Thursday, October 22, 2020

নস্টালজিয়া পর্ব ২ঃ রেডিও

"আর মাত্র তিন রান দরকার। ব্যাট হাতে ক্রিজের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন বাংলাদেশ দলের বর্ষীয়ান ও অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। অপর প্রান্ত থেকে দৌড়ে এসে বল ছুড়লেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। কব্জির মোচড়ে ব্যাট ঘুরিয়ে চারটি রান! বাংলাদেশ জিতে গেল। "


"বোলার তার ট্রাউজার খুলে আম্পায়ারের হাতে দিলেন। এবার তিনি দৌড় শুরু করলেন বল করার জন্য"


আমরা বড় হয়েছি রেডিওতে এসব আজব ধরণের ধারাভাষ্য শুনে।


আজকাল গাড়ীতে, মোবাইলে, ইন্টার্নেট ব্রাউজারে--সব খানে রেডিও সহজলভ্য, আর আছে অসংখ্য স্টেশান। এফ এম রেডিওর আগ্রাসনে আমরা ভুলেই গিয়েছি যে আগে বাংলাদেশ বেতার বা রেডিও বাংলাদেশ নামক একটি জিনিস ছিল, যা আমরা ছোট ছোট সাদা কালো রেডিও কিংবা ট্রাঞ্জিস্টারের মাধ্যমে শুনতে পেতাম।


রেডিও কে আবিষ্কার করেছেন? মার্কোনি না ম্যাক্সওয়েল? সেটা নিয়েও একধরণের "প্র্যাংক" এর শিকারও হয়েছি ছোটবেলায়। ভুলে "মার্কোনি" বললেই প্রশ্নকর্তা এসে "কনুই" দিয়ে গুতা মারার চেষ্টা করতো, তাই ভুল উত্তর হলেও ম্যাক্সওয়েল বলাই শ্রেয় ছিল।


রেডিওতে আমার প্রিয় অনুষ্ঠান ছিল "ওয়ার্ল্ড মিউজিক", যা প্রতি শুক্রবার দুপুরবেলায় হোত। খুবই চমৎকার ইংরেজী উচ্চারণের দুইজন আরজে সেই অনুষ্ঠানটি পরিচালণা করতেন, আর সেখান থেকে আমরা শুনতে পেতাম বিদেশী শিল্পীদের অনবদ্য পরিবেশনা। খাতা কলম নিয়ে বসতাম; যে গানগুলো ভাল লাগতো, সেগুলোর নাম টুকে রাখতাম; আর পারলে দুই এক লাইন লিরিক্সও। বলাই বাহুল্য, সে যুগে ইন্টার্নেট বলে কোন বস্তুর অস্তিত্ব ছিল না।


মনে পড়ে প্রিয় গায়ক মাকসুদের উদাত্ত কন্ঠের সুরেলা হাহাকারঃ

"মাঝি তোর রেডিও নাই বইলা জানতেও পারলি না
আইতাছে ভাইঙ্গা এত বড় ঢেউ
সারা বাংলাদেশ জানলো মাঝি
তুই তো জানলি না রে।"


রেডিও না থাকার কারণে ১৯৯১ সালে অনেক মাঝি, যারা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরেতে যেত নৌকায় করে, জানতে পারেনি যে একটি ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে বঙ্গোপসাগরের উপকূল ধরে। সে ঝড়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। সরকারী হিসেব মতে ১৩৮,৮৬৬ জন মানুষ নিহত হয়েছিলেন সে ঝড়ে, এবং প্রায় ১.৭ বিলিয়ন ইউ এস ডলার পরিমাণ সম্পত্তি বিনষ্ট হয়েছিল।




আমরা দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঘরে ব্যাটারী চালিত ছোট রেডিও শুনেছি। বিশেষ করে লোডশেডিং এর সময়ে, যখন টিভি দেখা যেত না। তখনো মোবাইলের সাথে রেডিও সংযুক্ত থাকতো না, আর মোবাইল ফোনও সহজলভ্য ছিল না।

দিন বদলিয়েছে। রেডিও বলতে আমরা যে জিনিস বুঝতাম, আজকালকার মানুষ অনেকে সেই বস্তু চোখেও দেখেনি, দেখবেও না হয়তো।


তারপরেও, বেঁচে থাকুক পুরনো স্মৃতিগুলো।

ছবিঃ গুগল; একজন বাংলাদেশী কৃষক রেডিও শুনছেন।

#nostalgia
পর্ব ২

No comments: