যখন প্রথম শুনলাম যে ঢাকার পটভূমিকায় বানানো একটি মূভী আসছে নেটফ্লিক্সে, বেশ উৎসাহিত বোধ করলাম।
নায়ক বা মূল চরিত্রও বেশ পরিচিত একজন, ক্রিস হেমসওয়ার্থ, যে কিনা এভেঞ্জারস মুভি সিরিজের বজ্র দেবতা থর চরিত্রে রূপদানের জন্য বেশ বিখ্যাত।
মুভি রিলিজের আগে থেকেই বেশ কিছু নেগেটিভ কথা শুনলাম। মুভির কাহিনী ঢাকা ভিত্তিক হলেও কোন বাংলাদেশী অভিনেতা নেই, এবং মুভিতে কিছু স্টক ছবি ব্যবহৃত হলেও ঢাকায় কোন শুট্যিং হয়নি। যারা অভিনয় করেছেন, তাদের বাচণভঙ্গী মূলত পশ্চিম বঙ্গের মানুষদের মত; আমাদের মত নয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রথমে কিছুটা নিরুৎসাহিত হলেও শেষ পর্যন্ত "সিনেমায় ঢাকা শহর" দেখার লোভের কাছে পরাস্ত হয়ে প্রায় দুই ঘন্টা ব্যাপি সিনেমাটি দেখেই ফেললাম ঘরে বসে।
এটি অন্য যেকোন ধুমধারাক্কা হলিউড (কিংব কিছুটা বলিউড ও বটে) এর মুভির মতই। প্রচুর ভায়োলেন্স, তেমন কোন প্লট কিংবা ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট নেই, এবং মুভির সমাপ্তিও বেশ গতানুগতিক।
এত কিছুর পরেও আমার রিভিউঃ ৮/১০
মূল কারণ, হলিউডের একশন মুভির কাছে আমার যা প্রত্যাশা, এই মুভি সেটা পুরোপুরি পূরণ করতে পেরেছে। একশন দৃশ্যগুলো সুন্দর ভাবে চিত্রায়িত হয়েছে, এবং নায়ক তার সাধ্যমত চেষ্টা করেছে নিজ চরিত্র কে বাস্তবসম্মত করে তুলতে।
এবার সমালোচকদের দরজায় একটু ঠক ঠক করি।
যেসব জিনিস নিয়ে মানুষ অভিযোগ করছে, তার বেশিরভাগই হাস্যকর এবং খোঁড়া যুক্তি নির্ভর।
হ্যা, মুভিতে দেখানো হয়েছে র্যাব সদৃশ "এলিট" বাহিনী, ডিএমপি এবং বাংলাদেশের আর্মীর কিছু সদস্য এক ড্রাগ লর্ডের কাছ থেকে টাকা খেয়ে তার পক্ষে কাজ করছে। হলিউডের অসংখ্য মুভিতে এরকম ঘুষ খাওয়া সিআইএ, পুলিশ, এফবিআই এবং আর্মী দেখানো হয়। সত্য বলতে, "করাপ্ট কপ" বা দূর্নীতিগ্রস্থ পুলিশ ব্যাপারটা এতই সাধারণ যে, মুভিতে এরকম অন্তত একটা চরিত্র না থাকলে মানুষ বেশ অবাকই হয়।
এবং যেহেতু তারা "খারাপ", স্বভাবতই তারা নায়ক কিংবা নায়ক সমূহ (ক্ষেত্রবিশেষে নায়িকাও) দের হাতে বেধড়ক মার খায়, এবং তাদের গোলাগুলি সর্বদা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ইহাই স্বাভাবিক। এই মুভিতেও তাই হয়েছে। "এলিট" বাহিনী, ডিএম্পি এবং আর্মির যৌথ আক্রমণও নায়ক এবং তার সাময়িক সাইডকিক (কে এই সাইডকিক, তা না লিখি--লিখলে যারা মুভি দেখেনি তাদের জন্য স্পয়লার হয়ে যায়) এর একটি চুলও স্পর্শ করতে পারেনি।
সিনেমা এরকমই হয়। ইহা কোন প্রামাণ্য চিত্র নহে।
কেন বাংলাদেশে শুটিং হলো না?
এই প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নকারী নিজেই জানে। যে কারণে শাকিরা বা এমা ওয়াটসন দেশে এসে চলে যাওয়ার পর খবর পাই আমরা, সে কারণেই। (উপরোক্ত দু'টি ঘটনাই আমাকে যথেষ্ঠ বেদনা দিয়েছিল, কিন্তু সেই গল্প এখানে অপ্রাসঙ্গিক)
এই প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নকারী নিজেই জানে। যে কারণে শাকিরা বা এমা ওয়াটসন দেশে এসে চলে যাওয়ার পর খবর পাই আমরা, সে কারণেই। (উপরোক্ত দু'টি ঘটনাই আমাকে যথেষ্ঠ বেদনা দিয়েছিল, কিন্তু সেই গল্প এখানে অপ্রাসঙ্গিক)
কেন বাংলাদেশী এক্টর নাই?
হাহাহা, হোহোহো। ওমর সানীর সাক্ষাতকার দেখেন গিয়া।
হাহাহা, হোহোহো। ওমর সানীর সাক্ষাতকার দেখেন গিয়া।
কেন ওদের বাংলা অন্যরকম?
Bengali is not their native tongue. It is only normal that the accent will be different.
Bengali is not their native tongue. It is only normal that the accent will be different.
এরপরেও না বুঝলে থর এর "পমান চাই" অংশ দ্রষ্ঠব্য।
কোন সাহসে উনারা র্যাব আর ডিএম্পি কে হেয় করলো?
এই ব্যাপারটা "ক্রিয়েটিভ লাইসেন্স" দ্বারা প্রটেক্টেড। মুভির শুরুতেই ডিসক্লেইমার দেয়া থাকে যে জীবিত কিংবা মৃত কোন চরিত্রের সাথে ঘটনাবলীর কোন মিল নাই।
এই ব্যাপারটা "ক্রিয়েটিভ লাইসেন্স" দ্বারা প্রটেক্টেড। মুভির শুরুতেই ডিসক্লেইমার দেয়া থাকে যে জীবিত কিংবা মৃত কোন চরিত্রের সাথে ঘটনাবলীর কোন মিল নাই।
এই ব্যাখায় যারা সন্তুষ্ট না, তাদেরকে বলি সাশা ব্যারন কোহেন এর "বোরাট" ছবিটা দেখতে। সেখানে কাজাখিস্তান কে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে তাদের জাতিগত ভাবে গ্ণ-আত্নহনন করা উচিৎ। একইভাবে, আরবদের কেও বিভিন্ন সিনেমায় হেয় করা হয়েছে, আর কোল্ড ওয়ারের এত বছর পরেও এখনো রাশিয়ান এক্সেন্ট সহ বেকুব ভিলেন দেখা যায় বিভিন্ন ছবিতে।
বোরাট নিয়ে কাজাখিস্তান অনেক মাইন্ড করসিল, তারা সিনেমাটা ব্যান করে দেয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপি সিনেমাটি দর্শক নিন্দিত। একইভাবে 300 মুভিটা ইরানে ব্যান হয়, কারণ তাদের এক প্রাচীণ রাজাকে খারাপভাবে (কিন্তু সত্যতার সাথেই) উপস্থাপন করা হয়েছিল। সেই সিনেমাটি বিভিন্ন এওয়ার্ড জিতেছে।
উদাহরণ দিতে বসলে হাজার হাজার উদাহরণ দেয়া যাবে। আচ্ছা, এবার নিজের দেশের দিকে আবার তাকাই।
অনন্ত জলিল মোস্ট ওয়ান্টেড নামক একটা ছবিতে নিজেকে পুলিশ অফিসার হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। সেখানে ভদ্রলোক যেসব অবাস্তব কার্যকলাপ করেছেন আর যেসব হাস্যকর ডায়লগ দিয়েছেন, তাতে কি ডিএম্পির খুব সম্মান বেড়েছে? তার সাজসজ্জার কথা আর না বলি!
আমরা মুভিকে প্রামাণ্য চিত্রের সাথে গুলিয়ে ফেলেছি। এই সিনেমার নির্মাতারা কখনোই বলে নাই যে তারা ঢাকা শহরের একটি নিখুঁত চিত্র আমাদেরকে দেখাবে; বড়ং তারা দেখাতে চেয়েছে একজন ভারতীয় ড্রাগ লর্ডের সাথে একজন বাংলাদেশী ড্রাগ লর্ডের যুদ্ধ, যেখানে একজন অস্ট্রেলিয় খলনায়ক থাকবে যে শুরুতে ভিলেনের মত কাজ করলেও শেষে গিয়ে নায়কে পরিণত হবে।
যারা এই ছবি নিয়ে অনেক উগ্র সমালোচনা করছেন, আমার ধারণা তাদের অনেকে ছবিটা দেখেনই নাই। আগে দেখেন, তারপর সমালোচনা করেন। আর সবচেয়ে বড় কথা, চামড়াটা আরেকটু মোটা করেন। দেশের সম্মান এত স্বস্তা না যে একটা সিনেমা এসে সেটাকে ভুলুন্ঠিত করতে পারবে।
ভাল থাকুন সবাই।
No comments:
Post a Comment