Monday, October 29, 2018

I Get Along Very Well

https://youtu.be/l88m22K_RC4

বলা হয়ে থাকে যে প্রতিদিন পৃথিবীতে যত গান লেখা হয় তার নব্বুই ভাগই প্রেম ভালবাসা সংক্রান্ত। একটা সময় ছিল, যখন প্রেমের গান শোনাকে দূর্বলতা ভাবতাম। কেউ রিচার্ড মার্ক্স কিংবা এলটন জন এর "প্যানপ্যানানি" ভালবাসে জানলে তাকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করতেও ছাড়তাম না। কিন্তু কিছুদিন পরে টের পেলাম যে মেটালিকা, আইরন মেইডেন ও প্রেম ভালবাসা নিয়ে গান গায়।

মানুষের জীবনে খাওয়া দাওয়া ঘুম যেরকম চিরন্তন সত্য, সেরকম ভালবাসা, প্রেম, যৌনতা, এসব ব্যাপারকেও অগ্রাহ্য করা যায় না, এবং একারণেই বিখ্যাত অনেক গানে এই বিষয়গুলোর অবতারণা করেছেন  গায়ক, গীতিকার ও লেখকগণ। প্রিয় কবি রানা ব্যাপারটা কে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে বলেছেন, "অশ্লীলতা ছাড়া তো কেউ পয়দাই হইতো না"।

সে যাই হোক, প্রেম ভালবাসা যেমন সত্য, ব্রেকআপ আর স্বপ্নভংগও সেরকমই দৈনন্দিন ঘটনা। সবার জীবনেও কখনো না কখনো এরকম সময় এসেছে। আমি যেদিন জানলাম জুহি চাওলা আমার চেয়ে বয়সে প্রায় ২০ বছরের বড়, সেদিন যেই কষ্টটা লেগেছিল, তা আর বলার নয়...

যাই হোক, আগেও আমার কিছু লেখায় পেট শপ বয়েজ ব্যান্ড এর নাম উল্লেখ করেছি। ওরা আমার খুব প্রিয় কোন ব্যান্ড নয়, কিন্তু কেন জানি তাদের গানের লিরিক্স গুলো খুব ভাল লাগে, হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

I Get Along হচ্ছে সেরকমই একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্রেকআপ সং। গানটি শুনতে শুনতে গায়কের সাথে আপনি একটা ছোট খাট সিনেমা দেখে ফেলবেন কল্পনায়। গানের মূল উপজীব্য হচ্ছে "আমি বেশ ভালই আছি, তোমাকে ছাড়া"। আশা করি গানটি ভাল লাগবে। ইচ্ছে আছে কোন একদিন নিজে গাওয়ার।

পাঠক/শ্রোতার সুবিধার্থে নিচে লিরিক্স দিয়ে দিলামঃ

Feeling like I'm stuck in a hole
Body and soul
While you're out of control
Now I know why you had to go
Well I think we both know
Why it had to be so
I've been trying not to cry
When I'm in the public eye
Stuck here with the shame
And taking
My share of the blame
While making
Sudden plans that don't include you
I get along, get along
Without you very well
I get along very well
Now I know you'd much rather be
With rock royalty
Instead of someone like me
The big boys are back and we need them, you said
Think it was something you'd read
And it stuck in your head
Even though I don't suppose
That's as far as it goes
You've go quite an appetite
For being wronged and in the right
Well from now on it won't affect me
I get along, get along
Without you very well
I get along very well
The morning after the night before
I'd been alerted
To your lies
I phoned you up
Your calls were all diverted
Took a long time to track you down
Even then you were defiant
It's not what you think it is, you said
And proceeded to deny it
So I lost my patience at last
And it happened so fast
You belong in the past
I've been trying not to cry
When I'm in the public eye
Stuck here with the shame
And taking
My share of the blame
While making
Sudden plans that don't include you
I get along, get along
Without you very well
I get along very well

#ishtiaq_radical
#aboutmusic


Friday, October 26, 2018

ট্রিবিউট টু এবি

উনার সাথে প্রথম দেখা ২০০০ সালে। এর আগেও উনার শো দেখেছি, কিন্তু একদম কাছে থেকে দেখার সুযোগ এর আগে পাইনি। আমার তৎকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি রেওয়াজ ছিল যে নতুন ব্যাচ ভর্তি হলে বিসিআইসি ভবনের অডিটোরিয়ামে একটা ঘরোয়া কনসার্ট এর মাধ্যমে তাদেরকে বরণ করে নেয়া। এই শো গুলো অন্য ব্যান্ড কনসার্ট এর মত হোত না কখনোই। ব্যান্ড অনেক আয়েশী আমেজে থাকতো আর খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে তারা পারফর্ম করতো।

প্রতি বছরই এই শো হোত, এবং বরাবরের মত সেবারও পছন্দের ব্যান্ড ছিল এলআরবি। শুনেছিলাম শো ৭টা থেকে শুরু হলেও ব্যান্ড সদস্যগণ আরো অনেক আগেই চলে আসবে ভেনুতে--প্র্যাক্টিস এবং জ্যামিং করার জন্য। বাচ্চু ভাইকে একদম সামনে থেকে দেখতে পাওয়ার অতি আগ্রহে আমি আর আমার কিছু বন্ধু বেলা ৩টায় চলে গেলাম ভেনুতে। পৌছুনোর কিছুক্ষণ পরেই শুনলাম ব্যান্ড এসেছে। বাচ্চু ভাই ও অন্যরা ব্যাকস্টেজে তাদের বাদ্যযন্ত্র সহ চলে গেলেন।

ব্যাকস্টেজ এরিয়াতে সাধারণত ভলান্টিয়ার কিংবা ব্যান্ড এর সদস্য, ম্যানেজার ও অন্যান্য স্টাফ ছাড়া কারও প্রবেশাধিকার নেই। আমি সামান্য বুদ্ধি খরচ করে একটি ভলান্টিয়ার ব্যাজ জোগাড় করলাম। কিছুক্ষণ পর সাহস করে ঢুকে পড়লাম সেখানে।

লক্ষ্য করলাম বাচ্চু ভাই তার তখনকার ট্রেডমার্ক টুপি পড়ে আছেন। উনি উনার ব্যান্ড কে নিয়ে একটা লম্বা টেবিলের চারপাশ ঘিরে বসে রয়েছেন। জমেছে জম্পেশ আড্ডা, আর সাথে রয়েছে চিকেন ব্রোস্ট। সে আমলে হেলভেশিয়া ও কলাবাগানের "মিল ইন আ বক্স" ছাড়া আর কোথাও চিকেন ব্রোস্ট পাওয়া যেত না। সেই নির্দ্রিষ্ট ব্রোস্ট এর প্যাকেটখানা কোথা হতে আনা হয়েছিল তার আর আজ মনে নেই, কিন্তু বাচ্চু ভাই এর টেবিল মাতানো আড্ডার কথা ভুলিনি।উনি একটি মজার গল্প বলছিলেন আর সবাই হাসছিল তার কথা শুনে।

হঠাত টের পেলাম রুমে পিনপতন নিরবতা। আমি সম্ভবত ম্যানেকুইন স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে ছিলাম বেশ কিছুক্ষণ। খেয়াল করলাম বাচ্চু ভাই আমার দিকে তাকিয়ে কি জানি বলছেন। ১৯ বছরের আমি ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে উনি আমাকে বলছেন "কিছু বলবেন ভাই?"।

আসলে আমার ইচ্ছা করছিল উনার সাথে এক্টূ কথা বলতে। জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম উনার ডায়ার স্ট্রেইটস, ডিপ পার্পল আর আয়রন মেইডেন কেমন লাগে। কোন ইংরেজী গান রিকুয়েস্ট করলে কি বাজাবেন নাকি? কিন্তু আমি "সরি" বলে ভেগে যাওয়া ছাড়া কিছুই করতে পারলাম না।

অডিটোরিয়ামে গিয়ে আসন গ্রহণ করলাম বন্ধুদের সাথে। ওদেরকে আর বললাম না আমার অভিজ্ঞতার কথা। একটু পরে দেখলাম এলআরবি এসে স্টেজে উঠলো। কিছুক্ষণ পর বেজে উঠলো ডায়ার স্ট্রেইটস এর "Wild West End" গানটার গিটার সলো। বাচ্চু ভাই একাই বাজালেন কিছুক্ষন, তারপর বাকি ব্যান্ড উনার সাথে যোগ দিল। গানেরও দুই এক লাইন গাইলেন। তখনো হল খালি। শো শুরু হয় নি। চলছিল সাউন্ড টেস্ট আর জ্যামিং।

তিনি একে একে গেয়ে ও বাজিয়ে গেলেন স্মোক অন দ্যা ওয়াটার, কমফর্টেব্লি নাম্ব, ওয়েলকাম টু দ্যা জাংগেল, সুলতান্স অফ সুইং, উইদ অর উইদাউট ইউ সহ আরো অনেক বিখ্যাত ইংরেজী গানের অংশবিশেষ।
বাচ্চু ভাই যে কত বড় মাপের একজন গিটারিস্ট, সেটা সেদিন খুব ভাল ভাবে অনুধাবন করেছিলাম। অবলিলায় উনি হয়ে যাচ্ছিলেন মার্ক নফলার, ডেভিড গিলমোর, স্ল্যাশ এবং আরো অনেকে। এল আর বি ব্যান্ড প্রায় কখনোই কনসার্টে কাভার সং করতো না, কিন্তু এ ধরণের ঘরোয়া শো গুলোতে ব্যাপারটা ভিন্ন ছিল।
ঠিক ৭টায় শো শুরু হল। শুরুতেই বাচ্চু ভাই সুন্দর করে বললেন "আপনাদের জন্য পছন্দের গানগুলো গাইবো। আপনারা তো ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশুনা করেন, নিশ্চয় ইংরেজী গান বেশী পছন্দ। আমাদের হিট গানের পাশাপাশি আজ আমরা অনেক কভার সং ও করবো"।
এর পরের ৩-৪ ঘন্টা কোন দিক দিয়ে গেল টের ও পেলাম না। উপরে উল্লিখিত ইংরেজী গানসমূহ ছাড়াও আরো বেশ কিছু বিখ্যাত গান ও এল আর বি ব্যান্ড এর বেশিরভাগ হিট গান গেয়ে ফেললেন বাচ্চু ভাই, তেমন কোন ব্রেক না নিয়েই।

শো এর শেষ গান "সেই তুমি" উনাকে গাইতেই হোল না প্রায়, হল ভর্তি নতুন পুরাতন ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্ররা গেয়ে গেল পুরো গানটা। ওয়ান মোর ওয়ান মোর রব তোলাতে গিটারের মূর্ছনায় ও ফেরারী মন এর করুন সুরে হল ভরে গেল কিছুক্ষনের মধ্যেও।
গান শেষে সবার চোখে পানি। এমন আবেগ খুব বেশি অনুভব করিনি জীবনে।বাসায় ফেরার পথে সারাক্ষণ কানে বাজছিল সেই গানগুলি। এরপরেও এলআরবির অন্য আরো অনেক শো দেখেছি, কিন্তু এরকম হৃদয়স্পর্শী পারফরম্যান্স আর দেখিনি।
আফসোস, বড় ক্ষণজন্মা ছিলেন উনি। উনার কাছে আমাদের যেই ঋণ, তা কখনোই শোধ করতে পারিনি আমরা। একদিকে উপভোগ করেছি উনার গান, আর আরেকদিকে তাকে দিয়েছি গালি, আর করেছি তার চরিত্র হানি। আল্লাহ উনার আত্না কে শান্তিতে রাখুন। আমিন।

(বহুদিন আগের স্মৃতি। কিছু ডিটেইলস এদিক ওদিক হয়ে থাকতে পারে)

Saturday, October 06, 2018

Beirut Diary 8

আগেরদিন রাতেই একজন ট্যাক্সি চালকের সাথে কথা বলে রেখেছিলাম। পূর্ব কথা অনুযায়ী সে তার ছোটখাট নিসান সেডান গাড়ীটি নিয়ে সকাল সকাল আমার এপার্টমেন্ট এ হাজির হয়েছিল। আমি বলেছিলাম ৯ টায় আসতে, কিন্তু অলস আমার নামতে নামতে ৯ঃ৩০ বেজে গেল। হাস্যমুখী চালক এর কাছে সরি বলা শেষ করতে না করতেই সে প্রবল বেগে মাথা নাড়তে নাড়তে "নো প্রব্লেম, নো প্রব্লেম" বলতে লাগলো।

জেইতা গ্রটো বৈরুত থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে। শহর থেকে বের হয়ে সুন্দর একটা রাস্তা ধরে যেতে হয়। আমার সাথে একটা পয়েন্ট এন্ড শুট সনি ক্যামেরা ছিল। সম্ভবত ৮ মেগাপিক্সেল এর। বছর দুয়েক আগে দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে কেনা।

সে যুগে মোবাইলে খুব ভাল ক্যামেরা থাকতো না; আমার নোকিয়া 6230 মোবাইল টিতে ভিজিএ ক্যামেরা ছিল, যা সুন্দর ছবি তোলার জন্য যথেষ্ঠ ছিল না।

যেতে যেতে আমি প্রচুর ছবি তুলছিলাম। ট্যাক্সি ড্রাইভার ব্যাপারটা লক্ষ্য করে বেশ মজা পাচ্ছিল। সে নিজেই কয়েকবার গাড়ী থামিয়ে আমাকে বলেছিল "Take photo here, good view". আমিও তার নির্দেশনা অনুযায়ী ছবি তুলে নিলাম বেশ কিছু।

শহুরে ট্রাফিক জ্যাম এর কারণে প্রায় ঘন্টা খানিক লাগলো ওখানে পৌছাতে। মাঝের ছবি তোলার বিরতী গুলো তো ছিলই।

দু'টি আলাদা আলাদা চুনাপাথরের গুহা নিয়েই জেইতা গ্রটো। সম্মিলিত যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ কিলোমিটার এর মত।

টুরিস্ট দের জন্য দু'টি অংশ খোলা--একটি "আপার গ্যালারী", আর আরেকটি "লোয়ার কেইভস"। গেটের ঠিক বাইরেই বেশ আগ্রহউদ্দিপক একটি শ্বেত শুভ্র মূর্তি স্থাপনা দেখা যায়।

সময়ের প্রহরী বা "গার্ডিয়ান অফ টাইম" নামক এই সুবিশাল মূর্তিটির উচ্চতা ৬.৬ মিটার এবং ওজন প্রায় ৬৫ টন। মূর্তিটি দেখে আমার সত্যি সত্যি গায়ে কাটা দিয়েছিল, মনে হচ্ছিল যেন সিনেমার স্ক্রিণ থেকে বের হয়ে এসেছে কোন প্রহরী।

গ্রটোর ভেতরে যাতায়াত এর জন্য রয়েছে রেলগাড়ী সার্ভিস, এবং এছাড়াও টুরিস্ট দের মনোরঞ্জনের জন্য স্যুভেনির শপ, রেস্তোরাঁ, ইত্যাদি সুবিধাও রয়েছে। রেলগাড়ীটা অনেকটা শিশু পার্ক এর রেলগাড়ীর মত, তবে আরো বড় এবং মজবুত প্রকৃতির।

আপার গ্যালারী জায়গাটাকে খুব বিশেষ কিছু মনে হয়নি। গুহার মধ্যে বিভিন্ন আকৃতির বড় বড় পাথর। পুরো জায়গাটি অবিচ্ছিন্ন, কিন্তু কোথাও কোথাও যাত্রাপথ সরু হয়ে ফটকের মত হয়ে গিয়েছে, যার কারণে মনে হয় ছোট ছোট ঘরে ভাগ করা জায়গাটি।বর্ণনার সুবিধার্থে ঘরই বলি। 

একেক ঘরের দেয়ালের চেহারা একেক রকম। কোনটায় সাদা সাদা, কোনটায় হলদেটে, আবার কোনটা লালচে রঙের পাথরে ভর্তি। বেশ বৈচিত্রময় ব্যাপার স্যাপার।

পনের জন করে একেকটি গ্রুপ এর সাথে একজন করে গাইড ছিল। আমার মত একাকী আর তেমন কেউ আসেনি, সবাই আত্নীয় বন্ধু নিয়েই এসেছে উইকেন্ড কাটাতে। এ কারণে আমাকে কেউ খুব একটা গ্রাহ্য করছিল না, আর আমিও তাদের কথায় খুব একটা কর্ণপাত করছিলাম না। আমি "অনেকের মাঝে একা" মোডে ভালই ছিলাম।

প্রথমে গাইড সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করেছিল "এখানে কি সবাই আরবী পারেন?"। আমি একমাত্র না বোধক ইশারা দেয়ায় সে এবং আমার বাকি ১৪ জন সংগী (!) যারপরনাই বিরক্ত হয়েছিল। এই একটা ব্যাপার আমাকে একাধারে মুগ্ধ এবং অবাক করতো। একজনও আরবী না জানা মানুষ থাকলেও গাইড দের ওপর কড়া নির্দেশনা ছিল তারা যেন মাতৃভাষা ব্যবহার না করে।

যথারীতি বিশেষ আরবীয় এক্সেন্ট সহযোগে গাইড এর ইংরেজী বচন অল্পক্ষণ শুনেই আগ্রহ হারিয়েছিলাম। কোন পাদ্রী কবে পা ফস্কে পড়ে গিয়ে এই গুহা আবিষ্কার করেছিল, সেই ইতিহাস জেনে কি হবে? তারচেয়ে মন ভরে আশে পাশের অপরুপ দৃশ্য গুলয় মনে গেথে নেয়াই শ্রেয় মনে করলাম।

হঠাত সবাই থেমে গেল। আমি সামনের সুবেশী লেবানীজ রমণীর পায়ে পাড়া দিতে দিতে কোন মতে ব্রেক কষলাম। জিজ্ঞাসু নেত্রে গাইড এর দিকে চাইলাম। সে বল্ল "দিস ইজ দ্যা এনদ অফ যে রোড"। আমি বললাম "You mean?".

"Now you gotta get down and ride a boat".

এ পর্যায়ে একটা কথা বলে রাখা দরকার। আপার গ্যালারি তে ঢোকার আগেই আমার (এবং বাকি সবার) ক্যামেরা সমূহ বাজেয়াপ্ত করা হয়, এবং ধরিয়ে দেয়া হয় একটি করে টোকেন। আমি প্রতিবাদ করতে গেলে তারা বল্ল "তোমার ক্যামেরার ফ্ল্যাশ আমাদের জাতীয় সম্পদ এর ক্ষতি করবে। সুতরাং ক্যামেরা এলাউড না"। একই ধরণের ফাইজলামি আচরণ এর শিকার হয়েছিলাম কায়রো যাদুঘরে; চার বছর আগের তুতানখামেন এ







র স্বর্ণ খচিত মূখোশের সাথে ছবি তুলতে না পারার ক্ষত তখনো শুকায়নি--আর সেদিন আবার নতুন করে সেই ক্ষতস্থানে আঘাত পেলাম। জেইতা গ্রটোর গেট এর বাইরে তোলা কিছু ছবিই রয়ে গেল স্মৃতি হিসেবে।

সে যাই হোক, গাইডের কথা মত নৌকায় উঠলাম। নৌকা না বলে ভেলা বলাই ভাল। সবাইকে লাইফ জ্যাকেট দেয়া হল, এবং মনে করিয়ে দেয়া হল যে গুহার মদ্ধ্যে ছবি তোলা নিষেধ। মজার ব্যাপার হল যে কোন নৌকাতেই কোন মাঝি টাইপ লোকজন নেই। টুরিস্ট দের নিজেদেরই বৈঠা দিয়ে নৌকা চালিয়ে এক পাড় থেকে আরেক পাড়ে যেতে হবে।

গুহার ভেতরে বেশ অন্ধকার, কিন্তু তার মাঝে মাঝে হালকা কিছু কৃত্তিম আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানিতে তেমন কোন স্রোত নেই। আমার নৌকাটিতে আরো ৪ জন উঠেছিল; আমরা সবাই বেশ উতসাহের সাথে বৈঠা ঠেলছিলাম, কিন্তু তবুও গতি বেশ মন্থর ছিল।

বৈঠা ছেড়ে চারপাশের দৃশ্যাবলীর দিকে মনোযোগ দিলাম। নৌকা চালানোয় আমার অনাগ্রহ দেখে একজন আরবী তে ইয়াল্লা ইয়াল্লা টাইপ কি জানি একটা বল্লো, কিন্তু আমি তাকে সম্পূর্ণরূপে অবজ্ঞা করলাম।সেও আমাকে আর ঘাটালো না।

নিজেকে মনে হচ্ছিল লর্ড অফ দ্যা রিংস সিনেমার কোন এক চরিত্র। সুপ্রাচিন এক গুহার মধ্যে দিয়ে নৌকা বেয়ে চলেছি, সাথে রয়েছে মহামূল্যবান রিং। সারাক্ষণ আশংকা, কখন পেছন থেকে আততায়ীরা হামলা করবে। অপার্থিব নিরবতা বলে একটি শব্দ সেদিনই মাথায় ঢুকে গিয়েছিল।

ছোটবেলায় ভূগোল বই তে পড়েছিলাম stalactite stalagmite শিলার কাহিনী। তখন নিরীহ ছিলাম, ছোট ছিলাম, শিলা শুনলে পাথরের কথাই মনে পড়তো, মনের মধ্যে বেজে উঠতো না কোন চটুল হিন্দী গানের লিরিক। সে যাই হোক, বিভিন্ন আকৃতি ও বয়সের শিলা দেখতে দেখতে এগুতে লাগলাম। কোনটার উপর আলো পড়লে রঙ বদলে যায়, আবার কোনটা দূর থেকে একরকম আবার কাছে গেলে অন্যরকম। বাস্তবিক, এরকম কোন দৃশ্যের সাথে আমার এর আগে পরিচয় হয় নি।

হঠাত অনেক আলো এসে চোখ ধাধিয়ে দিল। সাথে অনেক মানুষের কোলাহল। পথের হল শেষ। নৌকা থেকে নেমে জানতে পারলাম যে চাইলে আবার একই পথে ফিরে যাওয়া সম্ভব, অথবা এদিক দিয়ে বের হয়ে সরাসরি ট্যাক্সি স্ট্যান্ডেও চলে যাওয়া যায়।

ততক্ষণে শরীরে নেই এনার্জী, খুধাও লেগেছে বেশ। টোকেন ফেরত দিয়ে ক্যামেরা ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে একই ট্যাক্সিযোগে বাসার দিকে রউনা দিলাম। বাসায় গিয়েই খাবারের উপর ঝাপিয়ে পড়ার ইরাদা।

(চলবে)