Friday, May 22, 2020

ফ্লপি ডিস্ক এর সেই আড্ডাটা

"ফ্লপি ডিস্ক এর সেই আড্ডাটা"
-ইশতিয়াক খান, #৯৮২১৪০ (৯৮ ব্যাচ, গ্রুপ ২ সাইন্স)




স্কুল জীবনে প্রচুর "পালাইতাম", অর্থাৎ টিফিন পিরিয়ডে ব্যাগ সহ ভেগে যাওয়া, কিংবা স্কুলেই না আসা, এ জাতীয় কাজ প্রচুর করেছি। কিন্তু কলেজে এসে কেন জানি এই ব্যাপারটা মাথাতেও আসতো না।

শুধু সেকেন্ড ইয়ারে অমল কৃষ্ণ বণিক স্যারের বোটানি ক্লাসের ঝিমানি এড়াতে উনার কিছু ক্লাস মিস দিয়েছি। সেটা সংখ্যায় এতই কম যে শেষ পর্যন্ত ঠিকই আমি "পারফেক্ট এটেনডেন্স" এর একটা সুদৃশ্য সার্টিফিকেট পেয়েছিলাম, যা এখনো আমার কাছে রাখা আছে সযত্নে।


কি ছিল এনডিসি তে? পুরো নতুন একটা দুনিয়া। কলেজের গেট দিয়ে ঢুকে কিছুদুর এগিয়ে হাতের ডানে গেলে, একদম শেষ মাথায় একটা ছোটখাট বিল্ডিং ছিল। সেটার নাম ছিল "মার্টিন হল"। কলেজে ভর্তি হবার বহু বছর আগে সেই হলের নিচতলায় একটা বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছিলাম।


সেদিন আব্বা আমাকে, আম্মাকে আর আমার বোনকে "তার কলেজ" ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখেছিলাম আর ভাবছিলাম "বাহ, পড়ালেখার জায়গা কখনো এত সুন্দর হয়?"।


তো সেই মার্টিন হলের উপরে ছিল লাইব্রেরী, যা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। না না, আমাকে বই এর পোকা বা অসম্ভব মেধাবী ছাত্র ভাবার কোন কারণ নেই। লাইব্রেরীতে মূলত যেতাম কম্পিউটারের সামনে বসার লোভে।


সেসময় কলেজের কম্পিউটার ক্লাব ছিল একটা, যেখানে আমাদেরই গুণী সহপাঠীরা, এবং সহকারী লাইব্রেরিয়ান/কম্পিউটার শিক্ষক ব্রাদার (নামটা খেয়াল নেই, সম্ভবত ব্রাদার পালমা) আমাদেরকে এম এস ডস এবং উইন্ডোজ ব্যবহার করা শিখাতেন।


সেই লাইব্রেরী তে ছিল দু'টি ৩৮৬ কিংবা ৪৮৬ মডেলের কম্পিউটার। ডস বা ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেম এর কমান্ডগুলো খুব দ্রুতই শিখে নিয়েছিলাম। সবচেয়ে প্রথমে শিখলাম কিভাবে ফাইল হাইড করে রাখা যায়, এবং কিভাবে কম্পিউটারে থাকা হিডেন ফাইল গুলোকে খুঁজে বের করা যায়। দ্বিতীয় কমান্ডটা ব্যবহার করে কেন কেউ সেই কম্পিউটারের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফ্লপি ডিস্ক নির্ভর মেমোরী থেকে সফট পর্ণ এর কালেকশানগুলো (এই যেমন শ্যারন স্টোন এর বেসিক ইন্সটিংক্ট এর ছবিগুলা, সান্দ্রা বুলক এর সামনের দিকে আগায় থাকা ছবি, সিন্ডি ক্রফোর্ড এর সামার ড্রেস পরা ছবি, ইত্যাদি) মুছে দেয় না, সেটা ভাবতে না ভাবতেই একসময় দেখলাম ছবিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।


এরপর এল উদ্ধারকর্তা হিসেবে ১.৪৪ ইঞ্চির ফ্লপি ডিস্ক। সবাই তাদের ব্যাগে ২-৩টা করে ফ্লপি বহন করতে লাগলো। ফ্লপি গুলোতে জেপেগ ছাড়াও থাকতো বিভিন্ন মজার মজার ভিডিও গেম। ফ্লপি থেকে গেম কপি করে খেলা যেত; ব্রাদার আসেপাশে না থাকলে। খেলা শেষে গেমটা আবার ডিলিট করে দিতে হবে, এটাই ছিল শর্ত। ব্রাদার কাউকে গেম খেলতে দেখলে তেমন কিছু বলতেন না, কিন্তু একবার হলেও মনে করিয়ে দিতেন "আরে গেম না খেলে বড়ং কিছু কাজ শেখার চেষ্টা কর"।


যে গেমগুলো জনপ্রিয় ছিল তার মাঝে আছে Skyroads, Allan Border's Cricket, Dangerous Dave, Paranoid, ইত্যাদি।


এর মাঝে একদিন সবাই বেশ উত্তেজিত, কারণ বাম পাশের কম্পিউটারে ১১ খানা ফ্লপি যোগে ব্রাদার উইন্ডোজ ৩.১১ ইন্সটল করেছেন।


সেই প্রথম গ্রাফিকাল ইন্টারফেস দেখে আমরা সবাই মুগ্ধ। তখন মাইক্রোসফট মাত্র উইন্ডোজ ৯৫ বের করেছে, সেটা চালানোর মত কম্পিউটার পুরো কলেজে এক্টাও ছিল বলে মনে হয় না।


কয়েকদিন ওয়ার্ড পারফেক্ট আর অন্যান্য উইন্ডোজ ভিত্তিক টুলস নিয়ে খুব নাড়াচাড়া চল্লো। ইতিমধ্যে অনেকেই কম্পিউটার ক্লাবের নতুন মেম্বার হচ্ছে, আর তাদেরকে যথারীতি ডস শেখানো হচ্ছে।


এখনো যেকোন কম্পিউটারে ডস এর একটা ভার্সান দেখা যায়। "Run" এ গিয়ে cmd লিখে এন্টার দিলেই চলে আসবে। অথবা কমান্ড প্রম্পট এ ক্লিক করলে। ডস এর একটা মহা শক্তিশালী কমান্ড আছে, যার নাম deltree. এটা মূলত ডিলিটের জন্য ব্যবহার করা হয়।


ধরুন আপনার সি ড্রাইভে একটি ফোল্ডার আছে Movies. সেটার ভেতরে আরো অসংখ্য ফোল্ডার আর ফাইল আছে। সবগুলোকে একবারে মুছে ফেলতে হলে শুধু লিখতে হবে

deltree c:\movies


এক নব্য শিক্ষার্থী বিপুল উতসাহে deltree c:\windows লিখে এন্টার দিয়েছিল।


এর পরের কয়েকদিন ব্রাদার কে দেখেছি কিছুক্ষন পর পর নিজের মাথাটা দুইহাত দিয়ে চেপে ধরতে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমাদের যে বন্ধু এই অকাজটি করেছিল, সে নিজেই গিয়ে ব্রাদারকে বলেছে। ব্রাদার তাকে একটা বকাও দেননি, শুধু হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়েছিলেন।


পরবর্তী ছয় মাসের মধ্য আর উনাকে দেখিনি উইন্ডোজ রিইন্সটল করার হ্যাপা নিতে।


সবাইকে ধন্যবাদ লম্বা লেখা কষ্ট করে পড়ার জন্য।

No comments: