Thursday, January 04, 2018

জানালার পাশে পর্ব ১

রাত বাজে ৩ টা।

একটার পর একটা গাড়ী চলে যাচ্ছে ধূলোর ঝড় উড়িয়ে। গাড়ীর জোরালো শব্দ বার বার রাতের সুনশান নীরবতা কে বিঘ্নিত করছে। জানালা টা নামিয়ে দিবে ভাবছে নীল, কিন্তু আবার বাতাস টাও মন্দ লাগছে না।

(ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে গান। খুব কম ভলিউমে, কান পাতলে শোনা যায় লিরিকসঃ
The cars hiss by my window,
Like the waves down on the beach)

রাত ১ টার পর থেকে একটা অদ্ভত সময় শুরু হয়। বেশিরভাগ মানুষ ১ টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সময়টা ঘুমিয়ে উপভোগ করে। নাইট শিফট এর কর্মীদের কথা অবশ্য আলাদা।

নীল এর ৯-৫ চাকরী। সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হয়, কিন্তু তাও রাতে বেশি ঘুমায় না। বহুদিনের অভ্যাস।

(একই লাইন আবার রিপিট হচ্ছেঃ
The cars hiss by my window,
Like the waves down on the beach)

কাছেই রকি বিচ। ঢেউ এর মৃদুমন্দ ঝংকার এর সাথে প্রিয় শিল্পীর সংগীত। Blues ধাচের গান।

স্টিয়ারিং হুইল ধরে আছে মিরিন। অনেক্ষন ধরে গাড়ীর ইঞ্জিন নিস্তব্ধ। গাড়ীর সব বাতি নেভানো, শুধু স্টেরিও তে চলছে গান। নীল তাকিয়ে আছে মিরিন এর দিকে। মেয়েটা একদম হাতের নাগালের মদ্ধ্যে, কিন্ত তবু কেন জানি বহুদুরে।

(গানের পরের লাইন বাজছেঃ
I got this girl beside me
But she's out of reach )

নীল এর মনে পড়ে যায় উদ্দাম ইউনিভার্সিটি জীবনের কথা। ওর জন্ম ও বেড়ে ওঠা এ দেশেই। ছোটবেলা থেকেই গ্রেকো রোমান কুস্তিগীড় এর প্যাঁচের মত করে দৃঢ় আলিংগনে জড়িয়ে ধরেছিল সে পশ্চিমা জীবন কে। তাকে দেখলেও সহজে মানুষ বুঝতো না যে তার পূর্বপুরুষ রা এসেছিল দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গরিব দেশটি থেকে। সে জীবনেও দেখেনি পা দিয়ে কাউকে বেশিক্ষণের জন্য ফুটবল খেলতে।

মায়ের ভাষা সে ভুলেই যেত, যদি না প্রতিদিন দেশ থেকে ফোন রিসিভ করতে হত। মা একবার কল করলে আর ছাড়তেই চেত না।

এরকমই একদিন ম্যাকডোনাল্ডস এ বসে মায়ের সাথে কথা বলছিল নীল। তাকে খাবার দিচ্ছিল একটি পূর্বদেশীয় ছিপছিপে তরুণী। ফোনে মশগুল থাকায় ভাল করে খেয়াল ও করেনি কি বলছিল তাকে মেয়েটি। সে মায়ের দীর্ঘ আলাপ থেকে মুক্তির পথ খুজছিল। মা ঘুরে ফিরে খালি একটা কথাই বলছিল।

"কোর্স শেষ করে দেশে আয়, বিয়ে কর। আমরা নাতি নাতনীর চেহারা দেখি"। কিন্ত প্রত্যুত্তরে হ্যাঁ হু ছাড়া কিছুই বলতো না নীল। আদতে তার দেশে ফেরার কোন ইচ্ছে ছিল না। অন্তত সেদিনের আগ পর্যন্ত।

হঠাত সে শুনলো একটা তরুণী তার কানের কাছে এসে বলছে "ভাইয়া, বার্গার এর সাথে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস আর কোক নিবেন?"

থতমত খেয়ে ফোন থেকে মাথা তুল্লো নীল। প্রথম বারের মত ভাল করে খেয়াল করলো সে তার সার্ভার কে।

বেশ কিছুক্ষণ পরে সম্বিত ফিরে পেল নীল। ততক্ষনে হতোদ্যম হয়ে চলে গিয়েছে তরুণী। যে কাজ জীবনেও করে নি, সেদিন সেটাই করেছিল নীল। পকেট থেকে এক টুকরা আকাশী রঙ এর কাগজ বের করে তাতে লিখে দিয়েছিল নিজের ফোন নাম্বার। দৌড়ে গিয়ে সেই সার্ভার এর হাতে কাগজটি গুঁজে দিয়ে দেখেছিল তার লাল নীল হওয়া মুখ। কল মি মেইবি? বলে ফিরে গিয়েছিল বার্গার এর কাছে।

বর্তমানে ফিরে এল নীল।

মিরিন এর হাত স্টিয়ারিং এ, কিন্তু গাড়ী চলছে না। ঘুমাচ্ছে ও।

"ঘুমাক। বহুদিন বিশ্রাম পায়নি ও। চায় ও নি। তবে তাতে কিছু আসে যায় না"। 

(ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে যাচ্ছে গিটার এর করুণ সুর)








No comments: