Wednesday, September 11, 2019

ডেডলাইন সেভেন ডেইজ

Deadline Seven Days

#সিনেমারগল্প৯৬৯৮ 

প্রথম হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয়েছিল রায়েরবাজারের মুক্তি সিনেমা হলে। ব্যাপারটা ছিল অনেকটা পারিবারিক পিকনিক এর মত। আমার নানার বাসা ছিল রায়েরবাজার হাই স্কুলের ঠিক উলটা দিকে। মামা খালা খালাতো ভাই বোন সবাই মিলে বিশাল একটি দল গিয়েছিলাম "আলি বাবা চল্লিশ চোর" দেখতে।

পুরাই পারিবারিক সিনেমা ছিল। আলীবাবার গল্প আগেই জানতাম, কিন্তু জানতাম না যে তার বড় ভাই "কাশিম বাবা" এত খারাপ ছিল। এটাও জানতাম না যে দাসী মর্জিনা এরকম শর্ট জামা পরে নাচতে নাচতে দস্যুদের দফা রফা করে দিবে। অবশ্যই গামলায় গরম তেল ঢেলে।

সে যাই হোক। এটাকে আমি প্রথম সিনেমা দেখার গল্প হিসেবে মেনে নিতে রাজী না।

ঐ ঘটনার বেশ কিছুদিন পর আমি, আমার কাজিন আর ছোট মামা--আমরা তিনজন দাবী/আব্দার জানাইলাম আরেকটি সিনেমা দেখতে যাওয়ার। উনারা কোন এক বিশেষ কারণে "ভয়ংকর সাতদিন" নামের ছবিটি দেখার জন্য বেশ উৎসাহিত ছিল। আমার তেমন কোন অভিমত ছিল না ঐ ব্যাপারে, সিনেমা হলে যাওয়ার ব্যাপারটাকে আমি সুস্থ(!) বিনোদন হিসেবেই দেখছিলাম এবং আবদারে শামিল হয়েছিলাম।

বহু অনুনয় বিনয় এবং প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর অনুমতি এবং টিকেট কাটার জন্য প্রত্যাশিত অর্থ পাওয়া গেল। মামা সাথে ছিল দেখে আর কোন এক্সট্রা মুরুব্বী যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করে নাই। প্রতিশ্রুতি সমূহের মধ্যে ছিল সর্বদা মাগরিবের আজানের আগে বাসায় আসা, সময় মত পড়তে বসা, আউট বই না পড়া এবং সময় নষ্ট করা (এগুলার কোনটাই পরে আর মানা হয় নাই)।

সেই একই মুক্তি হলে দেখতে গেলাম "ডেড লাইন সেভেন ডেইজ" নামের দুর্ধর্ষ চলচ্চিত্রটি। হ্যা, পোস্টারে ভয়ংকর সাত দিনের নিচে ইংরেজিতে ওই তর্জমাটি দেয়া ছিল। উহা দেখিয়া আমার স্বল্প লব্ধ ইংরেজী জ্ঞান অলট পালোট হয়ে গিয়েছিল পুরাই!

সিনেমার কাহিনী সংক্ষেপ হইলো ইলিয়াস কাঞ্চন নীতিবান পুলিস আর দিতি কোন এক স্মাগলারের বোন। উনাদের প্রেম ছিল, কিন্তু তাদের আত্নীয় স্বজনের পেশার(!) কারণে তাদের প্রেম বেশিদূর গড়ায়নি। কিন্তু তারা নায়ক নায়িকা না। দিতির ছোট বোন আর ইলিয়াস কাঞ্চনের ছোট ভাই প্রেম শুরু করে। যতদূর মনে পড়ে, আকাশের দিকে তাকায় মেয়েটা কলেজের গেটের বাইরে হাটতেসিল, আর তখন গিয়ে ঐ বেটার গায়ের উপর ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করে। তারপর একটা উদ্ভট গান শুরু হয় আর তারা নাচতে নাচতে প্রেমিক প্রেমিকায় রুপান্তরিত হয়।

এক পর্যায়ে কাহিনী সিরিয়াস হয়ে যায়। বৃত্তান্ত জানতে পেরে বুড়া বুড়ি ভেটো দেয় তাদের প্রেমে। "না না না না ...(ধুর না, এইটা কোন গানের ফার্স্ট লাইন না) এই বিয়ে হতে পারে না" বলে ইলিয়াস কাঞ্চন এক্তা চিক্কুর দিসিলো মনে আছে।

অতঃপর তাহারা পলায়ন করিয়া কোর্টে বিয়ে করতে গেলেন। কিন্তু ওখানে আবিষ্কৃত হইলো যে মেয়ের বয়স ১৭ বছর ৩৫৮ দিন--কাজী সাহেব তাহাদেরকে বলিলেন সাত দিন পরে আবার আসতে।

সেখান থেকেই শুরু হলো "ভয়ংকর সাত দিন"। সেই সাত দিনের রোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করে মজা নষ্ট করবো না। ইউটিউবে মনে হয় সিনেমাটি পাওয়া যাবে খুজলে। বহুদিন আগে দেখা সেই সিনেমায় কিছু "রগরগে" সিন ছিল। সাত দিন তো আর ঘুমায় ঘুমায় কাটাবে না, নাকি? মানে ঘুমানোর আগে তো আরো অনেক কিছু করার আছে :D

হল থেকে বের হয়ে বুঝলাম যে কেন এই ছবিটাই দেখার জন্য এত উতসাহ ছিল সবার। বহুদিন আগে দেখেছি, কাহিনী কিছু এদিক ঐদিক হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু মজা ঠিকই পেয়েছিলাম, এবং নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছিলাম যে সাথে আর কোন মুরুব্বী আসে নাই! তাইলে নির্ঘাত পিঠে বেতের বাড়ি পরতো।

পুরনো সেই দিনের কথা...

আল্লাহ সালমান শাহ এর বিদেহী আত্মা কে শান্তি দিন।

#ishtiaq_radical

No comments: