Sunday, September 08, 2019

এসবুক সমাচার

২৪২০ সাল।

না, পৃথিবী ধ্বংস হয়নি। বাংলাদেশও বেচে আছে বহাল তবিয়তে। গ্রীণ হাউজ এফেক্ট বলে কিছু আর নেই; এই শব্দটি শুধু বই পুস্তকেই পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের সফল গবেষণায় মানুষের সকল দুঃখ দুর্দশা ও কাজ অনেক কমে গিয়েছে। এখন আর কাউকে হাল চাষ করতে দেখা যায় না; কৃষিপ্রধাণ বাংলাদেশ হয়ে গিয়েছে মোবাইল প্রধাণ।

বেশিরভাগ মানুষ সারাদিন মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকে। গত ৫০ বছরে এক নতুন প্রযুক্তি এসেছে; এসবুক নামের একটা সাইটে সারাদিন বসে থাকলে একাউন্টে এম্নিতেই টাকা আসতে থাকে। এর সাথে যদি কেউ লেখালেখি করে আর লাইক কমেন্ট করে, তাহলে আরো বেশি টাকা আসে! এই আশ্চর্য আবিষ্কারের জন্য ফার্ক জুতারবাগ কে নোবেল, গ্র্যামি এবং পুলিতজার পুরষ্কার দেয়া হয় একইসাথে।

এই সাইট ব্যবহারের একমাত্র শর্ত হল নিজ "এস", অর্থাৎ পশ্চাতদেশ কে একটা চেয়ার কিংবা অনুরুপ কোন জায়গায় বসিয়ে রাখতে হবে। উঠে হাটাহাটি করা যাবে না। সিট ছেড়ে উঠলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ১০ টাকা জরিমানা হয়।

এই ধারার সাথে মিল রেখে ঢাকা শহর জুড়ে চালু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ এস ফুড রেস্তোরা। স্বয়ংক্রিয় রোবট দ্বারা চালিত এসব রেস্তোরাঁয় সবচেয়ে জনপ্রিয় আইটেম চিজ বার্গার ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। শোনা যাচ্ছে শীঘ্রই ভ্রাম্যমাণ টয়লেট ও চালু হবে, তখন আর কাউকে জরিমানা গুনে শৌচকাজ সমাধা করা লাগবে না, নিজের এস এর উপর বসে থেকেই কর্ম সারা হয়ে যাবে।

রহিম বেপারীর পূর্ব পূরুষেরা এক কালে ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিলেন। তবে বর্তমানে এসবুক ব্যবহার ছাড়া ভদ্রলোক তেমন কিছু করেন না। উনি ২৩৪৪ সালে বিবিসি এবং ২৩৪৬ সালে সিএনএন পরীক্ষায় পাশ করেন। উনি বিসি ৪৪৪৬ নামের একটি (বিবিসির বি সিএনএন এর সি) একটি এসবুক গ্রুপের এক্টিভ সদস্য। আগে দৈনিক ১০-১২ টা "এস" এর ছবি দিতেন গ্রুপে। পরবর্তীতে লিটু নামের এক বেয়াদ্দপ এডমিন এস্ফি কে বেআইনি ঘোষণা করায় সে খুব বিপদে পড়েছে।

আরেকজন এডমিন আছে, তার নাম লোভী। এই এডমিন আসলেই লোভী। তার লোভ লালসার কারণে রহিম বেপারীর মত নম্র ভদ্র সাধারণ ইউজাররা প্রায়শই উষ্মা প্রকাশ করে বলে "এর চেয়ে নারিকেল গাছে এস বেধে আত্নহত্যা করাও বেটার"।

এসব পোস্ট দেখলেই রহিম লাইক দেয়। তার বন্ধু করিম একদিন তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আরো ১০০ বছর আগেই নারিকেল নামক ফলটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, এখন বড়জোর বড়ই গাছ খুজে পেতে পারে সে। এ কথা শুনে হুহু করে কেদে উঠেছিল রহিম। সেই হুহু করে কাদার এস্ফিটাও বেরসিক লিটু ডিলিট করে দেয়।

এহেন স্বৈরাচারী অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেক চিন্তা করতে থাকে রহিম। হঠাত মাথায় আসে আইডিয়া! আর্কিমিডিসের মত ইউরেকা ইউরেকা বলে নগ্ন হয়ে দৌড় দেয়ার কথা ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে যায় তার, উঠলেই তো ১০ টাকা জরিমানা। আবার এস কে আগের জায়গায় নিয়ে যায়। ওঠার প্রয়াস নেয়ায় ২ টাকা জরিমানা হয় তার। আরেকটু দেরী হলেই পুরা ১০ টাকা গচ্চা যেত।

অনেকদিন ধরেই সে লক্ষ্য করছে যে থাকার জায়গা নিয়ে অনেকের সমস্যা। বিশেষত, অনেকেই পছন্দ করে ৪৪৪৬ বন্ধুদের কাছাকাছি থাকতে (গুর্দা ফ্রান্স বলে কথা!)। সুতরাং যারা এসস্থান নিয়ে চিন্তিত, তাদের সকল সমস্যা দূর করার জন্য নিমিষেই রহিম খুলে ফেলে নতুন একটি গ্রুপ--নাম দেয় "TOLET4446"। তার গুর্দাতালিকার সকল ফ্রান্স কে এড করে ফেলে নতুন গ্রুপে। বেশ আত্নতৃপ্তি নিয়ে সে ঘুমাতে যায় সেদিন।

সকালে ঘুম থেকে উঠতেই বমি চলে আসে তার। পুতিগন্ধময় একটা দূষিত পরিবেশ। চারপাশে গন্ধের উতস খুজতে গিয়ে টের পায় তার টেরাগ্রিন ব্র্যান্ডের মোবাইল থেকেই আসছে গন্ধ। হঠাত মনে পড়ে যায়, গত পরশু মোবাইলের স্মেল অপশনটা চালু করেছিল একটা খাবার দাবার গ্রুপে ঢোকার সময়। নব্য এই প্রযুক্তিতে যেকোন খাবারের ছবি দেখলে সেখান থেকে সেই খাবারের গন্ধও পাওয়া যায় মোবাইলের মাধ্যমে। ব্যাপারটা যে খাদ্য ছাড়া অন্যান্য জিনিসের জন্যেও কাজ করে, সেটা সে কষ্মিনকালেও ভাবেনি!

তীব্র আতংকের সাথে মোবাইল স্ক্রিণে তাকালো রহিম। গন্ধে তার দম আটকে আসছে। সে দেখলো, আবেগের আতিশয্যে TOLET না খুলে সে TOILET4446 নামের গ্রুপ খুলে ফেলেছে, আর সেখানে তার ১৬ সহস্র বন্ধুর সকলে এক রাতের মধ্যেই স্বীয় টয়লেটের ছবি মোবারক প্রদান করে রেখেছে।

জ্ঞান হারানোর আগ মুহুর্তে রহিমের শেষ চিন্তা "কেন যে গ্রুপ খুলতে গেসিলাম। আগেই ভালো ছিলাম!"।

পুনশ্চঃ সম্পূর্ণ কাল্পনিক গল্প। জীবিত কিংবা মৃত কোন ব্যক্তি বা ঘটনার সাথে কোন মিল থাকা নিতান্তই কাকতালীয়।

No comments: