; বর্তমানে উনি কমবয়সীদের জেন বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা দান করেন। বয়স বেশী হওয়া স্বত্ত্বেও সবাই উনাকে একজন কিংবদন্তী হিসেবেই জানতো-- কথিত আছে যে উনি যেকোন প্রতিপক্ষকেই অসিযুদ্ধে হারাতে সক্ষম।

এক বিকেলে, একজন যোদ্ধা, যিনি বিখ্যাত ছিলেন দ্ব্যর্থহীনতার জন্য--সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিলেন যুদ্ধের সময় প্রতিপক্ষকে উত্তেজিত করে সুবিধা আদায় করে নেয়ার কৌশলের কারণে। তিনি সাধারণত প্রতিপক্ষের প্রথম আঘাতের জন্য অপেক্ষা করতেন; আর আঘাতটি আসার সাথে সাথেই প্রতি-আঘাত করতেন বিদ্যুতবেগে।

সবাই নাগরিক চত্ত্বরে জড়ো হলেন, আর তরুণ যোদ্ধাটি প্রৌড় শিক্ষকটিকে অপমান করতে লাগলো। সে প্রৌঢ় যোদ্ধার দিকে কিছু পাথর ছুড়ে মারলো, উনার মুখে থুথু নিক্ষেপ করলো আর যতরকম গালিগালাজ জানা আছে তার, সবই বলে ফেল্লো --সে এমনকি উনার পূর্বপুরুষদেরকেও অপমান করতে ছাড়লো না। কিন্তু শেষ বিকেলে, সেই তরুণ, ক্ষীপ্র যোদ্ধা খুবই ক্লান্ত এবং লজ্জিত বোধ করলো, এবং সেখান থেকে প্রস্থান করলো।

শিক্ষক এত গালিগালাজ এবং অপমান সহ্য করেছেন দেখে হতাশ হয়ে তার ছাত্রেরা তাকে জিজ্ঞেস করলো "আপনি কিভাবে এত অপমান ও নীচতা সহ্য করলেন? কেন আপনি আপনার তলোয়ার ব্যবহার করলেন না, হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকা স্বত্ত্বেও? আমাদের সামনে আপনার ভীরুতা প্রকাশ করার চেয়ে তার কাছে পরাজয় বরণ করাও হয়তো উত্তম হোত।

সেই সামুরাই যোদ্ধা তখন তার ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করলেন " যদি কেউ তোমার কাছে কোন উপহার নিয়ে আসে, আর সেটা তোমরা গ্রহণ না কর, তখন উপহারটা কার হয়?"।

"সেটা তারই থাকে, যে সেটা প্রদান করতে এসেছিল", একজন শিষ্য উত্তর দিল।

"ঈর্ষা, রাগ এবং অপমানের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য", বললেন তাদের গুরু। "যখন তাদেরকে গ্রহণ করা হয় না, তখন তারা সেই বহনকারীর কাছেই থেকে যায়; অন্য কারও কাছে আর যেতে পারে না"।

ফোটোঃ গুগল (লাস্ট সামুরাই মুভি)

#ishtiaq_radical
19th May, 2020

Depressing depression

আমাদের দেশে ডিপ্রেশান বা বিষন্নতা কে খুব হেলাফেলা করা হয়। কেউ বিষন্নতায় আক্রান্ত শুনলে প্রথমেই যে কথাগুলো মানুষ বলে, তা হলোঃ

"এইটা আবার একটা অসুখ নাকি?"
"যত্তসব ঢং"
"দুঃখ বিলাস"
"সুখে থাকতে ভুতে কিলায়"
"সে নিজেকে বিষন্ন দাবী করে? আরে তার বাসায় তো দু'বেলা খাবার জুটে, যে না খেয়ে মরতেসে, তার কি হবে?"

এবং আরো অনেক কিছু। অর্থাৎ, যদি কেউ বাহ্যিক ভাবে সফল, কিংবা স্বচ্ছল থাকে, তাহলে তার বিষন্ন হবার কোন অধিকার নেই। হ্যা, একজন গরীব মানুষ বিষন্ন হতে পারে, কিংবা যার নিকট আত্নীয় বা স্বজন হারানো গিয়েছে, সে বিষন্ন হতে পারে; তার পূর্ণ অধিকার আছে বিষন্নতা কে আঁকড়ে ধরার--মোটামুটি এভাবেই বেশিরভাগ মানুষ চিন্তা করে।

কিন্তু একটি কোম্পানীর সিইও, বা একজন অবস্থাপন্ন ব্যক্তির অষ্টাদশী কন্যা, কিংবা একজন রিটায়ার্ড সেনা সদস্য--এধরণের মানুষগুলোর বিষন্নতা কে কেন জানি অন্যেরা ঠিক মেনে নিতে পারে না।

উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বোঝালে সুবিধা হবে।

কোন এক হারিয়ে যাওয়া সময়ে, কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন এক করিডরে দুইজন ছাত্র একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছে। সামনে নোটিশ বোর্ডে সেমিস্টারের রেজাল্ট দেয়া। দুই বন্ধুই একাধিক বিষয়ে খারাপ গ্রেড পেয়েছে, এবং যার ফলশ্রুতিতে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকে থাকাটাই দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। তারা চিন্তা করছে, কিভাবে এই বিপদ থেকে পরিত্রান পাওয়া যায়।

হঠাত দৃশ্যপটে আবির্ভুত হল তাদেরই এক সহপাঠী বান্ধবী। সে ক্লাশের সবচেয়ে ভাল ছাত্রী হিসেবে পরিচিত, এবং আদর্শ ছাত্রীও বটে। তার চুল খোলা অবস্থায় এর আগে কেউ দেখেনি; সে সব সময় "ডিসেন্ট" ভাবে সেজেগুজে ক্লাস করতে আসতো, আর তার মুখ থেকে কেউ কখনও খারাপ কোন কথা শুনেনি।

কিন্তু সেদিনের ঘটনা ভিন্ন। উশকো খুশকো চুল নিয়ে, প্রায় বাসার জামা কাপড় ও বাটা কোম্পানীর স্পঞ্জের স্যান্ডেল পড়া অবস্থায় সে দৌড়ে নোটিশ বোর্ডের সামনে চলে এলো। শোকাহত দুই ভদ্রলোক কে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নিজের রেজাল্ট দেখলো সে। দেখেই জুড়ে দিল "মরা কান্না"।

ঐ দুই ভদ্রলোক ধরেই নিলেন যে তাদের বান্ধবী সকল বিষয়ে ফেল করে এরকম কান্নাকাটি করছে। যদিও, মিড টার্মের মার্ক এবং তার অতীত ইতিহাস বিচারে এই বান্ধবীর এহেন ফল পাওয়া যে খুবই একটি ব্যাপার, সেটাও ওরা বুঝছিল।

প্রায় পাচ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় বান্ধবীর আগমন। তাকে দেখে প্রথম বান্ধবী কিছুটা প্রকৃতস্থ হয়ে তাকে আলিঙ্গন করলো (অবশ্যই শরিয়ত সম্মত ভাবে) এবং জানালো যে সে এক বিষয়ে বি প্লাস পেয়েছে, আর বাকি সব গুলোতে এ পেয়েছে। সাথে এটাও জানালো যে, গরুর দুধে যেমন এক ফোটা সামথিং পড়লে পুরো দুধটাই নষ্ট হয়ে যায়, সেরকম গ্রেডে একটা বি প্লাসও অনুরুপ বিপর্যয়ে ঘটায়।

এই গল্পটি যদি সত্য হোত, তবে ততক্ষনে সেই প্রায় ফেল করা দুই ব্যক্তি যারপরনাই বিরক্ত, কিংবা রাগান্বিতও হয়ে যেতে পারতো। তাদের দৃষ্টিতে বান্ধবীর এই হৃদয়হীন আচরণ খুবই অসমীচিন মনে হতো, এবং তারা বান্ধবী কে অর্বাচিন পাষন্ড টাইপ (বাই দ্যা ওয়ে, পাষন্ড শব্দের স্ত্রী লিঙ্গ কি? পাষন্ডী?) কিছু বলে গটগট করে হেঁটে দৃশ্যপট থেকে সরে যেত।

কিন্তু সেক্ষেত্রে তারা একটি ভুল করতো । সেটা হচ্ছে, দুঃখ, কিংবা আমাদের আলোচ্য বিষয় ডিপ্রেশানের ব্যাপারটা তুলনামূলক না। যার যার সংগ্রাম তার নিজের কাছে। পৃথিবীতে সব সময়ই এমন একজন মানুষ থাকবে, যে আমাদের থেকে সুখী, এবং আরেকজন পাওয়া যাবে যে আমাদের চেয়ে দুঃখী। ডিপ্রেশানের ক্ষেত্রে আরেকজনের সাথে তুলনা করলে ব্যাপারটা ভুলই হবে কেবল। একই শোক দুইজন মানুষকে দুই ভাবে প্রভাবিত করে।

"অমুকের টেবিলে খাবার নাই, আর তুমি প্রতিদিন ফেসবুকে খাবারের ছবি দাও? ধিক তোমাকে"--এটা যেমন হাস্যকর যুক্তি, সেরকম "আমি তোমার চেয়ে বেশি দুঃখে আছি তাই তোমার দুঃখ পাবার অধিকার নেই", এটাও হাস্যকর।

আচ্ছা, লেখায় দুঃখ আর বিষন্নতা একাত্ম হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে তা দোষের না, কারণ দুইটি মানসিক অবস্থাই খুব কাছাকাছি ধরনের।

আজকে একজন তরুণ ভারতীয় নায়কের ডিপ্রেশান প্রসূত আত্মহত্যা নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু আমরা কেউ কি আসলে জানি তার মনের মধ্যে কি চলছিল?

তার ছিল অপার সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার, সুন্দর চেহারা, অগুনতি ভক্ত অনুগ্রাহী, বন্ধু বান্ধব, সুন্দরী বান্ধবী, আর অনেক শুভাকাঙ্খী। তারপরেও গলায় দড়ি দিয়ে সে দুনিয়াকে বাই বাই দিয়ে দিল এক মুহুর্তের নোটিশে।

বাইরে থেকে দেখে মনে হবে তার জীবনে কোন দুঃখ দূর্দশা থাকা সম্ভব না, আর সে কারণে তার জীবনে বিষন্নতার বীজ কে কখন, কিভাবে বপন করেছে, সেটাও নিশ্চিতভাবে কেউ বলতে পারছে না। অল্প কিছু ভাসাভাসা থিওরী শোনা যাচ্ছে, কিন্তু কোনটাই খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না।

হয়তো বা করোনা ভাইরাসের লকডাউনের কারণে তার মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একাকিত্ব ও বিষন্নতার চিন্তাগুলো বারবার ঘুরে ফিরে হানা দিচ্ছিল। হয়তো সে দীর্ঘদিন ধরেই এ অবস্থায় কাটাচ্ছিল, কিন্তু এক্টিভ থাকার কারণে নেগেটিভ চিন্তাগুলো সামনে আসতে পারতো না।

ডিপ্রেশান ইজ রিয়েল। এই কথাটা মানতে হবে সবার আগে। একজন মানুষ, যার সব আছে (অন্তত অন্যদের দৃষ্টিতে), সেও যেকোন সময় গুরুতর বিষন্নতায় আক্রান্ত হতে পারে।

আমরা আমাদের চারপাশে খেয়াল রাখি, বন্ধু বান্ধব, আত্নীয় স্বজন কাউকে দেখে যদি মনে হয় সে আস্তে আস্তে জীবন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে, তাহলে তার যত্ন নেই, তাকে একটু অতিরিক্ত সময় দেই, তার সাথে কথা বলি।

বিষন্নতার কারাগার থেকে একজন মানুষ কে আরেকজন মানুষই পারে মুক্তি দিতে।
ছবিঃ গুগল
#ishtiaq_radical