Friday, April 17, 2020

এডিডাসের বল

এডিডাসের বল


আজকে সারাদিন বাইরে ঘুরাঘুরি করেছি। সকালে নাস্তা খেলাম একটা মেক্সিকান ডেলিতে, আর দুপুরে লাঞ্চ সারলাম কেএফসিতে। দু'টোর জায়গায় তিন টুকরো চিকেন খেয়ে ঢেকুর তুলতে তুলতে বের হয়েই পাকা চুল দাড়ী ওয়ালা এক বুড়ো লোকের সামনে পড়লাম। তার কুঞ্চিত ভ্রু দেখে ভাবলাম এই বুঝি বকা খেতে হবে। দৌড়ে পালালাম সেখান থেকে। পালাতে পালাতে ভাবছিলাম "লোকটা আমার দৌড় দেখেও এক্টুও নড়লো না কেন?"
বাসায় ফিরে না গিয়ে কিছুক্ষণ পাড়া বেড়ালাম। চারটা বাজতে খেলার মাঠের দিকে এগুলাম।
মাঠে গিয়ে সব বন্ধুদের সাথে দেখা হয়ে গেল। ওদের সাথে ফুটবল খেল্লাম। কারা জানি একটা সুন্দর এডিডাসের বল ফেলে গিয়েছিল মাঠে। সেটা দিয়েই খেলা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে । বলের পাম্প কমে গিয়েছে; খেলা খুব একটা যুতসই হলো না।
ঘন্টা দুয়েক খেলার পর সবাই যে যার পথে চলে গেল।
রাস্তা বেশ শুনশান। এক্টু পরেই সন্ধ্যা নামবে। বাড়ীর দিকে পা বাড়ালাম। অল্প সময়েই পৌছে গেলাম বাসায়।
খোলা দরজা দিয়ে সোজা ঢুকে গেলাম ঘরের ভেতর। সামারফিল্ডের চার নাম্বার লেইনে আমাদের বাড়ীটা অনেক দূর থেকে চোখে পরে ছাদের কড়া নীল রঙের কারণে।
লিভিং রুমে চলছে টিভি। সংবাদ পাঠের জোরালো শব্দে ঘর ভরে গিয়েছে। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কিচেনের দিকে গেলাম।
ফ্রিজ থেকে দুধের জগ বের করে এক গ্লাস দুধ ঢেলে নিলাম গ্লাসে। দুধ ফুরিয়ে যাচ্ছে; আর বড়জোর দেড় গ্লাস হবে।
এতদিন আম্মা জোর করে করে খাওয়াতো, তখন খেতে ভাল লাগতো না। আব্বা বলতো সারাদিন প্লেস্টেশান না খেলে বাইরে গিয়ে খেলতে। তখন বিরক্ত লাগতো। এখন খালি ফুটবল খেলতে ইচ্ছা করে। তুরিন, মাহির, রিকি, নিনা সবারই এক অবস্থা।
হঠাত বাবা মায়ের কথা মনে পড়লো আমার। পাশের রুমেই আছে দুইজন। ঘুমাচ্ছে। অনেকদিন ধরেই ঘুমাচ্ছে। প্রতিদিনই গিয়ে ডাকাডাকি করি ওদেরকে কিছুক্ষন, কিন্তু ওঠে না। ঘরে পিপড়া আসছিল অনেকগুলা, আমি ইন্সেক্ট কিলার দিয়ে সবগুলোকে মেরে ফেলেছি। বাবা মা ঘুমিয়ে থাকলেও তাদেরকে পিপড়া কেন কামড় দিবে?
এদিকে টিভিতে কড়া ব্রিটিশ উচ্চারণে সংবাদপাঠক বলে যাচ্ছে "এটি একটি পূর্বে ধারণকৃত বার্তা। এই বার্তাটি যদি আপনি দেখে থাকেন, বা শুনে থাকেন, তাহলে আপনি একইসাথে ভাগ্যবান এবং দুর্ভাগা। আমরা পারিনি সময়মত ভাইরাসটি ঠেকাতে; ৮ বছর বয়সীরা ছাড়া এই মুহুর্তে পৃথিবীতে কেউই বেঁচে নেই। আমরা জানি না আপনারা কিভাবে এই পৃথিবীটাকে নতুন ভাবে গড়ে তুলবেন, কিন্তু আশা করি আমাদের মত ভোগ লালসা আর স্বার্থপরতায় ভরা পৃথিবী বানাবেন না আরেকটি"।
চোখে কেন জানি পানি চলে আসে আজকাল। কিন্তু কাঁদতে পারি না। বাবা মা ঘুম থেকে উঠলেই আবার সব আগের মত হয়ে যাবে, জানি।
এডিডাসের বলটার জন্য একটা পাম্পার ও কিনে দিবে, তাই না?

No comments: