Friday, March 02, 2018

কফির কাপে পরিচয়

কফির কাপে পরিচয়

ওদের রান্নাঘরে ডাবল বার্নারের ইতালীয় চুলা। শখ করে গুলশান এর ডিসিসি মার্কেট থেকে কেনা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল মূলত স্বয়ংক্রিয় , ম্যাচের কাঠি বিহীন আগুন ধরানোর আয়েশী পন্থা উপভোগ করা। কিন্তু, বিধিবাম! কিনে আনার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অতিরিক্ত টেপাটিপি ও অযত্নের শিকার হয়ে সেই সুন্দর সিস্টেমটি বিগড়ে গেল। শখ করে চুলা কেনা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ত্রুটি সারানোর জন্য আর তাকে গুলশান পর্যন্ত বহন করে আর নিয়ে যাওয়া হল না। কিছুদিন পর একটি বার্নার বিকল হয়ে চুলা "সিংগেল" হয়ে গেল।

বেসিনের পাশে, বেশ উচায় কাপ রাখার হোল্ডার টা ড্রিল করে লাগানো হয়েছিল। নিতান্তই লম্বা না হলে বেশ কসরত করে পেড়ে আনতে হয় একটি কাপ কিংবা মগ। মেপে মেপে দেড় কাপ পানি ঢেলে দিতে হয় চা কফি বানানোর সসপ্যানটিতে। ফস করে দেয়াশলাই জ্বালিয়ে চুলা ধরাতে হয় ।

মৃদু আঁচে পানি গরম হতে থাকে।

কাপবোর্ডে নেসকাফে গোল্ড কফির একটি টিন। সাধারণ নেসক্যাফে কিংবা ভেন্ডিং মেশিন এর কফির চেয়ে এই বিনস গুলো খেতে ভাল; তবে এমন কোন আহামরি স্বাদের কিছু না। কিনে নিয়ে আসে ঠিকই, কিন্তু কেউ খুব বেশী খুশী হয়ে পান করে না এই কফি। সারাক্ষণ নর্থ এন্ড আর গ্লোরিয়ার সাথে তুলনা চলতেই থাকে!

প্লাস্টিক এর কৌটায় ৪০০ গ্রাম গুড়া দুধের একটি প্যাকেট। খোলা প্যাকেট এর মুখ প্লাস্টিক এর বাইন্ডার দিয়ে আটকে রাখা। খুব দামী কোন ব্র্যান্ড নয় এর গুড়া দুধ নয়; চা পানের জন্য ফ্রেশ কিংবা মার্কস কেনা হত।

প্রিয় মূহুর্ত! চায়ের চামচে করে চার চামচ দুধ নিতে হয় মগে।তার ওপর ভরা এক চা চামচ কফি। সাথে এক প্যাকেট জিরো ক্যাল। ফ্রিজে থাকা ৮০% ডার্ক চকলেট এর বারটি থেকে এক কোনা ভেঙ্গে ছোট ছোট টুকরো করে কাপে ঢেলে দিতে হয়। তারপর ফুটন্ত সসপ্যান থেকে অল্প একটু গরম পানি ঢেলে দেয়া, এবং চায়ের চামচ দিয়ে প্রবল বেগে নেড়ে নেড়ে একটি থকথকে মিশ্রন তৈরি করা।

বাকি পানিটা একটু পরেই ঢেলে আরেকটু নেড়ে নিতে না নিতেই পুরো ঘর ভরে যায় গলন্ত চকোলেট ও কফির সম্মিলিত ফ্লেভারে তৈরি সুঘ্রানে। নিজের শিল্পকর্মে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট হয়ে কাপে চুমুক দেয় টম। দেখতে না দেখতে আধ কাপ খালি করে ফেলে ও। অতিরিক্ত উতসাহে জিহ্ববা পুড়িয়ে ফেলে ও। এ কি বিপদ হল!

হঠাত বিষন্ন হয়ে যায় টম। পাশের রুম থেকে দু''টি শিশু বিড়াল এর মিউ মিউ ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। টম এর মনে বিষন্নতার পাশাপাশি ভয়, আশংকা, এবং কিছু পরিমাণে অনুতাপ ভর করে।

আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকেই দেখছে রিতা আর রাসেল ওর মত চেহারা বানিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। ওরা এতই ছোট হয়ে গিয়েছে যে বিছানা থেকে নামতেও পারছে না।

আর ওর বহুদিনের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে--দুই হাত ও লম্বা পা নিয়ে ও এখন সব করতে পারছে। কফি শেষ করে কাপ হাতে নিয়ে আয়নায় চোখ পড়লো ওর।

পাশের বাসার মহসীন সাহেব এর বয়স সত্তর এর উপর; কানে কম শুনেন। যা শুনেন, তাও ঠিক মত ঠাহর করতে পারেন না। তাও উনার মনে হল যেন একটি অমানুষিক চিৎকার শুনতে পেলেন তিনি, পাশের বাসা থেকে। বেশিক্ষণ চিন্তা করতে হল না। ভুলে গেলেন কি নিয়ে ভাবছিলেন। চিৎকার রুপান্তরিত হল ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এ।

(শেষ)


No comments: