Sunday, November 14, 2021

শুভ জন্মদিন প্রিয় হুমায়ুন আহমেদ




যারা আমাকে ভাল করে চেনেন, তারা জানেন, আমার জীবনের শুরুর দিকের ৮টি বছর প্রবাসে কাটিয়েছি। সৌদি আরবে আমার বাবা একটি কনসালটেন্সি ফার্মে স্থপতি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন খুব বেশি বাংলা বই পড়ার সুযোগ পাইনি।


তবে পাকাপাকি ভাবে দেশের ফেরার পর থেকে বাংলা বই পড়া শুরু, আর শুরু থেকেই বেশি করে পড়া হয়েছে সেবা প্রকাশনী, শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদ স্যার এবং উনার ছোট ভাই মুহাম্মদ জাফর ইকবালের বই। বস্তুত, উনাদের হাত ধরেই আমার বই পড়ার অভ্যাস তৈরি এবং তেমন কোনো দ্বিধা না করেই বলা যায়, ৮০ আর ৯০ এর দশকে বাংলাদেশের বেশিরভাগ পাঠকের পাঠক হয়ে ওঠার গল্পটা কম বেশি এরকমই।

তবে বাকিদের তুলনায় হুমায়ুন আহমেদ অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন।

যতদূর মনে পড়ে, ১৯৯২-৯৩ সালের দিকে প্রথম ‘হোটেল গ্রেভার ইন’ বইটা হাতে পাই। তখন ইন্টারনেট ছিলো না, পশ্চিমা বই পুস্তকও হাতে পেতাম না একদমই। প্রবাসী আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে শোনা কিছু গল্প এবং সেবা প্রকাশনীর অনুবাদ আর কিশোর ক্লাসিকই ছিল পশ্চিমের দুনিয়া সম্পর্কে তথ্য ও ধারণার উৎস।

হোটেল গ্রেভার ইন আমার সামনে এক নতুন জগতকে উন্মোচন করে দিয়েছিল। হুমায়ুন আহমেদের এই স্মৃতিচারণামূলক বই থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বা প্রকারান্তরে পশ্চিমের জীবন যাপন সম্পর্কে এত কিছু জেনেছি যে, এই বইটি মনের মধ্যে চিরকালের জন্য একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। পরবর্তীতে যখন বাস্তব জীবনে আমেরিকানদের সঙ্গে যোগাযোগ ও কথোপকথন হয়েছে, তখন অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি, হুমায়ুন আহমেদ এক বিন্দুও বাড়িয়ে বলেননি।

তুষারপাতের অসামান্য বর্ণনা, ক্যাম্পিং এর উত্তেজনা, প্রবাসীদের মধ্যে দেশপ্রেম, টপলেস বার, সেদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস, লাস ভেগাসের ক্যাসিনো, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এমন কী ইসলামোফোবিয়া (দ্বিতীয় মেয়ের জন্মের পর তিনি কানের কাছে আজান দিতে গিয়েছিলেন, সে আজান শুনে নার্স হাত থেকে ট্রে ফেলে দেয় এবং ডাক্তার বলে ওঠেন ‘এসব কি হচ্ছে?’) পর্যন্ত অনেক কিছুই তিনি এই ৮০ পাতার মধ্যে লিখে গেছেন। আমি নিশ্চিত, উনার বর্ণনার সঙ্গে বিদেশে পড়তে যাওয়া প্রতিটি বাঙ্গালী ছেলে ও মেয়ে একবারের জন্য হলেও একাত্মবোধ করেছেন।

হোটেল গ্রেভার ইন নিছক স্মৃতিকথাই নয়, এটি একই সঙ্গে ভ্রমণ কাহিনী, পশ্চিমা জীবনের সারাংশ ও সারমর্ম, দেশপ্রেমের উপাখ্যান, প্রেমের উপন্যাস এবং আরও অনেক কিছু।

এই বইয়ের ‘বাংলাদেশ নাইট’অংশটি পড়ে চোখের পানি ফেলেননি এরকম মানুষ একজনও হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই গল্পের শেষ কয়েকটি অনুচ্ছেদে হুমায়ুন আহমেদ প্রবাসী বাঙ্গালীদের দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার যে ছবি এঁকেছেন, তা সবার হৃদয়কে ছুঁয়ে যেতে বাধ্য। যারা জীবনেও দেশের বাইরে গিয়ে থাকেনি, তারাও এই গভীর আবেগ বুঝতে পারবেন।

বইটা অসংখ্যবার পড়েছি। সংগ্রহে ছিলো না কোন এক কারণে। আজকে উনার জন্মদিনে আবারও কিনে আনলাম আর ১ ঘণ্টার মধ্যে পড়েও ফেললাম।

প্রথমবার পড়ে যতটা ভালো লেগেছিল, শততম বারেও একইরকম ভালো লেগেছে।

শুভ জন্মদিন প্রিয় লেখক।
#ishtiaq_radical

No comments: