Thursday, April 12, 2018

Beirut Diary Part 3

বৈরুতে বনবাস ৩

আমি একটা জিনিস ভাবতে ভালবাসি, যেটা হচ্ছে প্রত্যেক দেশের আকাশ আলাদা আলাদা। ঢাকার আকাশ আর বৈরুত এর আকাশ কখনোই এক রকম লাগে নাই আমার কাছে। দুইটাই সুন্দর। লেবানন প্রকৃতপক্ষে এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হলেও, এটি মূলত ভূমধ্যসাগরীয় একটি দেশ। দেশটি খুব বেশি মাত্রায় ইউরোপ দ্বারা প্রভাবিত।

ভূমধ্যসাগর এর তীরে অবস্থিত হওয়ায় বৈরুত এর আবহাওয়া ছিল খুবই আরামদায়ক। সব সময় একটা বসন্ত বসন্ত ভাব। না ঠান্ডা, না গরম। এসি ছাড়া চলে না, আবার এসি বেশিক্ষণ চালিয়ে রাখলে ঠান্ডা লাগে--এরকম অবস্থা।

প্রথম দিনের অফিস দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল। সবার সাথে আলাপ পরিচয় আর কুশল বিনিময় করতে করতেই দেখি বিকেল ৪ টা বাজে। মাঝে লাঞ্চ করতে গিয়েছিলাম, যার বর্ণনা আগেই দিয়েছি।

আমি ছিলাম ওদের কাছে রহস্যময় একটি চরিত্র, যার কারন অনেক পরে জেনেছি। সেদিনের বড় এজেন্ডা ছিল সব অধিদপ্তরের লোকজনের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়া। আমি মার্কেট অপারেশান্স এ যোগ দিয়েছিলাম কনসাল্ট্যান্ট হিসেবে। এইচ আর, সেলস, ব্র্যান্ড, প্ল্যানিং, কাস্টোমার কেয়ার--দুই বিল্ডিং মিলিয়ে মোটামুটি ১০টি ফ্লোর জুড়ে ছিল তাদের অফিস।

আমার অফিসটি ছিল "শেভ্রোলে" নামক একটি জায়গায়। ভাবছেন জায়গার নাম কি করে গাড়ীর নামে হয়? এর কারন হল, সেই জায়গাটায় আগে শেভ্রোলে কোম্পানীর একটি সুবিশাল ফ্যাক্টরি ছিল, যেখানে বড় বড় গাড়ী তৈরি হত। ফ্যাক্টরি নেই, কিন্তু নাম টা রয়ে গিয়েছে।জায়গাটার অন্য একটি পোষাকী নাম ছিল, কিন্তু সেই নাম বললে কেউ চিনতো না, তাই আমি কখনোই তা ব্যবহার করিনি।

চাকুরীর সুবাদে এর আগেও বিদেশ ভ্রমণ হয়েছে কয়েকবার, কিন্তু এরকম লম্বা সময়ের জন্য নয়। এবং সে ট্যুর গুলোতে মূলত ২/৩ দিন থেকেছি, এবং অফিস-হোটেল-অফিস এরকম রুটিনেই ছিলাম মূলত। সেবারই প্রথম সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে বিদেশ যাত্রা বলা যায়। অফিস শেষে আর উইকেন্ডে কি কি আমোদ ফূর্তি করবো এ চিন্তায় আমি কিঞ্চিত উদ্বেলিতই ছিলাম বলা যায়।

ছয়টার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে আবিষ্কার করলাম যে পাশেই একটি বড় সড় বার্গার কিং। এর আগে মালয়েশিয়া তে গিয়ে টুইন টাওয়ারের নিচে বার্গার কিং এর বার্গার খেয়েছিলাম, এবং জীবনে প্রথম বারের মত আনলিমিনিটেড সফট ড্রিংক্স এর অপশান পেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। সাত পাঁচ চিন্তা না করে ঢুকে গেলাম ভেতরে। আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম যে হোটেলে গিয়ে আর বের হব না, একবারে ডিনার করেই হোটেল ফিরবো।

"Double Whopper" মিল এর দাম দেখলাম মাত্র ২ ডলার। একটা ডাবল বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস আর এক গ্লাস কোকা কোলা-এই হল মিল। এখানে অনন্ত কোমল পানীয়ের অফারটি ছিল না, তবে তাতে দুঃখ পাইনি এক্টুও।

মেনুর পাশে বড় বড় করে লেখা দেখলাম যে আর ১ ডলার যোগ করলেই আমি আমার মিলটা কে এক্সট্রা লার্জ করে নিতে পারবো। সেটাই নিলাম। অর্ডার দিয়ে কিউ তে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে দেখলাম মোটামুটি সবাই বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে এসেছে ওখানে। কোন একাকী খাদক কিংবা জুটি দেখলাম না, সবার সাথেই ছোট ছোট বাচ্চা কাচ্চা, এবং সবার পরনেই হাল ফ্যাশানের পশ্চিমা পোষাক। সেখানে স্যুট টাই পরা নিজেকে খুবই বেমানান লাগছিল।

আমি ব্যক্তিগত ভাবে স্যুট টাই খুবই অপছন্দ করি। আমার কাছে স্মার্ট ক্যাজুয়াল হচ্ছে সেরা পোষাক। তারপরেও ভাবলাম "দেশের সম্মান", একটা বিদেশী অফিসে জাচ্ছি , সেখানে একটু ফর্মাল না পড়লে কিভাবে হয়?

সেদিন অফিসে অবশ্য সবাই ক্যাজুয়াল পোষাকে ছিল, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম শুক্রবার, সপ্তাহের শেষ দিন বিধায় সবাই ক্যাজুয়াল পড়েছে। কিন্তু পরে জানতে পারি যে ওখানে ড্রেস কোড খুবই শিথিল।

কিছুক্ষণ পর যখন আমার হাতে একটা ট্রে ধরিয়ে দেয়া হল, আমার চোখ কপালে উঠে গেল। বার্গার এর সেই প্রমাণ সাইজ আমি আজো ভুলতে পারিনি। দুই হাতেও ধরতে পারছিলাম না ঠিকমত, এত বিশাল সেই এক্সট্রা লার্জ বার্গার। আমাকে যারা ব্যক্তিগত ভাবে চেনে, তারা জানে আমি অনেক বড় ধরনের খাদক। আমাকে দেখলেও অবশ্য সেটা বোঝা যায়। সেই আমি অনেক কষ্ট করেও পুরো বার্গার শেষ করতে পারলাম না। ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস যা ছিল তা দিয়ে দেশে ৪-৫ জন মানুষের পেট ভরে যেত, আর কোক এর গ্লাসটি কে মনে হয়েছিল অন্তহীন। বরফ দিতে মানা করে দেয়াতে আসলেও পরিমাণে অনেক বেশি পেয়েছিলাম।

আসার সময় রাস্তা চিনে রেখেছিলাম। সেদিন পণ করেছিলাম যে ট্যাক্সি ভাড়া বাচানোর জন্য মাঝে মাঝে হেটে হেটে বাড়ী ফিরবো। সেদিন প্রথম দিন হওয়া তে ডিনার করার পর পরই ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম হোটেলে।

এ ভাবেই শেষ হয়ে গেল লেবাননে আমার প্রথম দিনটি।


No comments: