Deadline Seven Days
#সিনেমারগল্প৯৬৯৮
প্রথম হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয়েছিল রায়েরবাজারের মুক্তি সিনেমা হলে। ব্যাপারটা ছিল অনেকটা পারিবারিক পিকনিক এর মত। আমার নানার বাসা ছিল রায়েরবাজার হাই স্কুলের ঠিক উলটা দিকে। মামা খালা খালাতো ভাই বোন সবাই মিলে বিশাল একটি দল গিয়েছিলাম "আলি বাবা চল্লিশ চোর" দেখতে।
পুরাই পারিবারিক সিনেমা ছিল। আলীবাবার গল্প আগেই জানতাম, কিন্তু জানতাম না যে তার বড় ভাই "কাশিম বাবা" এত খারাপ ছিল। এটাও জানতাম না যে দাসী মর্জিনা এরকম শর্ট জামা পরে নাচতে নাচতে দস্যুদের দফা রফা করে দিবে। অবশ্যই গামলায় গরম তেল ঢেলে।
সে যাই হোক। এটাকে আমি প্রথম সিনেমা দেখার গল্প হিসেবে মেনে নিতে রাজী না।
ঐ ঘটনার বেশ কিছুদিন পর আমি, আমার কাজিন আর ছোট মামা--আমরা তিনজন দাবী/আব্দার জানাইলাম আরেকটি সিনেমা দেখতে যাওয়ার। উনারা কোন এক বিশেষ কারণে "ভয়ংকর সাতদিন" নামের ছবিটি দেখার জন্য বেশ উৎসাহিত ছিল। আমার তেমন কোন অভিমত ছিল না ঐ ব্যাপারে, সিনেমা হলে যাওয়ার ব্যাপারটাকে আমি সুস্থ(!) বিনোদন হিসেবেই দেখছিলাম এবং আবদারে শামিল হয়েছিলাম।
বহু অনুনয় বিনয় এবং প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর অনুমতি এবং টিকেট কাটার জন্য প্রত্যাশিত অর্থ পাওয়া গেল। মামা সাথে ছিল দেখে আর কোন এক্সট্রা মুরুব্বী যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করে নাই। প্রতিশ্রুতি সমূহের মধ্যে ছিল সর্বদা মাগরিবের আজানের আগে বাসায় আসা, সময় মত পড়তে বসা, আউট বই না পড়া এবং সময় নষ্ট করা (এগুলার কোনটাই পরে আর মানা হয় নাই)।
সেই একই মুক্তি হলে দেখতে গেলাম "ডেড লাইন সেভেন ডেইজ" নামের দুর্ধর্ষ চলচ্চিত্রটি। হ্যা, পোস্টারে ভয়ংকর সাত দিনের নিচে ইংরেজিতে ওই তর্জমাটি দেয়া ছিল। উহা দেখিয়া আমার স্বল্প লব্ধ ইংরেজী জ্ঞান অলট পালোট হয়ে গিয়েছিল পুরাই!
সিনেমার কাহিনী সংক্ষেপ হইলো ইলিয়াস কাঞ্চন নীতিবান পুলিস আর দিতি কোন এক স্মাগলারের বোন। উনাদের প্রেম ছিল, কিন্তু তাদের আত্নীয় স্বজনের পেশার(!) কারণে তাদের প্রেম বেশিদূর গড়ায়নি। কিন্তু তারা নায়ক নায়িকা না। দিতির ছোট বোন আর ইলিয়াস কাঞ্চনের ছোট ভাই প্রেম শুরু করে। যতদূর মনে পড়ে, আকাশের দিকে তাকায় মেয়েটা কলেজের গেটের বাইরে হাটতেসিল, আর তখন গিয়ে ঐ বেটার গায়ের উপর ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করে। তারপর একটা উদ্ভট গান শুরু হয় আর তারা নাচতে নাচতে প্রেমিক প্রেমিকায় রুপান্তরিত হয়।
এক পর্যায়ে কাহিনী সিরিয়াস হয়ে যায়। বৃত্তান্ত জানতে পেরে বুড়া বুড়ি ভেটো দেয় তাদের প্রেমে। "না না না না ...(ধুর না, এইটা কোন গানের ফার্স্ট লাইন না) এই বিয়ে হতে পারে না" বলে ইলিয়াস কাঞ্চন এক্তা চিক্কুর দিসিলো মনে আছে।
অতঃপর তাহারা পলায়ন করিয়া কোর্টে বিয়ে করতে গেলেন। কিন্তু ওখানে আবিষ্কৃত হইলো যে মেয়ের বয়স ১৭ বছর ৩৫৮ দিন--কাজী সাহেব তাহাদেরকে বলিলেন সাত দিন পরে আবার আসতে।
সেখান থেকেই শুরু হলো "ভয়ংকর সাত দিন"। সেই সাত দিনের রোমহর্ষক কাহিনী বর্ণনা করে মজা নষ্ট করবো না। ইউটিউবে মনে হয় সিনেমাটি পাওয়া যাবে খুজলে। বহুদিন আগে দেখা সেই সিনেমায় কিছু "রগরগে" সিন ছিল। সাত দিন তো আর ঘুমায় ঘুমায় কাটাবে না, নাকি? মানে ঘুমানোর আগে তো আরো অনেক কিছু করার আছে :D
হল থেকে বের হয়ে বুঝলাম যে কেন এই ছবিটাই দেখার জন্য এত উতসাহ ছিল সবার। বহুদিন আগে দেখেছি, কাহিনী কিছু এদিক ঐদিক হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু মজা ঠিকই পেয়েছিলাম, এবং নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছিলাম যে সাথে আর কোন মুরুব্বী আসে নাই! তাইলে নির্ঘাত পিঠে বেতের বাড়ি পরতো।
পুরনো সেই দিনের কথা...
আল্লাহ সালমান শাহ এর বিদেহী আত্মা কে শান্তি দিন।
#ishtiaq_radical
I always wanted to take writing seriously, and I think in year 2020, I have came closest to being a serious writer. In this blog, I have curated most of my serious write ups that got published in the websites, newspapers and social media.
Wednesday, September 11, 2019
Sunday, September 08, 2019
এসবুক সমাচার
২৪২০ সাল।
না, পৃথিবী ধ্বংস হয়নি। বাংলাদেশও বেচে আছে বহাল তবিয়তে। গ্রীণ হাউজ এফেক্ট বলে কিছু আর নেই; এই শব্দটি শুধু বই পুস্তকেই পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীদের সফল গবেষণায় মানুষের সকল দুঃখ দুর্দশা ও কাজ অনেক কমে গিয়েছে। এখন আর কাউকে হাল চাষ করতে দেখা যায় না; কৃষিপ্রধাণ বাংলাদেশ হয়ে গিয়েছে মোবাইল প্রধাণ।
বেশিরভাগ মানুষ সারাদিন মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকে। গত ৫০ বছরে এক নতুন প্রযুক্তি এসেছে; এসবুক নামের একটা সাইটে সারাদিন বসে থাকলে একাউন্টে এম্নিতেই টাকা আসতে থাকে। এর সাথে যদি কেউ লেখালেখি করে আর লাইক কমেন্ট করে, তাহলে আরো বেশি টাকা আসে! এই আশ্চর্য আবিষ্কারের জন্য ফার্ক জুতারবাগ কে নোবেল, গ্র্যামি এবং পুলিতজার পুরষ্কার দেয়া হয় একইসাথে।
এই সাইট ব্যবহারের একমাত্র শর্ত হল নিজ "এস", অর্থাৎ পশ্চাতদেশ কে একটা চেয়ার কিংবা অনুরুপ কোন জায়গায় বসিয়ে রাখতে হবে। উঠে হাটাহাটি করা যাবে না। সিট ছেড়ে উঠলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ১০ টাকা জরিমানা হয়।
এই ধারার সাথে মিল রেখে ঢাকা শহর জুড়ে চালু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ এস ফুড রেস্তোরা। স্বয়ংক্রিয় রোবট দ্বারা চালিত এসব রেস্তোরাঁয় সবচেয়ে জনপ্রিয় আইটেম চিজ বার্গার ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। শোনা যাচ্ছে শীঘ্রই ভ্রাম্যমাণ টয়লেট ও চালু হবে, তখন আর কাউকে জরিমানা গুনে শৌচকাজ সমাধা করা লাগবে না, নিজের এস এর উপর বসে থেকেই কর্ম সারা হয়ে যাবে।
রহিম বেপারীর পূর্ব পূরুষেরা এক কালে ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিলেন। তবে বর্তমানে এসবুক ব্যবহার ছাড়া ভদ্রলোক তেমন কিছু করেন না। উনি ২৩৪৪ সালে বিবিসি এবং ২৩৪৬ সালে সিএনএন পরীক্ষায় পাশ করেন। উনি বিসি ৪৪৪৬ নামের একটি (বিবিসির বি সিএনএন এর সি) একটি এসবুক গ্রুপের এক্টিভ সদস্য। আগে দৈনিক ১০-১২ টা "এস" এর ছবি দিতেন গ্রুপে। পরবর্তীতে লিটু নামের এক বেয়াদ্দপ এডমিন এস্ফি কে বেআইনি ঘোষণা করায় সে খুব বিপদে পড়েছে।
আরেকজন এডমিন আছে, তার নাম লোভী। এই এডমিন আসলেই লোভী। তার লোভ লালসার কারণে রহিম বেপারীর মত নম্র ভদ্র সাধারণ ইউজাররা প্রায়শই উষ্মা প্রকাশ করে বলে "এর চেয়ে নারিকেল গাছে এস বেধে আত্নহত্যা করাও বেটার"।
এসব পোস্ট দেখলেই রহিম লাইক দেয়। তার বন্ধু করিম একদিন তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আরো ১০০ বছর আগেই নারিকেল নামক ফলটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, এখন বড়জোর বড়ই গাছ খুজে পেতে পারে সে। এ কথা শুনে হুহু করে কেদে উঠেছিল রহিম। সেই হুহু করে কাদার এস্ফিটাও বেরসিক লিটু ডিলিট করে দেয়।
এহেন স্বৈরাচারী অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেক চিন্তা করতে থাকে রহিম। হঠাত মাথায় আসে আইডিয়া! আর্কিমিডিসের মত ইউরেকা ইউরেকা বলে নগ্ন হয়ে দৌড় দেয়ার কথা ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে যায় তার, উঠলেই তো ১০ টাকা জরিমানা। আবার এস কে আগের জায়গায় নিয়ে যায়। ওঠার প্রয়াস নেয়ায় ২ টাকা জরিমানা হয় তার। আরেকটু দেরী হলেই পুরা ১০ টাকা গচ্চা যেত।
অনেকদিন ধরেই সে লক্ষ্য করছে যে থাকার জায়গা নিয়ে অনেকের সমস্যা। বিশেষত, অনেকেই পছন্দ করে ৪৪৪৬ বন্ধুদের কাছাকাছি থাকতে (গুর্দা ফ্রান্স বলে কথা!)। সুতরাং যারা এসস্থান নিয়ে চিন্তিত, তাদের সকল সমস্যা দূর করার জন্য নিমিষেই রহিম খুলে ফেলে নতুন একটি গ্রুপ--নাম দেয় "TOLET4446"। তার গুর্দাতালিকার সকল ফ্রান্স কে এড করে ফেলে নতুন গ্রুপে। বেশ আত্নতৃপ্তি নিয়ে সে ঘুমাতে যায় সেদিন।
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই বমি চলে আসে তার। পুতিগন্ধময় একটা দূষিত পরিবেশ। চারপাশে গন্ধের উতস খুজতে গিয়ে টের পায় তার টেরাগ্রিন ব্র্যান্ডের মোবাইল থেকেই আসছে গন্ধ। হঠাত মনে পড়ে যায়, গত পরশু মোবাইলের স্মেল অপশনটা চালু করেছিল একটা খাবার দাবার গ্রুপে ঢোকার সময়। নব্য এই প্রযুক্তিতে যেকোন খাবারের ছবি দেখলে সেখান থেকে সেই খাবারের গন্ধও পাওয়া যায় মোবাইলের মাধ্যমে। ব্যাপারটা যে খাদ্য ছাড়া অন্যান্য জিনিসের জন্যেও কাজ করে, সেটা সে কষ্মিনকালেও ভাবেনি!
তীব্র আতংকের সাথে মোবাইল স্ক্রিণে তাকালো রহিম। গন্ধে তার দম আটকে আসছে। সে দেখলো, আবেগের আতিশয্যে TOLET না খুলে সে TOILET4446 নামের গ্রুপ খুলে ফেলেছে, আর সেখানে তার ১৬ সহস্র বন্ধুর সকলে এক রাতের মধ্যেই স্বীয় টয়লেটের ছবি মোবারক প্রদান করে রেখেছে।
জ্ঞান হারানোর আগ মুহুর্তে রহিমের শেষ চিন্তা "কেন যে গ্রুপ খুলতে গেসিলাম। আগেই ভালো ছিলাম!"।
পুনশ্চঃ সম্পূর্ণ কাল্পনিক গল্প। জীবিত কিংবা মৃত কোন ব্যক্তি বা ঘটনার সাথে কোন মিল থাকা নিতান্তই কাকতালীয়।
Monday, September 02, 2019
জাতীয় কবি
উনার ব্যাপারে আমার প্রাচীনতম স্মৃতি হচ্ছে পেপারে ছবি দেখে চিন্তা "আচ্ছা এই লোক শাড়ী পড়ে ছবি তুলসে কেন? সমস্যা কি?"। দীর্ঘদিন পর্যন্ত আমার ধারণা ছিল ভদ্রলোক শাড়ী পরেই সেই কালজয়ী ছবিটি তুলেছিলেন। লেখার সাথে সংযুক্ত ছবি দ্রষ্টব্য।
আমি দাবী করবো না যে আমি বিরাট নজরুল বোদ্ধা। সত্য বলতে গেলে, পাঠ্যবই এর বাইরে উনার লেখা খুব একটা পড়িই নাই। এবং একজনের সাথে তার "উর্দুতে" দেয়া স্ট্যাটাস নিয়ে তর্ক করতে করতে জানতে পেরেছিলাম যে "কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !" আসলে নজরুল এর একটি কবিতার অংশ বিশেষ।
আরো মজার ঘটনা আছে। আমাদের কৈশোরে রেনেসাঁ ব্যান্ড একটি চমৎকার এলবাম বের করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেই গানগুলো সবাইকে উদ্দীপ্ত করেছিল, উনারা সেই গানগুলোর আধুনিকায়ন করে রিলিজ করেছিলেন "একাত্তরের রেনেসাঁ"। ক্যাসেটটি দীর্ঘদিন আমার সংগ্রহে ছিল, পরে সিডি রিলিজ হবার পর সিডিটাও কিনেছিলাম।
সেই এলবামে ছিল "কারার ঐ লৌহ কপাট" গানটি। রেনেসাঁর কল্যাণেই কি না জানি না, গানটা শুনলেই রক্ত গরম হয়ে যেত। মনে হোত এখুনি তালা ভেংগে কাউরে জেল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঐ ক্যাসেটের এই একটা গানই ছিল একমাত্র নজরুল গীতি(!) যা আমার জানা ছিল।
অনেক বছর পরের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জাতীয় কবির শেষ বিশ্রামের ঠিকানা। সেই কবর স্থানে তখন সবার অবাধ প্রবেশাধিকার ছিল। ক্লাশের ফাঁকে কোনদিন সময় পেলে কবরস্থানে যেতাম। কবির কবরের অনতিদূরেই আমার দাদার কবর। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ছিলেন।
কবির কবরের সামনে অনেক বিচিত্র মানুষ দেখতাম। ভক্তকূল। একদিন এক চারণ কবির সাথে দেখা হলো। সে মুখে মুখে কবিতা বানিয়ে ফেলে, আবার খাতায় লিখে রাখে। লম্বা একটা টুপি পরে ছিল লোকটা, কিছুটা মির্জা গালিবের টুপিটার মত। কাপড় চোপড় শীর্ণ, তবে তাতে হারিয়ে যাওয়া আভিজাত্যের ছাপ রয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ আনমনে খাতায় লেখালেখি করার পর চোখ তুলে আমাকে দেখলো সে। বলে উঠলো "ভাতিজা একটা কাব্য শুনবা?" বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করে ভারিক্কি কন্ঠে শুরু করলো তার সেই বাংলা উর্দু মেশানো বিচিত্র কবিতা। দূর থেকে শুনলে মনে হবে ওয়াজ মাহফিল চলছে কোথাও। আমি কিছু না বুঝলেও মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করতে থাকলাম।
তার কাব্য পাঠে বাধ সাধলো এক জোড়া কপোত কপোতী। তাদেরকে দেখেই লোকটি অসম্ভব বিরক্ত হলো, এবং কিছুটা দূরে গিয়ে বসলো। এরপর আরো এক জোড়ার আগমন, তারপর আরো--কিছুক্ষণ পর অবাক হয়ে খেয়াল করলাম যে এই কবরস্থানটি আসলে একটি সুদৃশ্য ডেটিং স্পট!
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ সেখানে জনসাধারণের প্রবেশের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে; বর্তমানে পুরো জায়গাটি সারাক্ষণ তালাবদ্ধ থাকে।
ছোটবেলায় শেখা কবিতাগুলোর মধ্যে কাঠবেড়ালী ও তার পেয়ারা খাওয়া সংক্রান্ত কবিতাটি বিশেষ স্থান দখল করে থাকবে। কারণ, অদ্যবধি ঐটাই আমার পড়া একমাত্র বাংলা কবিতা, যেখানে পেয়ারা ও কাঠবেড়ালী একই সাথে আছে।হিব্রু ভাষার একটি কবিতা পড়েছিলাম, যেখানে একটি ইহুদী খরগোস কে একটা আমেরিকান মানুষ একটি জার্মান পেয়ারা সাধে, কিন্তু সে সেটা খেতে চায় না। পরে একটা আফ্রিকান কাঠবেড়ালী এসে সেই পেয়ারা খেয়ে ফেলে। সে যাই হোক...
আমার মনে আছে, আমি কবিতাটা শুনে আমার মা কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আচ্ছা মা, যেসব মহিলা বিড়াল কাঠ খায়, তাদেরকে কি কাঠাবেড়ালী বলে?"। এহেন প্রশ্ন শুনে আম্মা হেসেছিল, কেদেছিল, আবেগী হয়ে গেসিল না প্যাদানী দিসিল সেটা অবশ্য মনে নাই। তবে আজো কোথাও ঐ কবিতা শুনলে পিঠের কাছে একটা জায়গায় টনটন করে উঠে, তাই আমার ধারণা শেষ ট্রিটমেন্টটাই সম্ভবত কপালে জুটেছিল!
জাতীয় কবির প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমার এই এলেবেলে স্মৃতিচারণ শেষ করলাম। বেচে থাকুক উনার কবিতা ও গান, যুগ যুগ ধরে।
আমি দাবী করবো না যে আমি বিরাট নজরুল বোদ্ধা। সত্য বলতে গেলে, পাঠ্যবই এর বাইরে উনার লেখা খুব একটা পড়িই নাই। এবং একজনের সাথে তার "উর্দুতে" দেয়া স্ট্যাটাস নিয়ে তর্ক করতে করতে জানতে পেরেছিলাম যে "কামাল ! তু নে কামাল কিয়া ভাই !" আসলে নজরুল এর একটি কবিতার অংশ বিশেষ।
আরো মজার ঘটনা আছে। আমাদের কৈশোরে রেনেসাঁ ব্যান্ড একটি চমৎকার এলবাম বের করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেই গানগুলো সবাইকে উদ্দীপ্ত করেছিল, উনারা সেই গানগুলোর আধুনিকায়ন করে রিলিজ করেছিলেন "একাত্তরের রেনেসাঁ"। ক্যাসেটটি দীর্ঘদিন আমার সংগ্রহে ছিল, পরে সিডি রিলিজ হবার পর সিডিটাও কিনেছিলাম।
সেই এলবামে ছিল "কারার ঐ লৌহ কপাট" গানটি। রেনেসাঁর কল্যাণেই কি না জানি না, গানটা শুনলেই রক্ত গরম হয়ে যেত। মনে হোত এখুনি তালা ভেংগে কাউরে জেল থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঐ ক্যাসেটের এই একটা গানই ছিল একমাত্র নজরুল গীতি(!) যা আমার জানা ছিল।
অনেক বছর পরের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জাতীয় কবির শেষ বিশ্রামের ঠিকানা। সেই কবর স্থানে তখন সবার অবাধ প্রবেশাধিকার ছিল। ক্লাশের ফাঁকে কোনদিন সময় পেলে কবরস্থানে যেতাম। কবির কবরের অনতিদূরেই আমার দাদার কবর। উনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ছিলেন।
কবির কবরের সামনে অনেক বিচিত্র মানুষ দেখতাম। ভক্তকূল। একদিন এক চারণ কবির সাথে দেখা হলো। সে মুখে মুখে কবিতা বানিয়ে ফেলে, আবার খাতায় লিখে রাখে। লম্বা একটা টুপি পরে ছিল লোকটা, কিছুটা মির্জা গালিবের টুপিটার মত। কাপড় চোপড় শীর্ণ, তবে তাতে হারিয়ে যাওয়া আভিজাত্যের ছাপ রয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষণ আনমনে খাতায় লেখালেখি করার পর চোখ তুলে আমাকে দেখলো সে। বলে উঠলো "ভাতিজা একটা কাব্য শুনবা?" বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করে ভারিক্কি কন্ঠে শুরু করলো তার সেই বাংলা উর্দু মেশানো বিচিত্র কবিতা। দূর থেকে শুনলে মনে হবে ওয়াজ মাহফিল চলছে কোথাও। আমি কিছু না বুঝলেও মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করতে থাকলাম।
তার কাব্য পাঠে বাধ সাধলো এক জোড়া কপোত কপোতী। তাদেরকে দেখেই লোকটি অসম্ভব বিরক্ত হলো, এবং কিছুটা দূরে গিয়ে বসলো। এরপর আরো এক জোড়ার আগমন, তারপর আরো--কিছুক্ষণ পর অবাক হয়ে খেয়াল করলাম যে এই কবরস্থানটি আসলে একটি সুদৃশ্য ডেটিং স্পট!
পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ সেখানে জনসাধারণের প্রবেশের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে; বর্তমানে পুরো জায়গাটি সারাক্ষণ তালাবদ্ধ থাকে।
ছোটবেলায় শেখা কবিতাগুলোর মধ্যে কাঠবেড়ালী ও তার পেয়ারা খাওয়া সংক্রান্ত কবিতাটি বিশেষ স্থান দখল করে থাকবে। কারণ, অদ্যবধি ঐটাই আমার পড়া একমাত্র বাংলা কবিতা, যেখানে পেয়ারা ও কাঠবেড়ালী একই সাথে আছে।হিব্রু ভাষার একটি কবিতা পড়েছিলাম, যেখানে একটি ইহুদী খরগোস কে একটা আমেরিকান মানুষ একটি জার্মান পেয়ারা সাধে, কিন্তু সে সেটা খেতে চায় না। পরে একটা আফ্রিকান কাঠবেড়ালী এসে সেই পেয়ারা খেয়ে ফেলে। সে যাই হোক...
আমার মনে আছে, আমি কবিতাটা শুনে আমার মা কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আচ্ছা মা, যেসব মহিলা বিড়াল কাঠ খায়, তাদেরকে কি কাঠাবেড়ালী বলে?"। এহেন প্রশ্ন শুনে আম্মা হেসেছিল, কেদেছিল, আবেগী হয়ে গেসিল না প্যাদানী দিসিল সেটা অবশ্য মনে নাই। তবে আজো কোথাও ঐ কবিতা শুনলে পিঠের কাছে একটা জায়গায় টনটন করে উঠে, তাই আমার ধারণা শেষ ট্রিটমেন্টটাই সম্ভবত কপালে জুটেছিল!
জাতীয় কবির প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমার এই এলেবেলে স্মৃতিচারণ শেষ করলাম। বেচে থাকুক উনার কবিতা ও গান, যুগ যুগ ধরে।
Subscribe to:
Posts (Atom)