Wednesday, November 06, 2019

ট্যাগোর সাহেব এবং একজন আমি

র‍্যান্ডম স্মৃতিচারণা -১

সময়টা ২০০৬-০৭ এর দিকে। তখন ভারতবর্ষে এয়ারটেল নামক মোবাইল ফোন কোম্পানীটি বেশ নাম করেছে। কেবল টিভিতে তাদের বিবিধ সুযোগ সুবিধার বিজ্ঞাপন দেখে এদেশী ভোক্তাদেরও চাহিদা ও আকাঙ্খা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সেসম সম্পূর্ণ নতুন একটি সেবা বেশ প্রচার পায়।

কারিগরী পরিভাষায় সেবাটির নাম "কলার টিউনস/কলার রিং ব্যাক টোন" সার্ভিস; সংক্ষেপে সি আর বি টি (CRBT).  তবে সবাই এটাকে "হ্যালো টিউন্স" নামেই চিনতো, কারণ এয়ারটেলের সার্ভিসটির ব্র্যান্ড নাম সেটাই ছিল। বেশ কিছু মজার মজার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তারা সেই সেবাটির প্রচারণা চালাচ্ছিল। অল্প সময়েই তারা অনেক গ্রাহক পেয়ে যায়।

সেসময় আমি দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি মোবাইল অপারেটরের ভ্যাস ডিপার্টমেন্টে কাজ করতাম। আমার উপর দায়িত্ব এলো এই সার্ভিসটি লঞ্চ করার। প্রায় তিন মাসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং কলিগ বন্ধুদের অপরিসীম সহযোগিতায় লঞ্চ হয়েছিল আমাদের "আমার টিউন্স" সার্ভিস।

সার্ভিসটি আসলে কি? যখন একজন মোবাইল গ্রাহক (ধরা যাক সে "ক") অন্য আরেকজন মোবাইল গ্রাহক কে ফোন দেয় (ধরা যাক সে "খ"), তখন ক, যতক্ষন পর্যন্ত না খ ফোনটি রিসিভ করছে, ততক্ষন একটি "রিং ব্যাক টোন" শুনতে পান, যা "টুট টুট" ধরণের একটি শব্দ। সাধারণত ৩০ থেকে ৪৫ সেকেন্ডের মধ্যেই রিং ব্যাজ টোন বাজার পর কলটি "মিসড কল" হয়ে যায়। কলার টিউন্স বা হ্যালো টিউন্স সার্ভিসটি মূলত এই জেনেরিক টুট টুট শব্দটির পরিবর্তে যেকোন গান বা সাউন্ড ক্লিপ বাজায় গ্রাহকের জন্য।

অল্পদিনেই সার্ভিসটি খুব জনপ্রিয়তা অর্জন করে।বন্ধু তাহসান এর "বিন্দু আমি" গানটি ব্যবহার করা হয়েছিল বাংলালিংক এর "আমার টিউন্স" সার্ভিসের জিঙ্গেল হিসেবে। সেই জিংগেল এবং বিজ্ঞাপনটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল অল্প সময়েই। বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে তাহসান নিজেই ছিল।

এসময় অর্ণবের একটি কনসার্ট দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে নতুন পুরনো, শোনা, না শোনা অনেকগুলো চমৎকার গান শোনার চমৎকার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলাম। বনানীর একটি রুফটপ রেস্তোরায় এই শোটি হয়েছিল। খুব বেশি দর্শক ছিল না; স্বল্প দর্শকের কারণে অর্ণবও বেশ রিলাক্সড ছিলেন। ব্রেক টাইমে ভদ্রলোক আউটডোর এরিয়াতে ধুম্রপান করতে গেলে আমি আর আমার স্ত্রী গিয়ে তার সাথে কিছুক্ষন গল্প স্বল্প করার সুযোগ পাই। সাথে সেলফি তোলার সূবর্ণ সুযোগটিও হাতছাড়া করি নাই।

বেশ কিছু গান শেষ করার পর অর্ণব বেশ মারফতি টাইপের একটা গান বাজালো। গানটা আগে শুনেছি শুনেছি বলে মনে হলেও ঠিক চিনতে পারলাম না। তবে লাইনগুলো মাথায় ঢুকে গিয়েছিল।

কিছুদিন পর দেখলাম কলার টিউন হিসেবে সেই গানটা সেট করা যায়। সেট করে রাখলাম। অনেকেই ফোন দেয়, আমি দেরী করে ফোন ধরি। শুনুক সবাই সুন্দর গানটি। এর মাঝে একদিন আমার ছোটবেলার এক বন্ধু ফোন দিল। সেও টেলিকমেই জব করে, কিন্তু ভিন্ন কোম্পানীতে। সে আবার বেশ সংস্কৃতিমণা এবং সুশীল প্রকৃতির। সে কোন বন্ধুর সাথে তুই তোকারি করে না।

কথোপকথনটি ছিল এরকমঃ

"কিরে বন্ধু, খবর কি?
এইতো ভাল। তোমার খবর কি?
আছি ভালোই। তা তুমি হঠাত এরকম রোমান্টিক হয়ে গেলা কেম্নে?
মানে?
কলার টিউন্স এ রবীন্দ্র সংগীত দিয়ে রাখসো!
এ! আমি তো অর্ণব এর গান দিসি!
আরে ব্যাটা, ঐটা তো রবীন্দ্র সংগীত। অর্ণব কভার করসে।

আমার তো তখন পুরাই আক্কেল গুড়ুম। এতক্ষণে বুঝলাম যে কেন "মাঝে মাঝে তব পাই" গানটিকে এত পরিচিত লাগছিল। তড়িঘড়ি করে টিউন পরিবর্তন করে মেটালিকার "ফর হুম দ্যা বেল টোলস" দিয়ে দিলাম। আর যাই হোক, মানুষ আমাকে ট্যাগোরপ্রেমী হিসেবে চিনবে, এ আমি ভাবতেই পারি না।


Good old days

#ishtiaq_radical




No comments: