Wednesday, July 22, 2020

Acoustic Alchemy


৩৩ বছর আগের কথা। দুই ভদ্রলোক ভাবলেন একটি ব্যান্ড বানাবেন। ব্যান্ডের ধারণাটি খুব সহজ ছিল। একজন বাজাবেন স্টিল স্ট্রিং গিটার, আরেকজন বাজাবেন নাইলন স্ট্রিং গিটার। দুই গিটারের ঝংকারে ভরে উঠবে তাদের চারিপাশ। এই দু'জন একুস্টিক গিটারিস্টের যৌথ প্রয়াসে তৈরি হবে এক অনন্য রসায়ন, গিটারে গিটারে চলবে সুরেলা কথোপকথন।

দুই ইংরেজ গিটারিস্ট সায়মন জেমস (নাইলন) ও নিক ওয়েব (স্টিল) “একুস্টিক আলকেমি” ব্যান্ডটি গঠন করেন। কিছু সেশান মিউজিশিয়ানের সহায়তায় তারা দু’টি এলবাম প্রকাশ করেন, যা লাভের মুখ দেখেনি। এর কিছুদিন পরে সায়মন জেমস একুস্টিক আলকেমি ছেড়ে দিয়ে আরেকটি ভিন্ন ব্যান্ড গঠন করেন।
১৯৮৫ সালে নিক এর সাথে পরিচয় ঘটে গ্রেগ কারমাইকেল নামের আরেকজন নাইলন স্ট্রিং গিটারিস্টের, যিনি লন্ডনের বিভিন্ন পাবে বাজাতেন তার ব্যান্ড হলোওয়েজ এর সাথে। এই দুইজন মিলে যে এলবামগুলো রিলিজ করেন, সেগুলোই ক্লাসিক একুস্টিক আলকেমির এলবাম হিসেবে পরিচিত।

এত বছরের দীর্ঘ পথ চলায় ব্যান্ডের মিউজিকে এসেছে অনেক পরিবর্তন; একুস্টিক এর সাথে যুক্ত হয়েছে ইলেক্ট্রিক গিটার, বেইজ, স্যাক্সোফোন, একর্ডিয়ন, ড্রামস এবং আরো অনেক ধরণের পরীক্ষামূলক বাদ্যযন্ত্র। আদ্যোপান্ত ইন্সট্রুমেন্টাল ব্যান্ড (কোন গান নেই, শুধুই মিউজিক) হলেও ২০০৩ সালে এসে তারা তাদের “রেডিও কন্টাক্ট” এলবামে একটি লিরিক্স সমৃদ্ধ গান সংযুক্ত করেন। কিন্তু সব কিছুর পরেও ব্যান্ডের সেই মূল ও প্রাথমিক চেতনা এখনো বহাল রয়েছে—একজন স্টিল স্ট্রিং গিটারিস্ট এবং একজন নাইলন স্ট্রিং গিটারিস্ট গিটারীয় কথোপকথন চালাবেন; আর তাদের সংগীত কে সমৃদ্ধ করার জন্য সাথে আরো আনুষঙ্গিক বাজিয়েরা থাকবেন।
১৯৯৮ সালে নিক ওয়েব ক্যান্সারে মারা গেলে তার স্থলাভিষিক্ত হন গ্রেগ কারমাইকেল এর শিষ্য মাইলস জিলডারডেইল। বর্তমানে এই দু’জনেই ব্যান্ডের মূল সদস্য।

তারা যে ধারার সংগীত বাজান, তা হলো “স্মুথ জ্যাজ”। জ্যাজ মিউজিককে আমরা সবাই মোটামুটি জানি গুরুগম্ভীর, কেতাবী ধরণের সংগীত হিশেবে। জ্যাজ কে কিছুটা পপ ফ্লেভার দিতে, এবং বাণিজ্যিক ও রেডিও ফ্রেন্ডলি বানানোর উদ্দেশ্যে এই ধারাটির উতপত্তি—যাতে সবাই জ্যাজ উপভোগ করতে হয়।

অনেক জ্যাজ বোদ্ধা স্মুথ জ্যাজ এর নাম শুনলেই নাক সিটকায়, কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই ধারার একজন বড় ফ্যান, আর একুস্টিক আলকেমি হচ্ছে আমার সবচেয়ে প্রিয় স্মুথ জ্যাজ ব্যান্ড।
মনোযোগ দিয়ে শুনলে আপনি তাদের ট্র্যাকগুলোতে কোন নোটটি স্টিল স্ট্রিং এর আর কোন নোটটি নাইলন স্ট্রিং এর, সেটা আলাদা করে বুঝতে পারবেন। গান উপভোগ করার জন্য এরকম সূক্ষ ব্যাপারগুলো খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু একবার বোঝা শুরু করলে ব্যাপারটা নেশার মত হয়ে যায়।

গিটারের নোট আলাদা আলাদা করে অনুধাবন এবং উপভোগ করার জন্য উচ্চমানের হেডফোন ব্যবহার করা শ্রেয়। নাইলন স্ট্রিং গিটারের ধ্বনি বোঝার জন্য ফ্লামেংকো সংগীত শোনা যেতে পারে, যেখানে এ গিটারের বহুল প্রচলন। আর স্টিল স্ট্রিং তো সহজেই চেনা যায়।

স্ট্রেস দূর করার জন্য তাদের মিউজিক খুবই উপযোগী। লং ড্রাইভ, কিংবা ঘরের আরামদায়ক কোনা, কিংবা ট্রাফিক জ্যামের বিরক্তিকর সময়, অথবা কঠিন কোন পড়াশোনা—সর্বক্ষেত্রেই আমাকে সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে দুর্দান্ত এই ব্যান্ডটি, তা প্রায় ২৫ বছর হতে চল্লো।
তাদের সর্বশেষ এলবাম “থারটি থ্রি এন্ড আ থার্ড” প্রকাশিত হয়েছে ২০১৮ সালে, যেটি শুনে আমি ফিরে গিয়েছি সেই ১৯৯৬ সালে, যখন প্রথম “দা নিউ এজ” এলবামের মাধ্যমে এই অসাধারণ ব্যান্ডটির সাথে পরিচয় হয়েছিল।

আমরা তখন রেইনবো থেকে ক্যাসেট রেকর্ড করাতাম। একবার রেইনবোর এক রেকর্ডিস্ট বললেন (সম্ভবত সোহেল ভাই) “আপনার ক্যাসেটে এই এলবাম দু’টি রেকর্ড করার পরেও বেশ খানিকটা জায়গা ফাঁকা থাকবে। কবির ভাইকে বলবেন একুস্টিক আলকেমি ফিলার হিশেবে দিয়ে দিতে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা আবার কোন ব্যান্ড? উনি বললেন, আরে ভাই, শুনে দেখেন।পস্তাবেন না।
কবির ভাইকে বলাতে উনি একটু অবাক হলেন। আবার জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হয়ে নিলেন। দিন সাতেক পরে যখন ক্যাসেট হাতে পেলাম, বেশ কিছুদিন আসল এলবাম বাদ দিয়ে একুস্টিক আলকেমি শুনতাম শুধু। পরে ধীরে ধীরে তাদের সবগুলো এলবাম সংগ্রহ করি।
এই ব্যান্ডের কোন খারাপ গান (ইন্সট্রুমেন্টাল) নেই। সার্টিফিকেট দিলাম :-)


পছন্দের একটা গানের লিংকঃ



#ishtiaq_radical

ছবিতে ব্যান্ডের বর্তমান দুই গিটারিস্ট মাইলস ও গ্রেগ।

No comments: