Sunday, February 21, 2021

একুশে ফেব্রুয়ারী, ২০২১

আজকে শহীদ দিবস, এবং একইসাথে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস।
ইহধামে প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় কাটিয়ে (যেহেতু করোনার টিকা গ্রহণ করে ছবি দিয়েই ফেলেছি ফেসবুকে, তাই এখন আর বয়স লুকানোর চেষ্টা করে লাভ নেই) আমার উপলব্ধি এটাই, যে এই দিবসের ব্যাপারে আমাদের তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই।
সরকারী ছুটি উপভোগ করা ছাড়া, এই দিবসকে কেন্দ্র করে আমাদের কি আদৌ কোন কার্যক্রম আছে? আজকে শুনলাম তিন দিনের ছুটি পেয়ে নাকি লাখ লাখ মানুষ ঝাঁকে ঝাঁকে কক্সবাজার জিন্দাবাজার সিলেট ও বিলেতের দিকে রওনা দিয়েছে! (নাকি ঝাঁক ঝাঁক মানুষ লাখে লাখে হবে?)
হ্যা, সরকারী পর্যায়ে কিছু কার্যক্রম থাকে, যেমন পুষ্পস্তবক অর্পণ, পদক প্রদান, ইত্যাদি, কিন্তু, এর সাথে বাংলা ভাষার চর্চার কোন সুস্পষ্ট যোগসূত্র খুজে পাওয়া দুষ্কর।

বই মেলায় যাওয়ার একটা ব্যাপারও থাকে--কিন্ত এসবের পেছনে মূল কারণটি কি?
امر نام اشوتیےقے

শুধু কল্পনা করুন, "আমার নাম ইশতিয়াক", এই কথাটা যদি এভাবে, উর্দুতে লিখতে হোত, তাহলে আমার জীবনটা কেমন হোত?

হ্যা, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে "রাষ্ট্র ভাষা বাংলা" প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে আজও হয়তো আমাদেরকে উর্দু হরফ ব্যবহার করে বাংলা লিখতে হোত। হয়তো আমরা আজও থেকে যেতাম পূর্ব পাকিস্তান।

তিতুমিরের বাঁশের কেল্লা থেকে যে দামামা বাজা শুরু হয়েছিল, তা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ, ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাজন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, এবং অবশেষে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ তৈরি করে দিয়েছে।

আমার কাছে মনে হয় ২১শে ফেব্রুয়ারীতে আমাদের উচিত বাংলা ভাষার চর্চা করা, বা শুদ্ধ বানান ও ব্যাকরণের মাধ্যমে বাংলা লেখা, শুদ্ধ উচ্চারণের মাধ্যমে বাংলা বলা, এবং সর্বোপরি, মাতৃভাষার গুরুত্বটা সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করা। আর কিছু না পারেন, এইদিন অন্তত শুদ্ধ বাংলায় একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার চেষ্টা করেন ("আমি ভাত খেয়েছি" টাইপ না ভাই, আরো কিছু লিখুন!)।

আমার বন্ধু তালিকার অনেকেই সন্তানের পিতা/মাতা। অনেকের নাতী নাত্নীও আছে।

আমাদের উচিত সন্তানদেরকে নিজ ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা; নির্ভুল বাংলা লেখা ও বলার একটা ইচ্ছা যেন তাদের মাঝে জাগ্রত হয়, তা নিশ্চিত করা।

বিভিন্ন কারণে আজ আমরা অনেকেই আমাদের সন্তানদেরকে ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে পড়াচ্ছি। কিন্তু এ ব্যাপারে যত্নশীল থাকতে হবে, যাতে স্কুলগুলো আমাদের সন্তানদেরকে বাংলা শেখায়।

আমি যখনই আমার মেয়ের স্কুলে গিয়েছি, চেষ্টা করেছি ওর বাংলা শিক্ষকের সাথে দেখা করার। নিন্দুকেরা বলবে যে উনি একজন "শিক্ষিকা" বিধায় আমার এহেন আচরণ, কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আমি আসলেই চেয়েছি মেয়ের বাংলা শিক্ষার ব্যাপারটা নিয়ে নিজেকে হালনাগাদ রাখতে। (হালনাগাদ মানে আপডেট; এই দাঁতভাঙ্গা বাংলা আমি নিজেও জানতাম না কিছুদিন আগেও!)

বাংলা ভাষা, বাংলা বানান ও ব্যাকরণ নিয়ে মানুষের গা ছাড়া ভাব দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত, বিরক্ত, বেদনাবিধুর ও কর্দমাক্ত। দুঃখিত, শেষেরটা ভুলে লিখে ফেলসি; তবে সেটাও খুব একটা অসত্য নয়।

চিন্তা করুন, এই যে ফ্রিতে মোবাইল ও ল্যাপটপে বাংলা লিখছেন--এর জন্য যদি অমুক ভাইকে টাকা দিতে হোত নিয়মিত ভিত্তিতে, তাহলে কেমনটা লাগতো?

এই দিনে বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে প্রচলণের চেষ্টা করুন, আপনার সন্তান, পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধবদের শুদ্ধ বাংলা বলা ও লেখার গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত করুন, আর অভ্র কিবোর্ডের প্রোগ্রামার/স্বপ্নদ্রষ্টা ডাঃ মেহদী হাসান খান কে ধন্যবাদ দিন সর্বান্তঃকরণে।

তিনি একজন বোকা মানুষ। ভাল, কিন্তু বোকা। বোকা না হলে এরকম একটি স্বর্ণ খনি কেউ মানুষকে ফ্রিতে ব্যবহার করতে দেয়?

ভাল কথা, বাংলা ভাষার চর্চা প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আবার আপনার বন্ধু তালিকার ব্রিটিশ, স্প্যানিশ কিংবা উজবেক (উজবুক না) বন্ধুদের গুগল ট্রান্সলেটর ব্যবহার পূর্বক বাংলা লিখতে বাধ্য করবেন না। ইসলাম ধর্মে জোরজবরদস্তি নিষেধ করা হয়েছে।

ধন্যবাদ।
২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

No comments: